দল এবং প্রশাসন, দু’দিক থেকেই চাপে পড়ে গেলেন বীরভূমের ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ভাইরাল অডিয়ো ক্লিপ-কাণ্ডে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এ বার এফআইআর দায়ের করল পুলিশ। অন্য দিকে, তৃণমূলের তরফে অনুব্রতকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতেও বলা হল। তার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে চার ঘণ্টা!
বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘মিস্টার অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র ২২৪ (সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও কর্তব্যরত কর্মীকে হুমকি), ১৩২ (সরকারি কর্মচারীকে হেনস্থা), ৭৫ (শ্লীলতাহানি ও হেনস্থা) এবং ৩৫১ (হুমকি) ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।’’
অন্য দিকে, তৃণমূল সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল ১০টা সাড়ে ১০টা থেকে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে দলের মুখপাত্রেরা জানতে চান, অনুব্রত প্রশ্নে তাঁদের বক্তব্য কী হবে? তখন সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে বলা হয়, ‘নো কমেন্টস্’ বলার জায়গা নেই এখানে। কী বলতে হবে পরে পরিষ্কার করে দেওয়া হবে। তার পরেই দুপুর ২টো ৩২ মিনিট নাগাদ সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, চার ঘণ্টার মধ্যে অনুব্রতকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তৃণমূল বলছে, পুলিশের বিরুদ্ধে অনুব্রত মণ্ডল যা বলেছেন, তা দল অনুমোদন করে না। যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, দলের তরফে তার নিন্দা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি অডিয়ো ক্লিপে (ওই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম) অনুব্রত মণ্ডলের নাম করে এক জনকে বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোন করে হুমকি দিতে শোনা যায়। সেখানে শোনা যায়, আইসি-র উদ্দেশে অশ্রাব্য গালিগালাজ করা হচ্ছে। বাদ দেওয়া হয়নি তাঁর স্ত্রী এবং মা-কেও। যদিও ভাইরাল হওয়া অডিয়ো প্রসঙ্গে আনন্দবাজার ডট কম অনুব্রতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ওই কণ্ঠস্বর তাঁর নয়। তিনি এ-ও দাবি করেন যে, এক বার তিনি আইসি-কে ফোন করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে অপমান করে ফোন রেখে দিয়েছিলেন আইসি।
কিন্তু তৃণমূলের শুক্রবারের নির্দেশ স্পষ্ট করে দেয় যে, ওই কণ্ঠস্বর অনুব্রতের বলে ভেবেই পদক্ষেপ করেছে দল। বীরভূমের পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আমাদের আইসি লিটন হালদার অভিযোগ করেছেন, দু’দিন আগে তাঁকে ফোন করে খারাপ ভাষায় কথা বলা হয়েছে। তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে যত স্ট্রং লিগ্যাল অ্যাকশন (কড়া আইনি পদক্ষেপ) করা যায়, তা-ই করবে পুলিশ। সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
ঘটনাচক্রে, বোলপুরের আইসি লিটনকে নিয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন অনুব্রত। গত বৃহস্পতিবার দলীয় কর্মসূচি শেষে অনুব্রত অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘আইসি এফআইআর করতে গেলেও টাকা চান। গত দু’মাস ধরে এই আইসিকে সরানোর জন্য আমি এসপি, অ্যাডিশনাল এসপি, এমনকি, ডিজি রাজীব কুমারকেও বলেছি।’’ অর্থাৎ, দু’মাস ধরে চেষ্টা করেও আইসিকে সরাতে পারেননি অনুব্রত! তার পরেই সামনে আসে এই অডিয়ো ক্লিপ।
অন্য দিকে, ভাইরাল অডিয়ো কাণ্ডে তৃণমূল নেতা অনুব্রতের পাশাপাশি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিশানা করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘উনি তো মুখ্যমন্ত্রীর আদরের ছেলে। কিছু বাবা-মা আছেন, যাঁরা ছেলের দোষ দেখতে পান না। তাই এক দিন তাঁদের দুর্দিন দেখতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীও তাঁকে (অনুব্রতকে) এমন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন...।’’ সুকান্তের সংযোজন, ‘‘তাঁর একের পর এক বক্তব্যকে লঘু করে দেখানো হয়েছে। তার ফলই দেখছে বাংলা। আর অনুব্রতের বক্তব্যে মহিলাদের প্রতি তৃণমূল নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হল।’’