Advertisement
E-Paper

বুথ থেকে বেরোতেই গরম চপ, মুড়ি, মাংস, বাতাসা

কাদের জন্য এত আয়োজন? গণেশ বাবু বলেন, ‘‘কেন! ভোটারদের জন্য! ভোট দিয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে সবাই বাড়ি যাবেন।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০১:১১
আয়োজন: বড়জোড়ার বিষণপুরে চলছে রান্না। নিজস্ব চিত্র

আয়োজন: বড়জোড়ার বিষণপুরে চলছে রান্না। নিজস্ব চিত্র

কোথাও পাত পেড়ে মাংস-ভাত, কোথাও গরম গরম চপ, কোথাও আবার জলখাবারের ছোলা, মুড়ি, শসা। ভোট উৎসবে বিভিন্ন উপায়ে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার মানুষের উদরতৃপ্তির দায়িত্ব সারলে বিভিন্ন দল। সঙ্গে রোদে পুড়ে আসা ভোটারদের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য থাকল গ্লুকোজের জল এবং শরবত।

বড়জোড়া বিধানসভার বিষণপুর প্রাথমিক স্কুলের ৫২৯ নম্বর বুথের ভোটারের সংখ্যা ১০২০। বুথ থেকে বেশ কিছুটা দূরে গাছতলায় সকাল সকালই শুরু হয়ে গিয়েছিল রান্নার আয়োজন। এক দিকে চলছে আনাজ কাটা, অন্য দিকে বানা বাটা। তদারকির দায়িত্বে ছিলেন এলাকার তৃণমূল কর্মী গণেশ ঘোষ, পরেশ ডাঙর, সারদা ডাঙরেরা। সকাল ১১ টার মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় ভাত, ডাল, কুমড়োর তরকারি, আমের চাটনি। বড় কড়াইয়ে শোভা পায় কষা মাংস।

কাদের জন্য এত আয়োজন? গণেশ বাবু বলেন, ‘‘কেন! ভোটারদের জন্য! ভোট দিয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে সবাই বাড়ি যাবেন।’’ তিনিই জানান, ভোটারদের জন্য সকালে জলখাবারে রাখা হয়েছিল মুড়ি, ঘুগনি, শসা। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট আমাদের গ্রামে একটা উৎসবের মতো। যে যাঁকে খুশি ভোট দিতে পারেন। তাতে তো উৎসব উদ্‌যাপন আটকায় না!’’ কিন্তু, খরচ কোথা থেকে আসে? তাঁদের ছোট্ট উত্তর, ‘‘সেসব পার্টি জানে।’’ কিন্তু এ ভাবে ভোটারদের খাওয়ানো তো বেআইনি? তৃণমূলের হাট আশুরিয়া অঞ্চল সভাপতি বুধন ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা কাউকে প্রভাবিত করি না। কে কাকে ভোট দেবেন সেটা তাঁদের বিষয়।’’

ভোটের রবিবারে এমন খুচরো ছবি দেখা গেল পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার বেশির ভাগ বুথে। মূলত তৃণমূলের তরফে ভোটারদের জলখাবারের আয়োজন করা হলেও জায়াগায় জায়গায় বিজেপি এবং বামফ্রন্টের তরফেও মুড়ি-ছোলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যেমন, বরাবাজারের সিন্দরিতে ভোটারদের নামে নামে প্যাকেট ভর্তি করে দেওয়া হল গরম গরম চপ। বুথ থেকে বেশ কিছুটা দূরে প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে চপ ভাজছিলেন হেমাংশু মাহাতো। কড়াই থেকে গরম গরম চপ তুলে ভোটারের নাম লেখা প্যাকেটে পুড়ে তা তুলে দিচ্ছিলেন নির্দিষ্ট ভোটারের হাতে। তার পর লিখে রাখছিলেন পাশে রাখা খাতায়। কোন দলের তরফে এই বরাত? প্রশ্ন করলে হেমাংশু বাবু বলেন, ‘‘এই বরাত তৃণমূল দিয়েছে।’’ কিন্তু এ ভাবে কি ভোটারদের খাবার দেওয়া উচিত? তিনি বলেন, ‘‘এতসব জানি না। আমি বরাত না নিলে অন্য কেউ নিত। ভোটের মুখে আমার তবু একটু রোজগার হয়। এই আর কী!’’ চপ পেয়ে অবশ্য বেশ খুশি ইন্দুমতী মাহাতো, আহ্লাদি মাহাতোরা। ইন্দুমতী বলেন, ‘‘এটা তো কোনও ঘুষ নয়! সব দলই করে। ভোটে খাওয়া দাওয়া হোক না! ভালই তো!’’

প্রায় সাত কিলোমিটার দূর পুরুলিয়ার খড়বন থেকে কুচিয়া হাইস্কুলে ভোট দিতে এসেছিলেন লগনি মুর্মু, শম্বরী মাণ্ডি, বিমলা মাণ্ডিরা। ভোট দিয়ে ফেরার পথে তাঁদের হাতে দেখা গেল মুড়ি-ছোলার প্যাকেট। ভোটকেন্দ্র থেকে খানিক দূরে তৃণমূল, বিজেপি এবং বামফ্রন্টের তরফে ভোটারদের জন্য মুড়ি আর ছোলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাস্তার পাশে রাখা টেবিলের উপর ডাঁই করে রাখা ছিল মুড়ির প্যাকেট। স্থানীয় এক সিপিএম কর্মী জানান, অনেকেই এখানে অনেক দূর থেকে ভোট দিতে আসেন। তাই এই সামান্য মুড়ি ছোলার ব্যবস্থা।

তিন হাজার টাকার ছোলা কেনা হয়েছিল সুপুরডির বিজেপি কর্মীদের তরফে। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সব ছোলা শেষ। পড়ে ছিল মুড়ি আর চানাচুর। তা-ই ফিরতি পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভোটাররা। বিকেলে আড়াইশো চপের বরাত দেওয়া হয়েছে কাছের তেলেভেজার দোকানে। বিজেপি কর্মীরা জানালেন, তখন আরেক দফা খাওয়া দাওয়া হবে। তাঁদের দাবি, ভোটারদের জন্য আলাদা কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। কর্মী, ভোটার, আশপাশের মানুষ সবাই এক সঙ্গেই খাওয়া দাওয়া করছে।

তবে শুধু মুড়ি-ছোলাই নয়! কড়া রোদে আসা ভোটারদের জন্য শরবত, গ্লুকোজ জলের ব্যবস্থাও করেছে কোনও কোনও দল। ইন্দাসের আকুইয়ের তৃণমূলের উপপ্রধান দীনবন্ধু নন্দীর নেতৃত্বে গ্লুকোজ জল খাওয়ানো হয়েছে ভোটারদের। সুপুরডিতে ভোটারদের শরবত খাইয়েছে সিপিএম। বিষ্ণুপুর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মী এবং ভোটারদের জন্য ইলেক্ট্রলের জলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সঙ্গে অবশ্য গুড়-বাতাসাও বাদ যায়নি।

Lok Sabha Election 2019 Election 2019 Phase 6 Potato Fritters TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy