Advertisement
E-Paper

ঠাকুমার কোলে বাড়ি ফিরল কিরণ

এগারো দিন আগে পুরুলিয়া স্টেশন চত্বরে পাঁচ বছরের মেয়েকে একা ফেলে রেখে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন মা। রেল পুলিশ মারফত মেয়েটির আশ্রয় হয়েছিল চাইল্ড লাইনে।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:২০
আশাদেবীর সঙ্গে ছোট্ট কিরণ। ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।

আশাদেবীর সঙ্গে ছোট্ট কিরণ। ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।

এগারো দিন আগে পুরুলিয়া স্টেশন চত্বরে পাঁচ বছরের মেয়েকে একা ফেলে রেখে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন মা। রেল পুলিশ মারফত মেয়েটির আশ্রয় হয়েছিল চাইল্ড লাইনে। সোমবার খানিকটা নাটকীয় ভাবেই খোঁজ মিলল মায়ের। কিন্তু, ফেলে যাওয়া মেয়েকে সামনে পেয়েও তাকে না নিয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে মাকে! একরত্তি মেয়েটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সে তার মায়ের সঙ্গে ফিরবে না। ফলে, নাতনিকে নিয়ে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে বাড়িতে ফিরেছেন তার ঠাকুমা।

গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে স্টেশন চত্বরে মেয়েটিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় মানুষ তাকে তুলে দেন পুরুলিয়া রেল পুলিশের হাতে। হিন্দিতে মেয়েটি শুধু নিজের নামটুকু বলতে পেরেছিল, কিরণ। আর তার বাড়ির ঠিকানা বলেছিল, জেলগোড়া। পুরুলিয়া চাইল্ড লাইনের সংযোজক দীপঙ্কর সরকার জানিয়েছেন, তাঁরা ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর, বোকারো, ধানবাদের মতো বিভিন্ন জায়গায় জেলগোড়ার খোঁজ করেও মেয়েটির বাড়ির ঠিকানা পাননি। মেয়েটি বলেছিল, মায়ের সঙ্গে সে বাসে পুরুলিয়ায় এসেছিল। শেষ অবধি দুর্গাপুরে মেয়েটির মামাবাড়ির সূত্রের যোগাযোগ পেয়ে সেখানে মেয়েটিকে রাখার ব্যবস্থা করে চাইল্ড লাইন।

সোমবার সকালের দিকে এক মহিলা এবং এক যুবক পুরুলিয়া স্টেশনে এসে রেল পুলিশের কাছে ১১দিন আগে স্টেশন চত্বরে কোনও নাবালিকাকে পাওয়া গিয়েছিল কি না, তা জানতে চান রেল পুলিশের কাছে। রেল পুলিশ চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘এ দিন যে মহিলা মেয়েটির খোঁজ করতে স্টেশনে এসেছিলেন, তিনিই কিরণের মা। নাম পুনম সিংহ। ওই মহিলা স্বীকারও করেন যে, ৩ তারিখ তিনি কিরণকে স্টেশন চত্বরে ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে পুরুলিয়া থেকে ওড়িশা চলে গিয়েছিলেন। সেই প্রেমিক আবার পুরুলিয়া শহরের সিন্দারপট্টির বাসিন্দা।’’

তবে পুনমের সঙ্গে ওই যুবকের প্রেম বেশিদিনের নয়। বরং, ৩ তারিখই তাঁদের আলাপ! চাইল্ড লাইনকে পুনম জানিয়েছেন, সে দিন রাতে তাঁর পিছু নিয়েছিল কয়েক জন যুবক। সিন্দারপট্টির বাসিন্দা যুবক তখন পুনমকে উদ্ধার করেন। এর পরেই তাঁর সঙ্গে প্রেম পুনমের। সে রাতেই পুরুলিয়া থেকে প্রেমিকের হাত ধরে মেয়েকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান পুনম। তার পর ওড়িশার বারবিলে গিয়ে দু’জনে বিয়েও করেন।

শিশুকন্যাকে এ ভাবে একা ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার এগারো দিন পরে ফের মেয়েকে নিতে আসা পুনমের হাতে কিরণকে আর দিতে চায়নি জেলা শিশুকল্যাণ কমিটি। চাইল্ড লাইনের সিনিয়র কর্মী ঝর্ণা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কিরণ এই ক’দিন দুর্গাপুরে ছিল। এ দিন তাঁরা মেয়েটিকে আনানোর ব্যবস্থা করেন। ইতিমধ্যে ধানবাদে ওর ঠাকুমারও খোঁজ মিলেছিল। তাঁকেও এ দিন আসতে বলা হয়েছিল। তিনি ও তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা এসেছিলেন। ঝর্ণার কথায়, ‘‘কিরণ মাকে দেখে একবারের জন্যও তাঁর কাছে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এমনকি ওর মা ওর সঙ্গে কথা বলতে গেলেও মুখ ফিরিয়ে থেকেছে। ও নিজেই বলছে, ঠাকুমার সঙ্গে যাবে। তাই শিশুকল্যাণ কমিটির নির্দেশে আমরা কিরণকে ওর ঠাকুমার হাতেই তুলে দিয়েছি।’’

জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন অমিতা মিশ্র বলেন, ‘‘কিরণের এক দিদিও রয়েছে ওর ঠাকুমার কাছে। সেই মেয়েকে ছেড়েও পুনম চলে গিয়েছিলেন। আর ঠাকুমার কাছে গেলে কিরণ ওর দিদির সঙ্গও পাবে, এই কথা ভেবে আমরা কিরণকে ওর ঠাকুমার কাছেই ফিরিয়ে দিচ্ছি। তা ছাড়া কিরণও এখন আর তার মায়ের সঙ্গে ফিরতে আগ্রহী নয়।’’

জেলা চাইল্ড লাইনের অফিসে এ দিন চুপচাপ বসেছিলেন পুনম ও তাঁর প্রেমিক। কেন মেয়েকে একা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, জানতে চাওয়ায় বলেন, ‘‘আমার স্বামী হঠাৎ মারা যাওয়ায় আমি মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।’’ ওই ঘটনার দিন কয়েক আগেই পুনমের স্বামী মারা যান। কিন্তু কেন মেয়েকে স্টেশন চত্বরে একা ফেলে প্রেমিকের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন, তার জবাব দেননি পুনম। তবে, চাইল্ড লাইনের কাছে তিনি লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন এই মর্মে যে, তিনি আর কিরণকে দাবি করবেন না। চাইল্ড লাইন সূত্রে জানানো হয়েছে, কিরণ কেমন রয়েছে, তা ধানবাদ শিশুকল্যাণ কমিটিকে নজরে রাখতে বলা হবে।

নাতনিকে পেয়ে খুশি কিরণের ঠাকুমা আশাদেবী জানালেন, ‘ওর দিদি কাঞ্চনেরও বোনের জন্য মন খারাপ। বৌমার সঙ্গে কথা বলেছেন? আশাদেবীর জবাব, ‘‘যে মহিলা নিজের মেয়েকে এ ভাবে একা ফেলে রেখে চলে যায়, তার সঙ্গে কী কথা বলব! আর কিরণও তো বলছে মায়ের সঙ্গে যাব না।’’ চাইল্ড লাইনের অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে হাত নেড়ে বিদায় জানাতে ভুল হয়নি মেয়েটির। ঠাকুমাকে জড়িয়ে ধরা মেয়েটির মুখেও তখন হাজার কিরণ!

prashanta pal purulia station kiran grandmother kirans grandmother kirans mother purulia childline childline
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy