Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Kurmi Community

অভি-যাত্রায় কুড়মি কাঁটা, নেতাদের তলব নবান্নের

বর্তমানে ওবিসি শ্রেণিভুক্ত কুড়মি সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি জাতির স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

কুড়মি সমাজের প্রতিবাদী রূপ।

কুড়মি সমাজের প্রতিবাদী রূপ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ০৯:৪৮
Share: Save:

জনজাতি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কুড়মিদের কয়েকটি সংগঠন রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি লালগড়ের ধরমপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ কুড়মিদের একটি সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। বৃহস্পতিবার থেকে বাঁকুড়া জেলা হয়ে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচির জঙ্গলমহলে শুরু করার কথা। কিন্তু তার আগেই আদিবাসী কুড়মি সমাজ অভিষেকের যাত্রাপথে নিজেদের দাবির সমর্থনে স্লোগান দেবেন বলে ঘোষণা করায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বর্তমানে ওবিসি শ্রেণিভুক্ত কুড়মি সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি জাতির স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সে জন্য রাজ্য সরকার যাতে কেন্দ্রকে সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট পাঠায়, সেই দাবিতে এপ্রিলে ঝাড়গ্রামের খেমাশুলি ও পুরুলিয়ার কুস্তাউরে কুড়মিদের কয়েকটি সংগঠন টানা রেল ও সড়ক অবরোধ করে। কিন্তু রাজ্য সরকার অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবরোধ তুলে দেয় বলে তারা অভিযোগ তোলে। এরপরেই তৃণমূল-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই কুড়মি এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দেওয়া যাবে না বলে তারা হুঁশিয়ারি দেয়। ইতিমধ্যে পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলার কয়েকজন তৃণমূল-সহ বিভিন্ন দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধি কুড়মি সমাজের কাজ করবেন বলে দলত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন।

এই অবস্থায় আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো দাবি করেছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাত্রাপথে যেখানে আমাদের শক্তি রয়েছে, সেখানে রাস্তার পাশে আমরা সংগঠনের পতাকা নিয়ে হাজির থাকব। আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে স্লোগান দেব। অভিষেক যদি দাঁড়ান, তাহলে তাঁকে আমাদের দাবির কথা জানাব।’’

কিন্তু কুড়মি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে যে ভাবে রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা চলছে, এই আবহে অভিষেকের যাত্রাপথ কতটা মসৃন হবে, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকে। সূত্রের খবর, গোয়েন্দাদের তরফেও বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ, বুধবার নবান্নে ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া জেলার কুড়মি সম্প্রদায়ের জেলার শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্ব ও কিছু কুড়মি নেতাকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। সূত্রের খবর, পুরুলিয়া থেকে ওই বৈঠকে থাকার কথা প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো, বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো, জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো, জেলা পরিষদের দলনেতা হলধর মাহাতো, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নিয়তি মাহাতো, কুড়মি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল মাহাতো ও পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজের রাজ্য সম্পাদক শুভেন্দু মাহাতো। নবান্নে যাচ্ছেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো সহ ঝাড়গ্রাম জেলার পাঁচ নেতা। চূড়ামণি ছাড়াও ডাক পেয়েছেন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা ঝাড়গ্রাম পুরসভার কাউন্সিলর অজিত মাহাতো, ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নরেন মাহাতো, জেলা কমিটির দুই সদস্য নিশীথ মাহাতো ও শ্যামল মাহাতো। নিশীথ জামবনি ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি। আর শ্যামল লালগড় ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি। চূড়ামণি বলছেন, ‘‘বুধবার দিদি আমাদের নবান্নে আলোচনায় ডেকেছেন। আশা করছি এ বার সুরাহা হবে।’’

তৃণমূল নেতৃত্বও ঘনঘন অভিষেকের কর্মসূচির দিনক্ষণ পরিবর্তন করায় জল্পনা শুরু হয়েছে। আগে খবর ছিল, বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের জন্য তিনি বাঁকুড়ায় আসছেন। শেষ দিন তাঁর জঙ্গলমহলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দল সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, তিনি দু’দিন বাঁকুড়া জেলায় থাকবেন। জঙ্গলমহল তাঁর যাত্রাপথে নেই। কেন নেই? তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বই তাঁর সফরের দিনক্ষণ ঠিক করছে। আমরা সর্বত্র প্রস্তুতি নিয়েছি।’’

তবে রবিবার থেকে অভিষেকের দু’দিনের পুরুলিয়া সফরের মধ্যে কুস্তাউর, কোটশিলা, জয়পুর, ঝালদা, মানবাজার, বরাবাজার, চাষমোড় প্রভৃতি কুড়মি অধ্যুষিত এলাকায় তাঁর কর্মসূচি রয়েছে বলে দল সূত্রের খবর। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘কুড়মিদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকার দেখছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE