Advertisement
E-Paper

কত রক্ত ঝরলে থামবে দ্বন্দ্ব

২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের পর থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার বিষ্ণুপুর বিধানসভার আওতায় থাকা তালড্যাংরা থানার আমডাংরা,  ঢ্যামনামারার মতো প্রত্যন্ত গ্রামগুলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০০:৪৬
শোকার্ত: বাঁকুড়া মেডিক্যালের মর্গের সামনে নিহত রাহুলের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: বাঁকুড়া মেডিক্যালের মর্গের সামনে নিহত রাহুলের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

আট বছরের ছেলেটি কার কী ক্ষতি করেছিল, যে তাকে খুন হতে হল?

পড়শির বাড়িতে মিষ্টি খেতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন পরে মুখে কাপড় গোঁজা ও হাত-পা গাছের লতা দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় প্রথম শ্রেণির ছাত্র রাহুল কুদ্দুস খানের পচন ধরে যাওয়া দেহ উদ্ধারের পর থেকে এই প্রশ্নটাই ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন মহলে।

২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের পর থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার বিষ্ণুপুর বিধানসভার আওতায় থাকা তালড্যাংরা থানার আমডাংরা, ঢ্যামনামারার মতো প্রত্যন্ত গ্রামগুলি। এখানে লড়াই কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীদের মধ্যে। দু’পক্ষের এই দ্বন্দ্বের জেরে এলাকায় খুনোখুনি বন্ধ হচ্ছে না।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে খুন হন ঢেমনামারা গ্রামের তৃণমূল কর্মী শ্যামবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত জান মহম্মদ মল্লিক। ওই ঘটনাতেও মৃতের পরিবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করে তুষারকান্তিবাবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে অবশ্য তদন্তে নেমে ওই খুনের ঘটনায় তুষারবাবুর হয়ে নির্বাচনী প্রচারে থাকা সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাহুলের খুনের ঘটনাতেও সেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি জানাজানি হতেই শিউরে উঠছেন অনেকে। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রকে রাজনীতির বলি কেন হতে হল? বাঁকুড়া মেডিক্যালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে এ দিন শাসকদলের নেতাদের একাংশের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেন রাহুলের পরিজনেরা।

রাহুলের দাদু ইয়াজুল খানের অভিযোগ, “জান মহম্মদ খুন হওয়ার পর থেকেই শ্যামবাবুর লোকেরা হুমকি দিয়ে বলত আমরা তো লাশ পেয়েছি, তোদের লোকের লাশটাও খুঁজে পাবি না। এই ছোট্ট ছেলেটাকে মেরে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে সেটাই করে দেখাল ওরা।”

রাহুলের বাবা দিল ইসলাম খানের অভিযোগ, ভোটের আগের দিন বাড়িতে চড়াও হয়ে এলাকায় শ্যামবাবুর অনুগামীরা তাঁকে মারধর করে। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনি বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হন। পরে সুস্থ হওয়ার হয়েও ঝামেলার আশঙ্কায় ঢ্যামনামারা গ্রামে ফিরতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমাকে খুন করতে না পারায় ওদের রাগ মেটেনি। তাই আমার পরিবারকে টার্গেট করেছিল ওরা।” তিনি জানান, গত কয়েক দিন আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রাহুল বা তাঁর স্ত্রী হিয়া খানকে একা বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। তবে রবিবার পাড়ার এক ব্যক্তি নতুন বাড়ি ঢালাই করার খুশিতে সবাইকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছিলেন। রাহুল পাড়ার অন্য ছেলেদের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিল। আর ফেরেনি।

সোমবারই শ্যামবাবুর কিছু অনুগামীর বিরুদ্ধেই রাহুলকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানানো হয় থানায়। তাদের বিরুদ্ধেই মারধরের অভিযোগ আগে করেছিলেন দিল ইসলাম। মঙ্গলবার সকালে বাড়ির মেয়েরা জঙ্গলে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়ে পচা গন্ধ পান। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন গিয়ে জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়ে রাহুলের দেহ দেখতে পান।

নিজের অনুগামীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শ্যামবাবু। তিনি দাবি করেন, “এলাকায় ভোট হয়নি। তাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হওয়ার কোনও কারণই ই। এই অভিযোগ মিথ্যা। পুলিশ তদন্ত করলেই প্রকৃত দোষীরা বেরিয়ে আসবে।” যদিও রাহুলের মৃত্যুর জন্য দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করে তুষারকান্তিবাবু প্রশ্ন তোলেন, “আমরা সবাই তৃণমূলই করি। তাহলে এই দ্বন্দ্ব কেন? দলের নিজেদের লড়াইয়ে এই রক্ত ঝরা এ বার বন্ধ হোক।”

রাহুলের খুন মেনে নিতে পারছে না কোনও মহলই। তালড্যাংরা ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি শ্যামবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নিতাই চক্রবর্তী বলেন, “দলমত নির্বিশেষে সকলেরই উচিত প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে তদন্তে সাহায্য করা।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খানের দাবি, “পুলিশ ওই খুনের ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে।”

এই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী দলের নেতারাও। বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার অভিযোগ করেন, “তৃণমূল মনোনয়ন পর্বেই আমাদের এক কর্মীকে রানিবাঁধে খুন করে। কিন্তু রাহুল তো কোনও রাজনৈতিক কর্মী ছিল না। তারপরেও তাকে নৃশংস ভাবে মারা হল! শিশুদেরও রেহাই নেই এ রাজ্যে।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, তালড্যাংরার বাসিন্দা অমিয় পাত্রের অভিযোগ, “এই তৃণমূলকে আর কত দিন মানুষ সমর্থন করবে, তা ভাবার সময় এসেছে।”

TMC CPM Bankura বাঁকুড়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy