শিল্পী: সাঁইথিয়ায় শিল্পীরা কাজ করছেন সুভাষ গোষ্ঠীর সম্প্রীতির দুর্গা। নিজস্ব চিত্র
এক দিকে বাংলাদেশ। অন্য প্রান্তে পাকিস্থান। তার মাঝে ভারত। তিনটি দেশকে এক সূত্রে বাঁধতে এ বার অভিনব থিম-পুজোর আয়োজন করেছে সাঁইথিয়ার নেতাজি পল্লি জয়তু সুভাষ গোষ্ঠী।
এ বার ৩০ তম বর্ষে পা রেখেছে সর্বজনীন ওই দুর্গোৎসব। প্রতি বছর তাঁদের নিত্য নতুন থিম নজর কাড়ে। এ বারে তাদের থিম ৫১ পীঠের সমাবেশে ৫২ হাতের দেবী প্রতিমা।
পুরাণ মতে, দক্ষরাজের যজ্ঞসভায় পতি-নিন্দা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু বরণ করেন সতী, দেবী দুর্গা। শিব সেই সংবাদ পেয়ে দক্ষযজ্ঞ পণ্ড করে পত্নীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করেন।
সৃষ্টি রসাতলে যায় দেখে, বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেন। ৫১টি স্থানে দেবীর সেই দেহাংশ পড়ে। পরে ওই সব জায়গায় গড়ে ওঠে এক একটি সতীপীঠ। ভারত তো বটেই, আরও কিছু দেশে রয়েছে ওই রকম সতীপীঠ। বীরভূমেই রয়েছে পাঁচটি পীঠ।
পাকিস্থানের হিংগুলা তথা হিংলাজে পড়েছিল দেবীর মহা ব্রম্ভ্ররন্ধ্র। তাই সেখানে গড়ে ওঠে দেবীপীঠ কোট্টরী। বাংলাদেশের যশোরে পড়েছিল উপঃ পাণিপদ্ম। সেখানে গড়ে ওঠে যশোরেশ্বরী। পীঠস্থান রয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল-সহ আরও কিছু দেশে। এ বার সমস্ত পীঠস্থানের দেখা মিলবে সাঁইথিয়ার ওই পুজো মণ্ডপে।
টানা তিন মাস ধরে মাটি এবং থার্মোকল দিয়ে ওই সব পীঠস্থানের দেবী মূর্তি নির্মাণ করে চলেছেন বিশ্বভারতী কলাভবনের প্রাক্তনীরা। তাঁদেরই অন্যতম পীযূষ মণ্ডল, রাখহরি বাগদিরা জানান, মূর্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের নিজস্ব শিল্পরীতিকে অবিকৃত রাখা হচ্ছে। ৫২ হাতের প্রতিমা নির্মাণ করছেন জয়দেব সূত্রধর।
তিনি বলেন, ‘‘৫১ পীঠের ভাবনা থেকেই দেবীর অতিরিক্ত হাত নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু ৫১ হাত মানান সই নয়, তার উপরে কোথাও কোথাও ৫২ পীঠেরও উল্লেখ রয়েছে। তাই দেবীর ৫২টি হাত নির্মাণ করা হচ্ছে।’’
পুজো ঘিরে এলাকায় উৎসাহের অন্ত নেই। বিশেষ করে প্রবীণেরা মহাখুশি। ৮০ বছরের জগন্নাথ ভট্টাচার্য, ৭৭ বছরের আরতি সাহারা বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৫১ পীঠের কথা বইয়ে পড়েছি। এ বার পুজো মণ্ডপে একসঙ্গে ওই সব পীঠের দর্শন তো উপরি পাওনা।’’
পিছিয়ে নেই ছোটরাও। নবম শ্রেণির পৌরবী দাস, সপ্তম শ্রেণির তীর্থ সরকার জানায়, বাইরে থাকা দাদা-দিদিদের এ বারে পুজোয় আসতেই হবে। না হলে কিন্তু আফশোস করতে হবে।
পুজো কমিটির সভাপতি নিখিলেশ মণ্ডল এবং সম্পাদক দেবাশিস সাহা জানান, দেশের পররাষ্ট্র নীতির একটি দিক হল সৌভ্রাতৃত্ব বোধ। সেই ভাবনারই প্রতিফলন ঘটাতেই এই পরিকল্পনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy