Advertisement
E-Paper

সাক্ষ্য বদল হলেও সাজা যাবজ্জীবন

সাক্ষ্য বদল করার জন্য নাবালিকার বাবা-মা এবং এক সাধুকে শো-কজ করারও নির্দেশ দেন বিচারক। অমিয়বাবু বলেন, ‘‘ওঁরা যে কারণ দেখাবেন, তাতে বিচারক সন্তুষ্ট না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সাক্ষ্য বদল করে দিয়েছিলেন বাবা-মা। এমনকী নির্যাতিতা নাবালিকা নিজেও। তার পরেও এড়ানো গেল না সাজা। বাঁকুড়ার এক নাবালিকাকে লাগাতার ধর্ষণ এবং অশ্লীল ছবি তোলার দায়ে প্রাক্তন সাধুর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করল বাঁকুড়া আদালত। সোমবার অভিযুক্ত স্নেহাশিস চৌধুরীকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক (২) ধরণী অধিকারীর বিশেষ পকসো (প্রোটেকশন অফ চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আদালতে। স্নেহাশিস বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা। অবশ্য গোটা ঘটনায় পুলিশের তদন্ত নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারক।

সরকার পক্ষের আইনজীবী অমিয় চক্রবর্তী জানান, ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর স্নেহাশিসের বিরুদ্ধে ওই নাবালিকার পরিবার বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ওই নাবালিকা একটি ধর্মীয় সংগঠনের কোচিং সেন্টারে পড়তে যেত। সেই সময়ে স্নেহাশিস তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। এমনকী, স্নেহাশিস মোবাইলে সেই ছবিও তুলে রেখেছিল। কাউকে জানালে সেগুলি ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছিল নাবালিকাকে। কোনও ভাবে ওই ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। ওই নাবালিকা অভিভাবকদের সব জানায়। পরিবারের লোকজন তার পরেই থানায় যান।

অভিযোগের ভিত্তিতে পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয় ওই নাবালিকা। ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পান সদর থানার আইসি রাজর্ষি দত্ত। উদ্ধার করা হয় অশ্লীল ছবিগুলি। অভিযোগ পাওয়ার দিনই পুলিশ মেমারির বাড়ি থেকে স্নেহাশিসকে গ্রেফতার করে। ঘটনার এক মাসের মধ্যেই, ১৯ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে বাঁকুড়া আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। অভিযুক্ত জামিন পাননি। ওই ধর্মীয় সংগঠনও ঘটনার পরেই তাকে বহিষ্কার করে।

অমিয়বাবু জানান, মাঝখানে ওই নাবালিকার পরিবার আদালতে সাক্ষ্য বদল করেছিল। ওই নাবালিকা এবং তার বাবা-মা বিচারকের কাছে দাবি করেন, ওই ছবিগুলি জাল। কারিকুরি করে তৈরি। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দি, ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট ও আনুষঙ্গিক তথ্য-প্রমাণের উপরে ভিত্তি করে স্নেহাশিসকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছর কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পকসো আইনে অতিরিক্ত নগদ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে স্নেহাশিসের। সেই জরিমানার অনাদায়ে আরও ১ বছর কারাদণ্ড হবে তার।

সাক্ষ্য বদল করার জন্য নাবালিকার বাবা-মা এবং এক সাধুকে শো-কজ করারও নির্দেশ দেন বিচারক। অমিয়বাবু বলেন, ‘‘ওঁরা যে কারণ দেখাবেন, তাতে বিচারক সন্তুষ্ট না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।’’

এই মামলায় তদন্তকারী আধিকারিককে বিচারক ভর্ৎসনা করেছেন বলে জানিয়েছেন অমিয়বাবু। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারকে ওই তদন্তকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের কোথায় গাফিলতি হয়েছে বলে মনে করেছেন বিচারক? অমিয়বাবু জানান, যে অশ্লীল ছবি পুলিশের হাতে এসেছিল, সেগুলি কার মোবাইল থেকে পাওয়া গিয়েছে তা উল্লেখ করেননি তদন্তকারী আধিকারিক। ছবিগুলি যাঁর কাছ থেকে পুলিশ পায়, তাকে কেন সাক্ষী করা হল না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। অভিযুক্ত স্নেহাশিসের মোবাইল বাঁকুড়া পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। জিজ্ঞাসাবাদে স্নেহাশিস পুলিশকে জানিয়েছিল, সে মোবাইলটি ছুঁড়ে ভেঙে দিয়েছে। সেই ভাঙা মোবাইল উদ্ধারেও কেন সচেষ্ট হয়নি পুলিশ, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

life in prison Arrest Rape Bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy