Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মনিরুল-যোগে রোষ বিজেপিতে

সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এক কর্মী বলেন, ‘‘ওঁদের অত্যাচার থেকে বাঁচতেই বিজেপিতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ওঁরাই যদি বিজেপির নেতা হয়ে বসেন, তা হলে তো পুরনো দল ছেড়ে আসা ভুল হল।’’

মনিরুল ইসলাম। ছবি: পিটিআই।

মনিরুল ইসলাম। ছবি: পিটিআই।

অর্ঘ্য ঘোষ ও শুভদীপ পাল
লাভপুর, সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

মনিরুল ইসলাম, গদাধর হাজরাকে সদস্যপদ দেওয়ায় ‘রোষ’ ছড়িয়েছে জেলা বিজেপির অন্দরমহলে— দলীয় সূত্রে এমনই খবর মিলেছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল স্তরের কর্মী-সমর্থক থেকে জেলা নেতাদের অনেকেই এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। প্রকাশ্যে মুখও খুলেছেন অনেকে।

জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডলের কথায়, ‘‘মণিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২৬ বছর ধরে লড়াই করছি। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ওঁর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছি। সেই মনিরুলের বিজেপিতে যোগদান এলাকাবাসী মেনে নিতে পারেননি। অনেকেই বিরোধিতা শুরু করেছেন।’’

লোকসভা ভোটের আগে থেকে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম এবং নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরার বিজেপিতে যোগদানের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। বুধবার দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বিজেপিতে যোগ দিয়ে সেই গুঞ্জনই সত্যি করেন তাঁরা।

এতে জেলা বিজেপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে। দলের অন্দরমহলের খবর, অনেক পুরনো কর্মী-সমর্থক ওই দুই নেতার ‘অনুপ্রবেশ’ মেনে নিতে পারছেন না। একই বক্তব্য সিপিএম সহ অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সমর্থকেরাও। তবে বিজেপির কয়েক জন অবশ্য ওই দুই নেতার যোগদানে দল আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন।

নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ উপলক্ষ্যে এ দিন সকালে দুবরাজপুরে বিজয় মিছিলেও ওঠে মনিরুলদের প্রসঙ্গ। মিছিলে ছিলেন জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডল, জেলা সম্পাদক আরিন্দম মুখোপাধ্যায়।

কালোসোনাবাবু বলেন, ‘‘মনিরুল অনেক মায়ের কোল খালি করেছেন, অনেক গ্রামে লুট করেছেন। বিজেপি কর্মীদের খুন করেছেন। ওঁর মতো মানুষকে মানব না। মনিরুলের বিজেপিতে যোগদানে দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। দরকারে বিক্ষোভ করব। এ কথা বলার জন্য আমার পদ যায় তো যাবে।’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক লাভপুর এলাকার বিজেপির এক পুরনো কর্মী বলেন, ‘‘যাঁরা এত দিন আমাদের মারধর করে বাড়ি জ্বালিয়েছেন। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন, তাঁদেরই মাথার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হলে দল করব কী ভাবে। তা হলে ওঁদের নিয়েই দল চালান নেতারা!’’ সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এক কর্মী বলেন, ‘‘ওঁদের অত্যাচার থেকে বাঁচতেই বিজেপিতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ওঁরাই যদি বিজেপির নেতা হয়ে বসেন, তা হলে তো পুরনো দল ছেড়ে আসা ভুল হল।’’

লাভপুর এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য বিশ্বজিৎ মণ্ডল, নানুর মণ্ডল কমিটির সভাপতি বিনয় ঘোষের বক্তব্য— ‘‘ওই দুই নেতার দলে অনুপ্রবেশ মেনে নিতে পারছেন না কর্মী-সমর্থকেরা। অনেকে নিষ্ক্রিয় হওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এত দিন যাঁদের অত্যাচারে দলের কর্মীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন, তাঁরাই দলে জায়গা পেলে প্রশ্ন তো উঠবেই!’’

বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের মানা না মানা পরের বিষয়। যে সব নেতার বিরুদ্ধে রায় দিয়ে জনগণ আমাদের জিতিয়েছেন, তাঁদের দলে ঢোকানো হলে আম-জনতা মানবেন না। দিল্লির নেতারা ঠিক করুন জনতাকে নিয়ে চলবেন না জনতা যে নেতাদের ছুড়ে ফেলেছে, তাঁদের নিয়ে।’’

জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘এটা রাজ্য বা জেলাস্তরের বিষয় নয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত। সুতরাং যা বলার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই বলবেন।’’

এ নিয়ে মনিরুল ইসলাম ও গদাধর হাজরার সঙ্গে ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাঁদের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manirul Islam State BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE