Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
100 days’ work

একশো দিনের কাজে গতি চান দিনমজুরেরা

একশো দিনের প্রকল্পই গ্রামীণ এলাকার ভরসা হতে পারে বলে মনে করছেন বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

করোনা সংক্রমণের জেরে এ রাজ্যে কড়াকড়ি চলছে। আবার অনেক রাজ্যে চলছে লকডাউন। এই পরিস্থিতিতে পুরুলিয়া জেলার দিনমজুরেরা যেমন রোজগার হারিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তেমনই লকডাউনের জন্য ভিন্‌ রাজ্যে কাজে ফিরতে না পেরেও অনেক যুবক সঙ্কটে পড়েছেন। তাঁদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে একশো দিনের প্রকল্পে আরও গতি বাড়াক জেলা প্রশাসন।

বাসিন্দাদের দাবি, গত বছর লকডাউনের সময় যে ভাবে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন মাটির সৃষ্টি প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিকের আয় সুনিশ্চিত করেছিল, এ বারও তেমনই ব্যবস্থা করা হোক।

পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘জেলায় করোনা সংক্রমণের মোকাবিলা করাই ছিল প্রাথমিক কাজ। সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতেই ইয়াসের ধাক্কা গেল। কৃষি ক্ষেত্রে একশো দিনের কাজের জন্য অনুমতি মিলেছে। সতর্কতা ও বিধি মেনে এ বার একশো দিনের প্রকল্পে আরও কাজ শুরু
করা হবে।’’

ঘটনা হল, বর্তমান পরিস্থিতিতে দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষেরা মোটেই ভাল নেই। যেমন আড়শার বাসিন্দা বাসুদেব কর্মকার দিনকয়েক ধরে কিছু টাকা জোগাড়ের চেষ্টায় ঘুরছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুক্রবার এক পরিচিতের কাছে হাজার দেড়েক টাকা ধার করেছি। টাকাটা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত চিন্তায় ছিলাম, ইয়াসের বিপর্যয়ে ধারটুকুও পাব কি না। ছেলেরা রাজস্থান ও চেন্নাইয়ে কাজ করে। সেখানে কাজ বন্ধ বলে ওদেরই চলছে না। তাই তারাও টাকা পাঠাতে পারছে না। এ দিকে গ্রামে কোনও কাজ নেই। একশো দিনের কাজ হলে, পেতাম। তা-ও হচ্ছে না।’’

বান্দোয়ানের কেশরা গ্রামের বাসিন্দা বীরেন টুডু পেশায় রং মিস্ত্রি। ওড়িশার ঝাড়সুগদায় কাজ করতেন। বিধানসভা ভোটের আগে গ্রামে ফিরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, ভোটের ফল বেরোনোর পরে কর্মস্থলে ফিরে যাব। কিন্তু করোনার বাড়াবাড়িতে আর ফিরে যাওয়া হয়নি। গত বার লকডাউনে গ্রামে ফিরে মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে কাজ পেয়েছিলাম। এ বারে বসেই আছি। হাতে কাজ নেই।’’ দু’জনেরই আক্ষেপ, রেশনে চাল-আটার জন্য ঘরে হাঁড়িটা চড়ছে। কিন্তু সংসার চালাতে হাতে নগদ টাকা তো দরকার।

হরিয়ানার একটি মোটরবাইক কারখানার ক্যান্টিনে রান্নার কাজ করতেন আড়শার চিটিডি গ্রামের বাসিন্দা বংশীধর মাহাতো। তিনি জানান, গত বছরের লকডাউনের পর থেকেই কারখানা অনেক দিন বন্ধ ছিল। ইদানীং খুলেছে। কিন্তু এখন সেখানে যেতে পারছেন না। ফলে, তিনিও আপাতত ঘরে বেকার
বসে রয়েছেন।

ওই কারখানাতেই অন্য ক্যান্টিনে কাজ করতেন ঝালদা ২ ব্লকের হড়বহ গ্রামের বাসিন্দা তপন মাহাতো। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর মে মাসে বাস ভাড়া করে চার হাজার টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরেছিলাম। ভেবেছিলাম ভোটের পরেই ফিরে যাব। কিন্তু যেতে পারছি না। আমি রান্নার কাজ জানি। কিন্তু এখানেও তো হোটেল-রেস্তরাঁ বন্ধ। কাজ নেই বলে বসে আছি।’’

কাশীপুরের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর বিমল বাউরি, আড়শার বাসুদেব কর্মকার, পুরুলিয়া ২ ব্লকের আমির আনসারিদের কথায়, ‘‘গত বার লকডাউনের সময়ে অনেকে ডাল, তেল, নুন, বিস্কুট, মশলা দিয়ে সহায়তা করছিলেন। এ বার সেটুকুও জুটছে না।’’

এই পরিস্থিতিতে একশো দিনের প্রকল্পই গ্রামীণ এলাকার ভরসা হতে পারে বলে মনে করছেন বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা দিন আনেন দিন খান, তাঁদের শুধু রেশনের চালে সংসার চলবে কী করে? ১০০ দিনের কাজ যাতে মানুষকে বেশি দেওয়া যায়, সে জন্য প্রশাসনকে জানাব।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধক্ষ্য গুরুপদ টুডুর দাবি, ‘‘গতবারে লকডাউনে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ দিয়েই ঘুরে দাঁড়ানো গিয়েছিল। মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে রাজ্যে মডেল ছিল পুরুলিয়া। এ বার সবে সরকার গঠন হয়েছে। তার মধ্যে কোভিডের বাড়বাড়ন্ত থেকে মানুষকে বাঁচানো প্রধান কর্তব্য ছিল। এ বার ফের ১০০ দিনের কাজকে সম্বল করেই ঘুরে দাঁড়ানো হবে।’’

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ভোট ও তার পরে, কোভিডের বাড়বাড়ন্তের জন্য একশো দিনের প্রকল্পে গতি কিছুটা কমলেও কাজ বন্ধ ছিল না। চলতি আর্থিক বছরে ইতিমধ্যেই তিন লক্ষ ৩৯ হাজার ৮৮৬ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। ১৯,৪১৭টি পরিবারকে কাজ দেওয়া হয়েছে। ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। নতুন করে আরও কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC 100 days’ work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE