Advertisement
E-Paper

থেকেও নেই শৌচাগার, ভরসা মাঠই

ছাত্রছাত্রীদের সু-অভ্যাস গড়ে তোলার কথা স্কুলের। সেই স্কুলেই শৌচাগারের অভাব। তাই মাঠেঘাটে যেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া হাই স্কুলে ৯০০ জন ছাত্রীর জন্য রয়েছে মাত্র ২টি শৌচাগার। তার মধ্যেও একটি ব্যবহারের অযোগ্য। বাষট্টিজন শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্য ব্যবহারযোগ্য কোন শৌচাগারই নেই।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:২৭
ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে লোকপাড়া হাইস্কুলে পড়ুয়াদের জন্য নির্দিষ্ট এই শৌচাগার। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে লোকপাড়া হাইস্কুলে পড়ুয়াদের জন্য নির্দিষ্ট এই শৌচাগার। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

ছাত্রছাত্রীদের সু-অভ্যাস গড়ে তোলার কথা স্কুলের। সেই স্কুলেই শৌচাগারের অভাব। তাই মাঠেঘাটে যেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের।

ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া হাই স্কুলে ৯০০ জন ছাত্রীর জন্য রয়েছে মাত্র ২টি শৌচাগার। তার মধ্যেও একটি ব্যবহারের অযোগ্য। বাষট্টিজন শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্য ব্যবহারযোগ্য কোন শৌচাগারই নেই। শিক্ষিকারা প্রয়োজনে লাগোয়া ছাত্রাবাসের শৌচাগার ব্যবহার করেন।

একই পরিস্থিতি লাভপুরের কুরুম্বা মুকুন্দলাল হাইস্কুল, নানুরের ব্রাহ্মণখণ্ড-বাসাপাড়া হাইস্কুলেও। কুরুম্বা হাইস্কুলে ছাত্র সংখ্যা ৫১০, ছাত্রী ৫৪৯ জন। ছাত্রীদের জন্য রয়েছে মাত্র একটি শৌচাগার, ছাত্রদের একমাত্র শৌচাগারটি ব্যবহারের অযোগ্য। ব্রাহ্মণখণ্ড-বাসাপাড়া হাইস্কুলের অবস্থাও তথৈবচ। ৭৪১ জন ছাত্র এবং ৩৭১ জন ছাত্রীর জন্য ওই স্কুলে রয়েছে ১টি করে শৌচাগার। কিন্তু ছাত্রীদের শৌচাগারটি দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। শিক্ষিকাদের একমাত্র শৌচাগারটিও ব্যবহারের অযোগ্য।

ব্রাহ্মণখণ্ড-বাসাপাড়া স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী লালবানু খাতুন, রেকশোনা খাতুন, দশম শ্রেণির ছাত্র বিশ্বজিত ঘোষ, কুরুম্বা হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সোনিয়া খাতুন, শোভা মল্লিক, দ্বাদশ শ্রেণির মহেশ্বর বাগদি, লোকপাড়া হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষা কোলে, একাদশ শ্রেণির ব্রতীন ভট্টাচার্যরা জানায়, বেশির ভাগ সময় শৌচাগারে লাইন পড়ে যায় । তখন বাধ্য হয়ে তাদের বাইরেই যেতে হয় ।

লোকপাড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দে, কুরুম্বা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত পাল, ব্রাম্ভ্রণখণ্ড-বাসাপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীনবন্ধু ঘোষরা ছাত্র-ছাত্রীদের ওই অভিযোগ মেনে নিয়ে জানান, দীর্ঘদিন আগে পঞ্চায়েত সমিতি কিম্বা সর্বশিক্ষা মিশন থেকে যৎসামান্য যা টাকা পাওয়া গিয়েছিল তাতে স্কুলে একটি করেও উন্নতমানের শৌচাগার গড়া যায়নি। স্কুলের নিজস্ব তহবিলের টাকাও লাগাতে হয়েছে। তারপর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন করেও শৌচাগার নির্মাণের জন্য কোন বরাদ্দ মেলেনি। তাই পড়ুয়াদের বাইরে যাওয়া আটকানোর যাচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায় ৯ মাস ধরে স্কুল-কলেজগুলিতে শৌচাগার নির্মাণ বন্ধ। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশই এখনও ‘বাইরে’ যেতে বাধ্য হচ্ছে। তাই প্রকল্পের লক্ষ্য ধরা যাবে না, আশঙ্কা জেলার কর্তাদের। এ দিকে, জেলা সর্ব শিক্ষা মিশনের ওয়েবসাইটেই জানা গিয়েছে, ২০১৫-’১৬ আর্থিক বর্ষে জেলার স্কুলগুলিতে ছাত্রদের জন্য মাত্র ১৩টি শৌচাগার অনুমোদিত হয়। কিন্তু, কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। ছাত্রদের ৩৭৫টি ‘ইউরিনাল’ মঞ্জুর হলেও টাকা মিলেছে মাত্র ৪০টির। মেয়েদের ২৭৬টি ‘ইউরিনালে’র মধ্যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৯টির। স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পর্যাপ্ত শৌচাগারের অভাবে পুরনো অভ্যাসই বজায় থাকছে।

শিক্ষক সংগঠন ডব্লুবিটিএ-র জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা সাহাপুর হাইস্কুলের সহকারী প্রধানশিক্ষক অধীরকুমার দাস বলছেন, ‘‘জেলায় জুনিয়র হাই, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক-সহ সরকার পোষিত ৬৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজারের বেশি। অধিকাংশ স্কুলেই ১-২টির বেশি শৌচাগার নেই। দীর্ঘ দিন বহু স্কুলে শৌচাগার নির্মাণের জন্য কোনও সরকারি অনুদানও মেলেনি।’’

এ দিকে, জেলায় শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌জেলা পরিষদ) বিধান রায় জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি জেলাবাসীকে শৌচকর্মের জন্য ‘মাঠে-ঘাটে’ যাওয়ার অভ্যাস ছাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আগে স্কুল-কলেজে শৌচাগার তৈরি করার টাকা পেত জেলা পরিষদ। এখন ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ প্রকল্পের ওই দায়িত্ব সরাসরি শিক্ষা দফতরকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মহাদেব সোরেন জানান, ‘‘শৌচাগার নির্মাণ সম্পর্কিত নির্দেশিকা বা টাকা আমাদের কাছে এখনও এসে পৌঁছোয়নি।’’

জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক অনিন্দ্য মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রকল্পে আমরাও কোন টাকা পাইনি। তবে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে চলতি বছরে প্রায় ১ কোটি টাকা পেয়েছি। ওই টাকা শৌচাগার নির্মাণের জন্য বিভিন্ন স্কুলকে দিয়েও দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও কোন স্কুল যদি লিখিতভাবে শৌচাগারের দাবি জানায় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

শিক্ষকরা অবশ্য বলছেন, বহু বার দরবার করেও শৌচাগার তৈরির টাকা মিলছে না তাঁদের।

School Lack Arghya Ghosh Mayureswar lokpara
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy