Advertisement
E-Paper

কপ্টার বিভ্রাটে আসতে দেরি, রোড-শো হল না

শতাব্দীকে কটাক্ষ করে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘বীরভূম কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থী, লড়াকু নেতা দুধকুমার মণ্ডল। গরিব মানুষের হয়ে লড়াই করবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০০
গরমে সঙ্গী ঠান্ডা। দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

গরমে সঙ্গী ঠান্ডা। দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

রাজনীতির মাঠে তাঁরা যুযুধান ঠিকই। কিন্তু, মঞ্চটা একই থাকল।

শনিবার সন্ধ্যায় দুবরাজপুরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়েশ্বর শ্মশানকালী মন্দির সংলগ্ন যে মঞ্চে বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেই মঞ্চেই রবিবার বিকালে বক্তব্য রাখলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুধু বদলে গেল দলের পতাকা। তবে সেই মঞ্চ থেকেই নাম না করে শতাব্দী রায় ও তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করলেন দিলীপ। জেলায় নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের সভার আগে রাজনীতির তাপও বাড়িয়ে দিলেন।

শতাব্দীকে কটাক্ষ করে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘বীরভূম কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থী, লড়াকু নেতা দুধকুমার মণ্ডল। গরিব মানুষের হয়ে লড়াই করবেন। শুধু স্নো-পাউডার মেখে আসবেন, আর হাত নাড়িয়ে চলে যাবেন না। এই কড়া রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে আপনাদের সঙ্গে থেকে লড়াই করবেন। রং কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে রোদ্দুর এড়িয়ে যাবেন না!’’ আর শতাব্দীর দলের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘দিদির পুলিশকে বুথের কাছে যেতে দেব না, ভোট লুটের চেষ্টা হলে দিল্লির পুলিশের সঙ্গে থাকবেন বিজেপি কর্মীরা। শুকনো বাঁশের লাঠি তৈরি আছে!’’

যা শুনে শতাব্দী রায় বলছেন, ‘‘এত বাজে কথার কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না। এটুকু বলব, জন্মসূত্রে যা রং পেয়েছি, যিনি কটাক্ষ করছেন, যাঁর জন্য কটাক্ষ করছেন, রোদে পুড়লেও তাঁদের চেয়ে ফর্সাই থাকব!’’

হেলিকপ্টারে রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ কলকাতা থেকে দুবরাজপুর পৌঁছে একটি রোড-শো করার কথা ছিল দিলীপ ঘোষের। রোড-শো শেষে পাহাড়েশ্বরে দলীয় কার্যালয় লাগায়ো মঞ্চে সামান্য বক্তব্য রাখার কর্মসূচি ছিল। এর পরে দুবরাজপুর থেকে বোলপুরে গিয়ে সেখানেও রোড শো করার কর্মসূচি ছিল। কিন্তু হেলিকপ্টার-বিভ্রাটে ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। পাক্কা তিন ঘণ্টা পরে বেলা দুটো নাগাদ দুবরাজপুরে পৌঁছানোয় আর রোড-শো করেননি দিলীপ। বোলপুরে অবশ্য বিকেলে বর্ণাঢ্য রোড-শো হয়। বিকেল সোয়া তিনটে থেকে বোলপুরের কাছারিপট্টি থেকে বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী রামপ্রসাদ দাসের সমর্থনে রোড-শো শুরু করেন রাজ্য সভাপতি। চৌরাস্তা পর্যন্ত একটি পিক-আপ ভ্যানে থাকলেও পরে চৌরাস্তা থেকে সুসজ্জিত হুড খোলা গাড়িতে শহরের একটা বড় অংশে ঘোরেন। চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছিল সেই রোড-শোয়ে।

এর আগে দুবরাজপুরে সারদা ফুটবল মাঠে তৈরি হয়েছিল হেলিপ্যাড। উপস্থিত ছিলেন দমকল ও পুলিশকর্মীরা। ‘ভোট-পাখি’ দেখতে প্রখর রোদের মধ্যেও সকাল ১০টা থেকে ভিড় জমতে শুরু করে। গেরুয়া টুপি, গেরুয়া পাঞ্জাবি, দলীয় পতাকা, মোদী মুখোশ নিয়ে সেই দলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ছিল ছোটরাও। রোড শোয়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সাজানো হুড খোলা জিপ, বাজনা। কিন্তু দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পরে ঘড়ির কাঁটা যখন ১২টা ছুঁয়েছে তখনই উৎকন্ঠা শুরু হয় উপস্থিত ভিড়ের মধ্যে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে আদৌ কি আসবে দিলীপ ঘোষের হেলিকপ্টার? সাড়ে ১২টা নাগাদ ধৈর্য্য হারিয়ে বিজেপি একটি র‌্যালি বের করে। দিলীপ আসবেন কিনা, সেটা স্পষ্ট করে না জানিয়ে দলের নেতারা বলতে থাকেন যান্ত্রিক সমস্যা হয়েছে কপ্টারে। ভিড় ততক্ষণে প্রায় ফাঁকা। শেষে সওয়া ১টা নাগাদ জানা যায় কপ্টার উড়েছে। দুটো নাগাদ দুবরাজপুরে পৌঁছে তাই আর রোড শো করেননি দিলীপ। কিন্তু কর্মীদের আবদার মেনে পাহাড়েশ্বরে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সভায় বক্তব্য রাখেন। সেখানেই তৃণমূল প্রার্থী ও তাঁর দলকে চাঁচাছোলা ভাষায় বেঁধেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। যা বলছেন তাতে চাঙ্গা দলের কর্মী সমর্থকেরা।

ভিড়ের উদ্দেশে দিলীপ বলেন, ‘‘ভোটের দিন সকাল সকাল লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের কার্ড দেখিয়ে ভোট দিন। ভয় পাবেন না। কেউ চোখ দেখালে চোখ দেখান। লাঠি দেখালে লাঠি। আমরা বুঝে নেব, কার কত দম।’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনে সামান্য কিছু এলাকা বাদ দিলে বীরভূমে কার্যত ভোটই হয়নি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে গা জোয়ারি করে বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘এটা পঞ্চায়েত নয়, লোকসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে দিদির পুলিশ নয়, থাকবে দাদার পুলিশ। গ্রামে গ্রামে মানুষকে বলুন কোনও ভয় নেই। দিল্লির পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীরা রয়েছেন। কেউ ভোট লুটের চেষ্টা করলে তাকে বলুন পিঠে সর্ষের তেল মেখে আসতে। হাসপাতালের সিট বুক করে আসতে। লাঠি তৈরি আছে।’’

দিলীপর এই হুঙ্কারের তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা বীরভূম তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম। মুরারইয়ে একটি জনসভা শেষে ফিরহাদ বলেন, ‘‘দিদির পুলিশ, দাদার পুলিশ আবার কী? ওঁর কথা শুনে মনে হচ্ছে আখড়া থেকে পালোয়ান এসেছেন লড়াই করতে! আসলে দিলীপ ঘোষের মতো মানুষে ভদ্র সমাজে থাকার যোগ্য নন! আমরা হিংসায় বিশ্বাসী নই। মানুষের পাশে থাকি। হাত জোর করে মানুষকে বলছি ভোট দিতে।’’

Lok Sabha Election 2019 Dilip Ghosh Satabdi Roy TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy