E-Paper

জল নামতে ভাঙছে কাঁচা, পাকা বাড়ি

বাসিন্দারা জানান, ব্লক অফিস থেকে পাঠানো চাল ডাল রান্না করার সময় মেলেনি। সকলকেই শুকনো চিড়ে গুড় খেতে হয়েছে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ০৮:২০
বলরামপুর গ্রামে মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ছে।

বলরামপুর গ্রামে মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ছে। নিজস্ব চিত্র ।

জল নামলেও দুর্ভোগ কমেনি নলহাটির বলরামপুর গ্রামে। চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি জল জমে থাকার জন্য গ্রামে প্রায় সব ক’টি মাটির চালের বা টিনের চালের কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে। বেশ কয়েকটি পাকা বাড়িও বসে গিয়েছে।

ব্রাহ্মণী ও তার শাখা নদী দ্বারা বেষ্টিত নলহাটি ২ ব্লকের শীতলগ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুর গ্রামে সোমবার সকাল থেকে ঢুকে যায় নদীর জল। গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গ্রামে কোথাও কোমর সমান, কোথাও আবার হাঁটু সমান জল জমে রয়েছে। সোমবার দুপুর থেকেই বেশির ভাগ বাসিন্দাদের উঁচু পাকা বাড়িতে ঠাঁই নিতে হয়েছে। খোলা আকাশের নীচে কেটেছে রাত। সোমবার রাতে দফায় দফায় বৃষ্টিতেও জলে ভিজতে হয়েছে।

বাসিন্দারা জানান, ব্লক অফিস থেকে পাঠানো চাল ডাল রান্না করার সময় মেলেনি। সকলকেই শুকনো চিড়ে গুড় খেতে হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। ফলে গ্রামের যে সমস্ত বাড়িতে সাবমার্সিবল পাম্প আছে, তা দিয়েও পানীয় জল তোলা যায়নি। গ্রামের সরকারি দুটি নলকূল জলের তলায় চলে গিয়েছে। সোমবার থেকে মজুত করা জল মঙ্গলবার প্রায় ফুরিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রামে পানীয় জলের অভাব দেখা যায়। তবে মঙ্গলবার দুপুরে নলহাটি ২ ব্লক অফিস থেকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে চার হাজার পাউচ প্যাকেটের জল সরবরাহ করা হয়। নদীতে টিনের নৌকায় চাপিয়ে ওই জল পৌঁছে দেয় প্রশাসনের আধিকারিকরা।

এ দিন দুপুরে টিনের নৌকায় চেপে নলহাটি থানার পুলিশ ও বিডিও-সহ (নলহাটি ২) স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা গ্রামে যান। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে জল জমে থাকায় গৃহপালিত গরু ছাগলগুলিকে নদীবাঁধের উঁচু জায়গায় বেঁধে রাখতে হয়েছে। ওই প্রাণীগুলিরও খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। দুপুরে শীতলগ্রাম অঞ্চলের চার যুবক দেবাশিস সিংহ, আদ্যনাথ চন্দ্র, প্রভাত চাঁদমারি, অমিত মণ্ডল নিজেদের উদ্যোগে খিচুড়ি রান্না করে গ্রামের চারশো লোকের খাবার দেন।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সোমবার দুপুর থেকে গ্রামে জল ঢুকতে থাকে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কোমর সমান জল জমে যায়। গ্রামের রাস্তাতেও এক বুক জল। বিকেলে জলের চাপে খড়ের চাল ও টিনের চালের মাটির বাড়িগুলি বসে যেতে থাকে। সুরেশ লেট বলেন, ‘‘টিনের চালের মাটির বাড়িতে বাবা, মা। ভাই, স্ত্রী-সহ দু’মাসের ছেলেকে নিয়ে মোট ছ’জন বাস করি। নদীর দুকুল ছাপানো জল বাঁধ দিয়েও রক্ষা করা যায়নি। বিকেলে চোখের সামনে মাটির বাড়ি পড়ে গেল।’’ তার আগে কোনও রকমে পাশের এক তলা পাকা বাড়িতে জিনিসপত্র নিয়ে সকলে চলে গিয়েছিলেন বলে জানান সুরেশ।

আর এক বাসিন্দা ভোলানাথ লেট বলেন, ‘‘গ্রামের প্রায় দশ বারোটি মাটির বাড়ি পড়ে গিয়েছে।’’ সর্বেশ্বর লেট বলেন, ‘‘অনেক পাকা বাড়িও বসে গিয়েছে। গ্রামের ঢালাই রাস্তাও ভেঙে গিয়েছে।’’ বিডিও (নলহাটি ২) রজতরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘বিকেলে গ্রামের জল নেমে গিয়েছে। পানীয় জলের জোগান দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশা করা যায় রাতের দিকে গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

nalhati

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy