Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিম্নচাপে চাষের ঘাটতি উসুল

সব ভাল যার শেষ ভাল। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে ২০ শতাংশেরও বেশি বৃষ্টির ঘাটতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ধান রোয়ার কাজ। মাসের শেষে পর পর দু’টি নিম্নচাপে সেই ঘাটতি তো মিটলই, খাতায় যোগ হল আরও ৬ শতাংশ বৃষ্টিপাত। এর ফলে খরার ভ্রুকুটিকে দূরে ঠেলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে জেলার আমন চাষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৩
Share: Save:

সব ভাল যার শেষ ভাল। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে ২০ শতাংশেরও বেশি বৃষ্টির ঘাটতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ধান রোয়ার কাজ। মাসের শেষে পর পর দু’টি নিম্নচাপে সেই ঘাটতি তো মিটলই, খাতায় যোগ হল আরও ৬ শতাংশ বৃষ্টিপাত। এর ফলে খরার ভ্রুকুটিকে দূরে ঠেলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে জেলার আমন চাষ।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ বছর পুরুলিয়ায় ২ লক্ষ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। ৯ অগস্ট পর্যন্ত চারা রোপণ হয়েছিল ৪১ শতাংশ জমিতে। এমনিতে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত রোয়ার অর্ধেক কাজ না হলে জেলাকে খরা কবলিত বলে ঘোষণা করা হয়। এ বছর সেই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেল পুরুলিয়া। জেলার কৃষি অধিকর্তা অশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মূলত উঁচু জমিগুলিতে জলের অভাবে চারা রোপণ করতে পারছিলেন না চাষিরা। তবে পরপর দু’টি নিম্নচাপের পরে এখন কমবেশি ৮৫ শতাংশ জমিতে রোয়ার কাজ শেষ।’’

গত বছর অগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত টানা এগারো মাস কার্যত ছিটোফোঁটা বৃষ্টি হয়েছিল পুরুলিয়ায়। ফলে গত বছর খরার কবলে পড়েছিল এই জেলা। এ বছর পুরো জুন মাস জুড়ে ভাল বৃষ্টি হওয়ায় নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছিলেন চাষিরা। কিন্তু ফের বৃষ্টির খামখেয়ালিপনায় সঙ্কট দেখা দেয়। জুলাই মাসে বৃষ্টির ঘাটতি থাকায় বীজতলা তৈরির পরেও রোপন করা যাচ্ছিল না।

অগস্টের প্রথম সপ্তাহে জেলায় আমন চাষের অবস্থা পর্যালোচনা করতে পুরুলিয়াতে এসেছিলেন রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য। ব্লক ভিত্তিক চাষের পরিস্থিতি দেখে বিকল্প চাষের উপরে জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু কৃষি অধিকর্তার সফরের পরেই নিম্নচাপের দৌলতে টানা তিন দিন ভারি বৃষ্টি হয় জেলায়। পরে সাম্প্রতিক আরও একটি নিম্নচাপে এক দিনে ১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে পুরুলিয়ায় চাষের সেই আশঙ্কার ছবিটা এক ধাক্কায় বদলে যায়। সম্প্রতি জেলায় এসেছিলেন রাজ্যের কৃষি দফতরের যুগ্ম সচিব রাজীব ঘোষ। আশিষবাবুরা তাঁকে জানিয়েছেন, জেলায় চাষের অবস্থা এখন অনেকটাই সন্তোষজনক।

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, দু’টি নিম্নচাপের হাত ধরে পাওয়া বৃষ্টিতে বাইদ বা উঁচু জমি বাদ দিলে, কানালি এবং বহাল— দুই প্রকৃতির নিচু জমির প্রায় পুরোটাতেই চারা রোপণ হয়েছে। পাশাপাশি ভালো বৃষ্টির দৌলতে ভরেছে সেচ কুয়ো এবং বড় পুকুরগুলি। জেলার এক কৃষিকর্তা বলেন, ‘‘টানা এগারো মাসের অনাবৃষ্টিতে কুয়ো এবং পুকুরের জল তলানিতে ঠেকেছিল। যতটুকু চাষ হয়েছিল, তা বাঁচিয়ে রাখা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এই বৃষ্টির পরে, সেপ্টেম্বরে গড় দু’শো মিলিমিটার বৃষ্টির পুরোটা যদি নাও হয়, সেচের জল দিয়েই চাষ সামাল দেওয়া যাবে।’’

তবে অন্য একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বীজতলা থেকে চারা তৈরির এক মাসের মধ্যে সেগুলি রোপণ করে ফেলতে হয়। কিন্তু বৃষ্টির এই দেরির ফলে জেলার অনেক চাষিই চারা রোপণ করেছেন প্রায় পঞ্চাশ দিনের মাথায়। ফলে বেশি বয়সের চারা লাগানোয় ফলনে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে কৃষিকর্তাদের একাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে পুরুলিয়া ১ ব্লকের চাষি রঞ্জিত সিংহ, স্বপন মাহাতো, হুড়ার চাষি ত্রিলোচন মাহাতোরা বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বরে আট-দশ দিন অন্তর মাঝারি বৃষ্টি হলেই বেশি বয়েসের চারাতেও ফলন খারাপ হবে না।”

নিম্নচাপে ঘাটতি মিটেছে। এ বার সেপ্টেম্বরের ঝারঝিরে বৃষ্টির দিকেই তাকিয়ে জেলার কৃষি দফতর এবং চাষিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Depression
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE