Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পুরুলিয়ায় চেয়ারম্যান কে পি সিংহদেও

প্রথম ভোটে জিতেই পুরপ্রধান, রঘুনাথপুরে বাজিমাৎ ভবেশের

বোর্ড গড়লে পুরপ্রধান কে হবেন, তা ভোটের আগেই স্থির করে ফেলেছিল শাসক দল। সেই মতো পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নির্বাচিত হলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা বিধায়ক কে পি সিংহদেও। রঘুনাথপুরে অবশ্য পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে দলের অন্দরে শেষ পর্যন্ত কিছুটা টানাপড়েন ছিল বিদায়ী পুরপ্রধান মদন বরাট ও শহরের যুব নেতা ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে।

বিরল ছবি। আলিঙ্গনে কে পি সিংহদেও এবং শান্তিরাম মাহাতো। শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান মঞ্চে এই ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত  উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই। ছবি: সুজিত মাহাতো।

বিরল ছবি। আলিঙ্গনে কে পি সিংহদেও এবং শান্তিরাম মাহাতো। শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান মঞ্চে এই ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই। ছবি: সুজিত মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:০২
Share: Save:

বোর্ড গড়লে পুরপ্রধান কে হবেন, তা ভোটের আগেই স্থির করে ফেলেছিল শাসক দল। সেই মতো পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নির্বাচিত হলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা বিধায়ক কে পি সিংহদেও। রঘুনাথপুরে অবশ্য পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে দলের অন্দরে শেষ পর্যন্ত কিছুটা টানাপড়েন ছিল বিদায়ী পুরপ্রধান মদন বরাট ও শহরের যুব নেতা ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে। স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির ইচ্ছেয় শিকে ছিঁড়েছে ভবেশবাবুর ভাগ্যেই। জীবনে প্রথম বার কোনও নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিতে সরাসরি পুর-চেয়ারম্যানের পদ জুটেছে ভবেশবাবুর। পুরপ্রধান নির্বাচনে পুরুলিয়ায় তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে ভোটাভুটি হলেও রঘুনাথপুরে হয়নি।

জেলার তিনটি পুরসভার মধ্যে পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুরে ক্ষমতা ধরে রেখেছে শাসক দল তৃণমূল। পুরুলিয়ায় ২৩টির মধ্যে ১৫টি আসন ও রঘুনাথপুরে ১৩টির মধ্যে ৮টিতে জিতেছে তারা। পুরুলিয়ায় কে পি সিংহদেওকেই ভাবী পুরপ্রধানের মুখ হিসাবে তুলে ধরে ভোটে লড়েছিল শাসক দল। পরে জেলা সফরে এসে ওই বর্ষিয়ান নেতার নাম চেয়ারম্যান হিসাবে এক প্রকার ঘোষণাও করেছিলেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া পুরসভার ঐতিহ্যবাহী গাঁধী ভবনে হয়েছে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান। ২৩ জন কাউন্সিলরই এ দিন শপথ বাক্য পাঠ করান পুরুলিয়ার (সদর) মহকুমাশাসক সৌম্যজিৎ দেবনাথ। পুরুলিয়ায় পুরপ্রধান নির্বাচনে যে ভোটাভুটি হতে চলেছে, তার আঁচ মিলেছিল সভা পরিচালনার জন্য সভাপতি নির্বাচনেই। তৃণমূলের পক্ষে সভাপতি হিসাবে শামিমদাদ খানের নাম প্রস্তাবিত হয়। অন্য দিকে কংগ্রেসের তরফে প্রস্তাব করা হয় তাদের সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের নাম। প্রসঙ্গত, পুরুলিয়ায় পাঁচটি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। আর একটিতে জিতেছেন তাদের সমর্থিত তৃণমূল ত্যাগী প্রদীপবাবু। সভাপতি নির্বাচনে ১৫টি ভোট পেয়েছিলেন শামিমদাদ। প্রদীপবাবু পান ছ’টি ভোট। সভাপতি নির্বাচনের পরে চেয়ারম্যান নির্বাচনে কে পি সিংহদেওয়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন বিভাসরঞ্জন দাস। এ ক্ষেত্রেও ১৫টি ভোট পান বিধায়ক। ছ’টি ভোট পান বিভাসবাবু। দু’টি নির্বাচনেই ভোটদানে বিরত ছিলেন সিপিএমের একমাত্র কাউন্সিলর মিতা চৌধুরী ও নির্দল কাউন্সিলর রুম্পা কবিরাজ।

পুরসভা চত্বরে সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও দলীয় কাউন্সিলরদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল জেলা তৃণমূল। উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। পরে কেপি সিংহদেও সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম লক্ষ্যেই হচ্ছে, শহরের পানীয় জলের সঙ্কট দূর করা এবং স্বচ্ছ পুর-প্রশাসন গঠন করা।” কংগ্রেসের কাউন্সিলর সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বচ্ছ পুর-প্রশাসনের স্লোগান সামনে রেখেই তৃণমূল নির্বাচনে লড়াই করেছিল। আমরা আশা করব, তৃণমূল তাদের কথা রাখবে।”

অন্য দিকে, রঘুনাথপুরে পুরপ্রধান নির্বাচনে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত উত্তেজনার রসদ ছিল। বেলা ১২টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কিছু আগে দলীয় কার্যালয়ে ৮ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে ছোট সভা করেন বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবু। তার পরেই ক্লাইম্যাক্সের অবসান! দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে পাঠানো বন্ধ খাম খুলে চেয়ারম্যান হিসাবে ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেন জেলা যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রণব দেওঘরিয়া। তৃণমূল সূত্রেই খবর, রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রে দলের একাংশ চেয়েছিল ফের চেয়ারম্যান করা হোক মদন বরাটকেই। কিন্তু, বিধায়ক-সহ শহরে দলের বড় অংশের পছন্দ ছিলেন শহরের যুব নেতা ভবেশ। কার্যত বিধায়কের ইচ্ছাতেই চেয়ারম্যান হয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এ বার সব চেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ী বছর বত্রিশের ভবেশ। পুরপ্রধান হওয়ার পরেই তাঁকে বিধায়কের কাছে গিয়ে আশীর্বাদ নিতে দেখা গিয়েছে।

রঘুনাথপুরের নতুন পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় ও বিধায়ক পূণর্চন্দ্র বাউরি। —নিজস্ব চিত্র।

এ দিন ১৩ জন কাউন্সিলরকে শপথ বাক্য পাঠ করান রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা। পরে সভা পরিচালনার জন্য সভাপতি নির্বাচিত হন দুই নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুলেখা দাস। চেয়ারম্যান নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী না দেওয়াতে ভোটাভুটি ছাড়াই চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ভবেশবাবু।

নির্বাচন পর্ব শেষ হওয়ার পরেই যুব তৃণমূলের কর্মীরা দলে দলে পুরসভার মধ্যে ঢুকে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। পরে দলীয় কার্যালয়ে বিধায়কের পাশে বসে ভবেশবাবু বলেন, ‘‘শহরে পানীয় জলের প্রকল্পটি দ্রুত শুরু করা এবং শিশু উদ্যান তৈরি করা আমাদের প্রথম লক্ষ্য।” এ ছাড়াও বিধায়কের পরামর্শ অনুযায়ী পুরসভার পাশের ক্ষুদিরাম পার্কটির সার্বিক উন্নয়ন করে সেটিকে শহরের মুখ হিসাবে তুলে ধরতে তিনি প্রথমেই উদ্যোগী হবেন বলে জানালেন পুরপ্রধান। আর পূর্ণচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘শহরের সমস্ত স্তরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের পরামর্শ নিয়ে শহরের উন্নয়নের কাজ করবে পুরসভা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE