পাঁচড়া উচ্চবিদ্যালয়।
‘চল দেখা করি’, স্কুলের দুই প্রাক্তনীর ফেসবুক-কথায় উঠে এসেছিল এমন ইচ্ছের কথা। সেই শুরু। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে পাঁচশোরও বেশি প্রাক্তনীর পুনর্মিলন যেন উৎসবে পরিণত হল। শনিবার এত প্রাক্তনীর একত্রিত হওয়ায় আবেগঘন নানা মুহূর্তের সাক্ষী থাকল খয়রাশোলের পাঁচড়া উচ্চবিদ্যালয়।
দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ পত্রিকার প্রকাশ, খাওয়া-দাওয়া, সর্বোপরি নিজেদের অতীত ফিরে দেখায় বুঁদ হয়ে ছিলেন নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রাক্তনীরা। শুধু প্রাক্তনীরা নন, পুনর্মিলন উৎসব ঘিরে মাতলেন স্কুলের প্রাক্তন, বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা। মঞ্চে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়। অতিথি হিসেবে উপস্থিত প্রাক্তন বহু শিক্ষক, শিক্ষিকা। ছিলেন খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল গায়েনও।
১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় খয়রাশোলের পাঁচড়া উচ্চ বিদ্যালয়। এলাকার অন্যতম সেরা স্কুল এটি। বহু কৃতী পড়ুয়া ছড়িয়ে রয়েছে দেশ, বিদেশের নানা প্রান্তে। সুবর্ণজয়ন্তী পালন হয়েছে এক যুগের বেশি আগে। পুনর্মিলনও হয়েছিল সে সময়। কিন্তু, স্কুলের কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া এ ভাবে এত সংখ্যক প্রাক্তনীকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া পাশাপাশি অনুঘটকের কাজটি করেছেন দুই প্রাক্তনী বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও মিতা চক্রবর্তী। কলকাতায় একটি বাণিজ্যিক সংস্থার গুরুত্বপূ্র্ণ পদে রয়েছেন বিদ্যুৎবাবু। তাঁর সঙ্গেই ফেসবুকে যোগাযোগ হয় স্কুলের পাঁচ বছরের সিনিয়র দিদি মিতা চক্রবর্তীর সঙ্গে। মিতাদেবী আসানসোলের এক সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স। বিদ্যুৎবাবু বলছেন, ‘‘এক দিন দু’জনের কথাবার্তা চলতে চলতেই দিদি স্কুলে দেখা করার কথা বলেন। ব্যাস, এই একটা কথা থেকেই শুধু আমাদের দু’জনের নয়। আস্ত একটা পুনর্মিলনের নকশা তৈরি হয়ে যায়।’’
দ্রুত ফেসবুক পেজ তৈরি করে স্কুলের সূচনা-লগ্ন থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রাক্তনীদের যুক্ত করা শুরু হয়। একাধিক হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ তৈরি এবং সেই বার্তা ছড়িয়ে দিতে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তাও শুরু হয়। মিতাদেবী বলছেন, ‘‘এত দ্রুত এতটা সাড়া পাব ভাবিনি। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ৭৮৩ জন প্রাক্তনী রেজিস্ট্রেশন করেন। হাত বাড়িয়ে দেন বর্তমান শিক্ষকেরাও।’’ স্কুলের একদা সেরা ছাত্রী মিতাদেবী বলছেন, ‘‘এত দাদা-দিদি, ভাই-বোন, বন্ধুদের একসঙ্গে পাওয়া অন্য রকম অনুভূতি।’’ ধানবাদ থেকে পুনর্মিলন উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৯০ সালের উচ্চমাধ্যমিক ব্যাচের আনন্দ খয়রা নামে আর এক প্রাক্তনী। তিনি বলছেন, ‘‘যেন হারানো অতীত চোখের সামনে ফুটে উঠছে।’’ দুবাই থেকে স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সৈয়দ আলি। তিনিও আপ্লুত। শেকড়ের টানে কলকাতা থেকে ছুটে এসেছেন ১৯৯২-এর ব্যাচ নিবেদিতা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘ছোটবেলায় নতুন পোশাক পরে পুজো মণ্ডপে যাওয়ার যেমন অনুভূতি, আজ বহু বছর পর তেমনই মনে হচ্ছে।’
স্কুলের টিআইসি অরূপ চক্রবর্তী, শিক্ষক কল্যাণ দে, হাবিবুর রহমানরা বলছেন, ‘‘একটি স্কুলের সম্পদ পড়ুয়ারাই। আজ দেখলাম, কোথায় কোথায় পৌঁছে গিয়েছেন প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা। এমন অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকতে পেরে গর্বিত। নিজেদের পেশার জন্যেও গর্বিত।’’ প্রাক্তনীরা বলছেন, চলতি মাসের ৮ তারিখে কী ভাবে অনুষ্ঠান হবে, কোথায় মণ্ডপ, খাওয়া-দেওয়ার মেনু থেকে অতিথিদের আপ্যায়নের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। ফেস্টুন ছাপিয়ে চারদিকে লাগানো হয়। দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া হয়। সবার সেই চেষ্টা ও ভাবনা পূর্ণতা
পেল শনিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy