আলু জমিতে জমে রয়েছে জল। বিষ্ণুপুর ব্লকের সুভাষপল্লি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
বাজারে চলে এসেছে। কিলোগ্রাম প্রতি ১৪-১৫ টাকায় কিনে অনেকে বাজারের থলিও ভরেছেন। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টি সেই জলদি আলুর ফলনেই খারাপ প্রভাব ফেলতে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। শুধু জলদি আলু নয়, বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে শাক, টোম্যাটো, ফুলকপির ফলনেও।
কৃষকদের কাছে এই জলদি আলু সোনার ফসল। এই আলু হিমঘরে যায় না। জলদি আলুর ব্যবসায়ীরা মাঠেই ওজন করে কিনে দাম মিটিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু এ বার অসময়ের বৃষ্টিতে সেই সোনার ফসলের ফলন নিয়েই দুশ্চিন্তায় জলদি আলুর চাষিরা।
গত দু’দিনের বৃষ্টি ইতিমধ্যে জল জমিয়েছে আলু গাছের গোড়ায়। অনেক চাষিই টাকা খরচ করে আলু গাছের গোড়ায় জল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন, আর তার ঠিক পরেই বৃষ্টির জল যোগ হয়েছে সেখানে। এই অতিরিক্ত জল-যোগের ফলে রোদ উঠলেই আলুতে ধসা রোগের সংক্রমণ হতে পারে বলে মনে করেছেন চাষিরা।
বিষ্ণুপুরের সুভাষপল্লির পরিমল রায় জানান, জলদি আলু চাষ করতে ৬০ দিন লাগে। সবে ৩০-৩৫ দিন হয়েছে বীজ আলু বসানো হয়েছে। এক বিঘা জলদি আলু চাষ করতে সারের দাম, বীজ আলু, জল পাওয়ানো, শ্রমিক খরচ সব মিলিয়ে গড়ে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। ৬০ থেকে ৬৫ দিন পর এক বিঘাতে ৪৫ থেকে ৪৭ বস্তা আলু পাওয়া যায়। কিন্তু এই আবহাওয়ায় এই হিসাব কতটা বাস্তবে ফলবে সেটাই দেখার।
শুধু জলদি আলুই নয়, অসময়ের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ফুলকপি, টোম্যাটো, পালংশাকের ফলনও। যদিও রবি মরসুমের ডাল এবং তৈলবীজ চাষের ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি একরকম শাপে বর হয়েছে বলে দাবি করছে কৃষি দফতর।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পুরুলিয়ায় কমবেশি ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শাক ও ফুলকপি চাষের ক্ষেত্রে গাছের গোড়ায় জল জমে গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ঝালদা গ্রামের চাষি ঠাকুরদাস কুইরির দাবি, এই বৃষ্টিতে তাঁর জমির শাকের ভালই ক্ষতি হয়েছে। বান্দোয়ানের সুধাকর গড়াই, ভরত মাহাতোরা চাষ করেছেন ফুলকপি, টোম্যাটো। সুধাকর বলেন, ‘‘টানা বৃষ্টিতে আনাজের ক্ষতি হতে শুরু করেছে। এ রকম বৃষ্টি চললে ফুলকপি, টোম্যাটোর ফলন ভাল না-ও হতে পারে।”
পাশাপাশি, কাটার পরে মাঠে পড়ে থাকা ধানও বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। হুড়ার আব্দুল সামাদ আনসারি বলেন, ‘‘এ বছর অনাবৃষ্টিতে এমনিতেই ধানের ফলন কম। অনেক ক্ষেত্রেই দেরিতে ধান কাটা শুরু হয়েছিল। ফলে সব ধান গোলায় তোলা সম্ভব হয়নি। এই বৃষ্টিতে সেই ধানের ক্ষতি হয়েছে।”
তবে বৃষ্টি কার্যত আশীর্বাদ হয়েছে রবি মরসুমের ডাল এবং তৈলবীজ চাষের ক্ষেত্রে। চলতি বছর ধানের ফলন কিছুটা কম হওয়াতে বিকল্প চাষ হিসাবে চাষিদের রবি মরসুমে ডাল ও তৈল বীজ চাষে উৎসাহিত করেছিল কৃষি দফতর।
বিভিন্ন ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তারা জানাচ্ছেন, এই ডাল ও তৈলবীজ চাষ হয়েছে মূলত উঁচু জমিতে। সেই বাইদ ও কানালি জমি জলের অভাবে ফাটতে শুরু করেছিল। বৃষ্টি এসে ডাল ও তৈলবীজ চাষকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
জেলার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) সুশান্ত দত্ত বলেন, ‘‘রবি মরসুমের ডাল ও তৈলবীজ চাষের ক্ষেত্রে দু’দিনের বৃষ্টি অত্যন্ত সহায়ক হয়েছে।”
বেগুন চাষের ক্ষেত্রেও এই বৃষ্টি সহায়ক হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরুলিয়া ১ ব্লকের চাষি উত্তম মাহাতো। তবে বৃষ্টিতে আনাজ চাষের বড়সড় ক্ষতি জেলায় হয়েছে এই মর্মে কৃষি দফতরের কাছে কোনও খবর নেই বলে দাবি করেছেন সুশান্তবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy