Advertisement
E-Paper

কুড়ুলের কোপ থেকে রক্ষা করতে অশ্বত্থ-বটের বিয়ে

ডিএফও (পুরুলিয়া) রামপ্রসাদ বাদানা শনিবার বলেন, ‘‘খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ওঁদের পুরস্কৃত করা হবে।’’

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ০০:০৫
আনুষ্ঠানিক: শুক্রবার কোটশিলা থানার বেগুনকোদরে। নিজস্ব চিত্র

আনুষ্ঠানিক: শুক্রবার কোটশিলা থানার বেগুনকোদরে। নিজস্ব চিত্র

ছাদনাতলায় পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ, উলুধ্বনি থেকে বরযাত্রী ও কনেযাত্রীদের পাতপেড়ে খাওয়াদাওয়া কিছুই বাদ পড়ল না। বিয়ের মরসুমে গাছ বাঁচাতে দু’টি গাছের বিয়ে দিলেন পুরুলিয়ার কোটশিলার বেগুনকোদরের এক বৃদ্ধ দম্পতি। কুডুলের আঘাত থেকে গাছ বাঁচাতেই এই ভাবনা তাঁদের। শুক্রবার বেগুনকোদর গ্রামের গোপালবাঁধের পাড়ে অশ্বত্থ ও বটগাছের বিয়ে দেখতে ভিড় করলেন বয়স্ক থেকে কচিকাঁচারা।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ভ্রূকুটি সত্ত্বেও রাতের অন্ধকারে কাঠ মাফিয়াদের দাপটে সাফ হয়ে যাচ্ছে একের পের এক জঙ্গল। তখন গাছ বাঁচাতে বাসিন্দাদের এ ভাবে এগিয়ে আসাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে বন দফতর। এমনকি, ওই কাজের জন্য পুরস্কারের ঘোষণাও করেছে তারা।

ডিএফও (পুরুলিয়া) রামপ্রসাদ বাদানা শনিবার বলেন, ‘‘খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ওঁদের পুরস্কৃত করা হবে।’’ কোটশিলার রেঞ্জ অফিসার সোমা সরকার দাস জানান, আগামী ৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবসে পুরস্কৃত করা হবে ওই দম্পতিকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দশক আগে গাছ দু’টি বসিয়েছিলেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ফটিকচন্দ্র দত্ত এবং তাঁর স্ত্রী শেফালিদেবী। দু’জনই এখন বৃদ্ধ। তবে ‘গাছপাগল’ বলে পরিচিত ওই দম্পতির উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি।

৮৫ বছরের ফটিকবাবু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘এক সময়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে নেশার মতো এলাকায় অনেক গাছ বসিয়েছি। কিন্তু এখন দিনকাল ভাল নয়। গাছ নষ্ট হচ্ছে। আগামী দিন ভয়ঙ্কর। তাই ছেলেদের বললাম, ওই বড় দু’টি গাছের বিয়ে দে। তা হলে হয়তো ওই দু’টো রক্ষা পাবে।’’

তাঁদের ছেলে ধীরেন দত্ত ও হরেন দত্ত বলেন, ‘‘বাবা-মায়ের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতেই দুই গাছের বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ। গ্রামবাসীকে সাক্ষী রেখে বর ও কনে তরফের দুই পুরোহিতকে ডেকে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে হিন্দু শাস্ত্রমতে গাছ দু’টির বিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

তাঁরা জানান, ওই এলাকায় চল রয়েছে, যে গাছে একবা র পূজার্চনা হয়, তা সাধারণত কেউ কাটতে চান না। তা ছাড়া, ধর্মীয় বিশ্বাসের দৌলতে ওই গাছ কেউ কিনতেও চান না।

বিয়ের আয়োজনে কমতি ছিল না কিছুর। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, প্রথমে কলাগাছ দিয়ে তৈরি করা হয় ছাদনাতলা। মালা-চন্দন দিয়ে বরের বেশে সাজিয়ে তোলা হয় বটগাছটিকে। সামান্য কমবয়সি অশ্বত্থকে সাজিয়ে তোলা হয় কনে রূপে। পুকুর থেকে ঘড়ায় জল নিয়ে আসা থেকে মহিলাদের উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি বাদ ছিল না কিছুই।

দুই পুরোহিত তরুণ চক্রবর্তী এবং নবকুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনেকদিন ধরে পৌরোহিত্য করছি। কিন্তু গাছের বিয়ে এই প্রথম। কোনও মন্ত্রই বাদ দেওয়া হয়নি। আমরা চাই, এই বিয়ের মাধ্যমে গাছ বাঁচানোর বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক।’’

উচ্ছ্বসিত পরিবেশকর্মী তপনকুমার বিদ, চন্দন চক্রবর্তী জানান, গাছ বাঁচাতে বিয়ে দেওয়ার এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক গ্রাম থেকে শহরে। তবে সবুজ বাঁচানোর আন্দোলনে আরও গতি আসবে।

Kotshila Banyan Tree
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy