Advertisement
E-Paper

চোদ্দো শাক আদতে রোগের প্রতিষেধক, মত

সিউড়ির কড়িধ্যা যদুরায় স্কুলের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা ভেষজ উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ কল্যাণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মূলত স্বাস্থ্যরক্ষার্থেই ১৪টি শাক খাওয়ার নিয়মটি এসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৫
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

দুর্গার মতো কালীকেও অশুভ শক্তির বিনাশ ও শষ্যের দেবী বলে ধরা হয়। কালীপুজো বা দিওয়ালির ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ আশ্বিন মাসের চতুর্দশীতে (যা ভূত চতুর্দশী নামেও খ্যাত) গ্রামবাংলার গৃহস্থ বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়। সঙ্গে নিয়ম রয়েছে চোদ্দো রকমের শাক খাওয়ারও৷

চোদ্দ পুরুষের আত্মাকে তুষ্ট করে অশুভ শক্তিকে দূরে রাখতে এবং ক্ষতিকারক কীটের হাত থেকে হৈমন্তিক ফসল রক্ষা করতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর এই উপাচারের সহজ ব্যাখ্যা মিললেও, কালীপুজোর সঙ্গে চোদ্দো শাকের সম্পর্ক নিয়ে তেমন কোনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। তবে সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রথার সঙ্গে শষ্যদায়িনী দেবী ভাবনার যোগাযোগ রয়েছে। অনেকের মতে, ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসাবে এই শাকগুলি খাওয়া হত।

সিউড়ির কড়িধ্যা যদুরায় স্কুলের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা ভেষজ উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ কল্যাণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মূলত স্বাস্থ্যরক্ষার্থেই ১৪টি শাক খাওয়ার নিয়মটি এসেছে। বর্ষা বিদায়ের পরে নতুন মরসুমে পৌঁছে পেটের রোগ, কৃমির প্রকোপ, ক্ষুধামন্দের মতো অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। মরসুম বদলের সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতেই শাক খাওয়া দরকার। অন্তত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বিষয়টি তাই দাঁড়ায়।’’

তালিকায় কী কী শাক রয়েছে?

কল্যাণবাবু বলছেন, “চোদ্দো শাকের মধ্যে পরিচিত পুঁই, নটে বা লাউশাক নেই।” এই শাকগুলি হল যথাক্রমে— ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা এবং শুষণী। নব্য-স্মৃতিশাস্ত্রকার রঘুনন্দন এই শাকের কথা উল্লেখ করছেন। জেলার সরকারি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের মনে হয়েছে, এই শাকগুলির বেশিরভাগই তেতো। ফলে মুখ ও পাকস্থলীতে প্রচুর লালা ও উৎসেচক ক্ষরণ হয়। যা রোগ নিরাময়ে খুবই উপকারী।

তবে চোদ্দো শাক নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে। আয়ুর্বেদ মতে প্রাচীন বাংলায় চোদ্দো শাকগুলি ছিল— পালং, লাল, সুষণি, পাট, ধনে, পুঁই, কুমড়ো, গিমে, মূলো, কলমি, সরষে, নোটে, মেথি, লাউ শাক অথবা হিঞ্চে শাক। শহর তো বটেই গ্রামেও এই সব শাক বিশেষ পাওয়া যায় না। চোদ্দো শাকের হিসেব তাই কুলিয়ে দিতে হয় অন্য শাক দিয়ে। তবে চোদ্দো শাক খাওয়ার এই প্রথা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে।

চিকিৎসক কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শাক আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেটাই আমরা ভুলতে বসেছি। এই ধরনের প্রচলিত পদ্ধতি সে কথা মনে পড়ায়।’’ চোদ্দো শাক বা ভিন্ন মতে যে শাকগুলির উল্লেখ রয়েছে ঋতু সন্ধিক্ষণে
এর চরম উপকারিতা রয়েছে। এবং সন্তান সম্ভবা মা থেকে শিশু সকলের জন্যই তা উপকারী। তবে খেয়াল রাখতে হবে, রাসায়নিক বা কীটনাশক দেওয়া শাক যেন আমরা গ্রহণ না করি।

চোদ্দো শাক খাওয়ার রীতি নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করছেন লাভাপুরের চৌহাট্টার বাসিন্দা বর্ষীয়ান শান্তিলতা ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘‘চোদ্দো শাক খাওয়ার জন্য শাক তুলে আনা এবং খাওয়ার স্মৃতি
এখনও টাটকা। এই সময়ে গরুর ক্ষুরে এক রকম রোগ হয়, মনে আছে ভেষজগুণ সম্পন্ন শাক ধুয়ে সেই জল দেওয়া হত গরুর ক্ষুরেও।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘শাকগুলি চেনা দূরের কথা, সব শাকের অনেকগুলির নামই শোনেনি অনেকে। প্রচলিত লোকাচার সেই খামতি দূর করতে পারে।’’

antidote Disease শাক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy