Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

গুদাম নেই, বিপুল আলুর মজুত পেয়ে নাজেহাল স্কুল

মিড-ডে মিলের আলু পেয়ে নাজেহাল জেলার স্কুল! সম্প্রতি সহায়ক মূল্যে সরকারের কেনা আলু একসঙ্গে এক সপ্তাহের মজুদ পৌঁছে গিয়েছে জেলার বিভিন্ন স্কুলে। কোথাও কোথাও আবার প্রথম সপ্তাহ শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় সপ্তাহের মজুদও এসে গিয়েছে। আর একসঙ্গে ওই বিপুল পরিমাণ আলু নিয়েই কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে স্কুল কর্তৃপক্ষের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৪
Share: Save:

মিড-ডে মিলের আলু পেয়ে নাজেহাল জেলার স্কুল!

সম্প্রতি সহায়ক মূল্যে সরকারের কেনা আলু একসঙ্গে এক সপ্তাহের মজুদ পৌঁছে গিয়েছে জেলার বিভিন্ন স্কুলে। কোথাও কোথাও আবার প্রথম সপ্তাহ শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় সপ্তাহের মজুদও এসে গিয়েছে। আর একসঙ্গে ওই বিপুল পরিমাণ আলু নিয়েই কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে স্কুল কর্তৃপক্ষের। এক দিকে, আলু সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বলে দাবি বেশ কিছু স্কুলের। আবার পচা আলু ঝাড়াই-বাছাইয়ের জন্য নানা রকম পন্থা অবলম্বন করছেন কেউ কেউ। কোথাও কোথাও পড়ুয়াদের দিয়েই (বিশেষত যে সব স্কুলে ছাত্রাবাস রয়েছে) আলু বাছানোর কাজকর্ম হচ্ছে বলেও অভিযোগ। আবার কোথাও বা আলু বাছতে গিয়ে মিড-ডে মিল রান্নার কর্মীদের অনেক সময় অপচয়ও হচ্ছে। তার জেরে জোড়াতালি দিয়ে মিড-ডে মিল রান্না চলছে বলে স্বীকার করছেন, ওই সব বিদ্যালয়ের কর্মীরাই। দিনের শেষে আলু-সঙ্কট মেটাতে গিয়ে রাজ্য সরকারের নয়া উদ্যোগ, স্কুলগুলিকেই নতুন সঙ্কটে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠছে। আর এ ব্যাপারে পরিকল্পনার অভাবকেই দুষছে বিভিন্ন মহল।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতিটি স্কুলে দুই সপ্তাহের জন্য মিড-ডে মিলে প্রয়োজনীয় আলু সহায়ক মূল্যে সরবরাহ করবে রাজ্য সরকার। সেই মতো দিন দশেক আগে ময়ূরেশ্বরের রাধানগর হাইস্কুলে পৌঁছয় ৩ কুইন্ট্যাল ৮৮ কিলোগ্রাম আলু। পাঁচ শতাধিক পড়ুয়া মিড-ডে মিল খায় ওই স্কুলে। বুধবার ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, মিড-ডে মিল রান্নার আগে প্যাকেট ভর্তি আলু মেঝেতে ফেলে ঝাড়াই বাছাই করছেন রান্নার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সব কর্মীরা বলেন, ‘‘আলু ঝাড়াই বাছাই করতে গিয়ে বেশ কিছুটা সময় চলে যাচ্ছে। তাই তাড়াহুড়ো করে মিড-ডে মিলের রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে।’’ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানিকচন্দ্র মণ্ডল জানান, বাড়ি তৈরির সামগ্রী রাখার গুদাম ঘরে আলু রাখতে হয়েছে। কিন্তু সেখানে পাখার ব্যবস্থা না থাকায় আলুর পচন ঠেকানো যাচ্ছে না। একই পরিস্থিতি মাড়গ্রামের সাহাপুর উচ্চ বিদ্যালয়েরও। ওই স্কুলে মিড-ডে মিল খায় প্রায় সাড়ে তিনশো থেকে চারশো পড়ুয়া। দিন পনেরো আগে তাদের জন্য পৌঁছেছে ৬ কুইন্ট্যাল আলু। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক অধীরকুমার দাস জানান, ওই পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে সারা ক্ষণ পাখা চালাতে হচ্ছে। এর ফলে স্কুলের বিদ্যুৎ খরচ বাড়ছে। এক সপ্তাহের আলু দু’দফায় দিলে এই সমস্যা হত না বলেই তাঁর দাবি। একই মত, খয়রাশোলের লোকপুর উচ্চ বিদ্যাল্যের প্রধান শিক্ষক মিহির সামন্তেরও। ওই স্কুলে ইতিমধ্যেই সাতশো পড়ুয়ার মিড-ডে মিলের জন্য দু’সপ্তাহের আঠারো প্যাকেট আলু এসেছে। মিহিরবাবু জানান, বিদ্যুৎ পুড়িয়ে সারাক্ষণ পাখা চালিয়েও আলুর পচন রক্ষা যাচ্ছে না। সেখানে প্রতি দিনই মিড-ডে মিলের কর্মীদের দিয়ে আলু বাছিয়ে ফেলে দিতে হচ্ছে।

এ দিকে, স্বাদ বৈচিত্র্যেও প্রভাব ফেলেছে সহায়ক মূল্যের আলু। দ্রুত পচন ঠেকাতে, দ্রুত কাজে লাগানোর জন্য সব মেনুতেই আলু ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। লাভপুরের একটি স্কুলের মিড-ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বলছেন, ‘‘এমনিতেই ছাত্রেরা মিড-ডে মিল খেতে চায় না। নানা রকম স্বাদ-বৈচিত্র্যের ব্যবস্থা করে তাদের কার্যত ধরেবেধে খাওয়াতে হয়। কিন্তু, প্রশাসনের দেওয়া আলু কাজে লাগাতেই আমাদের প্রতি দিনই আলুর তরকারি বানাতে হচ্ছে!’’

অন্য দিকে, সহায়ক মূল্যের আলু নিয়েও নানা চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। প্রশাসনেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে স্কুলগুলিতে পৌঁছে দেওয়ার কথা প্রশাসনের। সে ক্ষেত্রে চাষিদের কেজি প্রতি ৫ টাকা ৫০ পয়সা হিসেবে দাম পাওয়ার কথা। কিন্তু, জেলায় চাষিদের কাছে এই সহায়ক মূল্যে আলু কেনার খবর সে ভাবে প্রচারই করা হয়নি বলে অভিযোগ। সিপিএমের কৃষক সভার জেলা সম্পাদক আনন্দ ভট্টাচার্য দাবি করছেন, ‘‘জেলায় কোথাও চাষিদের কাছে আলু কেনা হয়নি। সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কোনও শিবিরও খোলা হয়নি। শাসকদলের নেতা-কর্মীরাই তাদের নিকৃষ্ট মানের আলু স্কুলগুলিতে পৌঁছে দিয়ে সহায়ক মূল্যের মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন।’’ ওই অভিযোগ অবশ্য মানেননি জেলা সভাধিপতি তথা সহায়ক মূল্যে আলু ক্রয় কমিটির সদস্য বিকাশ রায়চৌধুরী। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে পঞ্চায়েত স্তরে চাষিদের কাছে আলু কেনা হয়েছে। প্রকৃত চাষিরাই সহায়ক মূল্যে আলু বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছেন।’’ তবে, জেলা কৃষি বিপণন আধিকারিক আকবর আলির বক্তব্য, ‘‘জেলায় ৭.৭ মেট্রিক টন করে দু’ সপ্তাহের জন্য সহায়ক মূল্যে আলু কেনা হয়েছে। সরাসরি চাষিদের কাছেই আলু কেনার কথা। যদি বেনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই, তা হলে খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE