একটা সময় বলা হত বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল যা বলেন, জেলার তৃণমূলে এবং প্রশাসনে তা-ই হয়। কিন্তু সেই অনুব্রত নিজে মুখেই বললেন, জেলার পুলিশ সুপার, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে তিনি দু’মাস ধরে বলছেন যে বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। এরই পাশাপাশি ভাইরাল হওয়া একটি অডিয়ো ক্লিপ ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলে। একই সঙ্গে আন্দোলিত প্রশাসনও। যে অডিও ক্লিপটি ভাইরাল হয়েছে তাতে এক জনকে ‘অনুব্রত মণ্ডল’ নাম নিয়ে বোলপুরের আইসিকে হুমকি দিতে শোনা যাচ্ছে। সেই অডিয়ো ক্লিপে বলা হচ্ছে ডেপুটেশন দিতে গিয়ে থানা থেকে বার করে আইসিকে পেটানো হবে। শুধু তাই নয়, বোলপুর থানার আইসির মা-স্ত্রীর উদ্দেশে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শোনা যাচ্ছে। মিছিলের জমায়েতে পুলিশি রিপোর্ট নিয়ে আইসির বিরুদ্ধে তোপ দাগতেও শোনা গিয়েছে। যদিও কণ্ঠস্বরটি তৃণমূল নেতা অনুব্রতের কি না তার সত্যতা আনন্দবাজার ডট কম যাচাই করেনি।
তবে বৃহস্পতিবার দলীয় একটি কর্মসূচি শেষে বোলপুরের আইসির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছে অনুব্রত। অভিযোগ করেছেন, ‘‘আইসি এফআইআর করতে গেলেও টাকা চান। অনুব্রত বলেন, গত দু’মাস ধরে এই আইসিকে সরানোর জন্য আমি এসপি, অ্যাডিশনাল এসপি এমনকি ডিজি রাজীব কুমারকেও বলেছি।’’ সংবাদমাধ্যমের তরফে অনুব্রতকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন? জবাবে অনুব্রত বলেন, “এসপি-ডিজি সবাইকে জানিয়েছি।”
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পুলিশের গাড়িতে বোমা মারার নিদান দিয়ে প্রথম সংবাদে এসেছিলেন অনুব্রত। তারপর বাংলার রাজনীতিতে ১২ বছর কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে অনুব্রতের কারাবাসের পর্বও রয়েছে। জেল থেকে জামিনে ফিরে আসার পরে অনুব্রত ক্রমে জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেই অনুব্রতকে সাম্প্রতিক রদবদলে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। বীরভূম থেকে জেলা সভাপতি পদটাই তুলে দেওয়া হয়েছে শাসক দলের পক্ষ থেকে। অনুব্রতকে করে রাখা হয়েছে কোর কমিটি এক জন সদস্য। অনুব্রতের গলায় আইসি বদল না-হওয়া নিয়ে যে আক্ষেপ শোনা গিয়েছে তা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। যার ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দল ওবং প্রশাসনে অনুব্রতের নিয়ন্ত্রণ কি একেবারেই চলে গেল?
আরও পড়ুন:
ইতিমধ্যে অনুব্রতের পাল্টা ‘মুখ’ হিসাবে বীরভূমের রাজনীতিতে মাথা তুলেছেন কাজল শেখ। ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপে ‘অনুব্রত’ বিবিধ ‘বিশেষণ’ উল্লেখ করে বোঝাতে চান বোলপুরের আইসি ‘কাজল’-এর লোক। পাল্টা উল্টো দিকের কণ্ঠস্বরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমরা কারও লোক নই।’’
সন্দেহ নেই, ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপ এবং অনুব্রতের প্রকাশ্য বিবৃতি বীরভূমের তৃণমূল এবং কেষ্ট সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি করেছে।