কলেশ্বর মন্দির। — নিজস্ব চিত্র
বছর ভর পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। কিন্তু জেলার পর্যটন মানচিত্রে কলেশ্বরের ঠাঁই হয়নি আজও। তাই মনখারাপ স্থানীয় বাসিন্দাদের। অবিলম্বে পর্যটন মানচিত্রে কলেশ্বরের অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলেছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর আগে কলেশ ঘোষ নামে এক গোয়ালা পার্বতীপুরে একটি শিবলিঙ্গ উদ্ধার করেন। তাঁর নামানুসারে ওই শিবের নাম হয় কলেশনাথ। পার্বতীপুর পরিচিত হয় কলেশ্বর নামে। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে স্থানীয় ঢেকার রাজা রামজীবন কলেশ্বরে নির্মাণ করেন ন’টি চূড়া বিশিষ্ট সুউচ্চ মন্দির। একই সঙ্গে তাঁরই উদ্যোগে ওই মন্দির চত্বরেই নির্মিত হয় আরও কয়েকটি মন্দির। পরবর্তী কালে ওই শিবমন্দির ধ্বংস হয়। সেই স্থলে বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করান দক্ষিণখণ্ডের দ্বারিকানাথ দেবতপস্বী নামে এক সাধক। শিবচতুর্দশী তো বটেই, সারা বছরই পুন্যার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে কলেশ্বরে। দূরের মানুষজন জল ঢালতে আসেন শিবের মাথায়। শিবচতুর্দশীতে ৭ দিনের মেলাও বসে। জেলার গণ্ডী ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কলেশ্বরের নাম ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। কিন্তু আজও কলেশ্বর সরকারি সদিচ্ছার অভাবে অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। এক সময় পুজো পরিচালনা-সহ মন্দিরের উন্নয়নের জন্য রামজীবন বেশ কিছু জমি বরাদ্দ করেন। সেই জমির সিংহভাগই আজ বেহাত হয়ে গিয়েছে বলে মন্দির কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন। এর ফলে পর্যটনের সম্ভবনা থাকা স্বত্ত্বেও থমকে গিয়েছে যাবতীয় উন্নয়ন।
কলেশ্বরকে জেলার পর্যটন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের। প্রশাসনের সকল স্তরে আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা। নানা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় কলেশ্বরে পা রেখেছেন রাজনৈতিক দলের তাবড় নেতামন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তাঁদের হাতে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা তথা নেতাজি সংস্কৃতি মঞ্চের সম্পাদক হিমাদ্রি শেখর দে, শক্তিপদ ভল্লারা বলেন, ‘‘কলেশ্বর পর্যটন মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত হলে এলাকার আর্থসামাজিক চালচিত্রই বদলে যাবে। কিন্তু বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে।’’ সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণী দাসও বলেন, ‘‘ওই দাবি খুবই সঙ্গত। আমরাও এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’
সম্প্রতি কলেশ্বরে এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। নানা উন্নয়ন-সহ পর্যটন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্তির দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তাঁর হাতে তুলে দেন কলেশ্বর শিবালয় এবং আশ্রম কমিটির সদস্যরা। ওই সংস্থার সভাপতি শুকদেব মিত্র বলেন, ‘‘সভাধিপতি আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। ওইসব দাবি পূরণ হলে কলেশ্বরও এক দিন জেলার অন্যান্য স্থানের মতো আর্কষণ বৃদ্ধি করবে।’’ সভাধিপতির আশ্বাস, ‘‘ইতিমধ্যেই কলেশ্বরে নানা উন্নয়নের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। পর্যটন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সব দিক খতিয়ে দেখার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy