Advertisement
E-Paper

ছেলে খুনে সাজা মা ও প্রেমিকের

সরকার পক্ষের আইনজীবী অরুণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিহতের মা ঋতুপর্ণা ওরফে বসমাতা বাউরি ও তার প্রেমিক উত্তম বাউরিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪০
উত্তম বাউরি এবং ঋতুপর্ণা বাউরি।

উত্তম বাউরি এবং ঋতুপর্ণা বাউরি।

মায়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল ছেলে। তাই বাধা সরাতে কিশোর ছেলের গলায় কাটারির কোপ মেরে খুন করেছিল প্রেমিক। গঙ্গাজলঘাটির বড়জুড়ি গ্রামের এই ঘটনার ১১ মাসের মধ্যে নিহত কিশোরের মা ও তার প্রেমিককের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা হল। বুধবার এই রায় দিলেন বাঁকুড়া জেলা দায়রা বিচারক খেসাং দুমা ভুটিয়া।

সরকার পক্ষের আইনজীবী অরুণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিহতের মা ঋতুপর্ণা ওরফে বসমাতা বাউরি ও তার প্রেমিক উত্তম বাউরিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”

২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে খুন হয় গঙ্গাজলঘাটির বড়জুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বিকাশ বাউরি (১৪)। পরেরদিন সকালে বিকাশের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরের একটি পুকুর পাড়ে।

সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, বিকাশের মা ঋতুপর্ণার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক ছিল বড়জুড়ি সংলগ্ন ভিড়িঙ্গি এলাকার বাসিন্দা উত্তম বাউরির। এ নিয়ে বসমাতার পরিবারেও নানা অশান্তি লেগে ছিল।

ঘটনার দিন বিকাশের বাবা অজিত বাউরি স্থানীয় পিড়রাবনীর শিব গাজনে ভোক্তা হয়ে গাজনে গিয়েছিলেন। বিকাশের ছোট ভাই কিষাণ গিয়েছিল বড়জুড়ির বনপাড়ায় জেঠুর বাড়িতে। সেই রাতে বাড়িতে ছিল ঋতুপর্ণা, তার শাশুড়ি যামিনী, ছেলে বিকাশ ও দেওয়ের ছেলে বছর দশেকের গৌরাঙ্গ।

যামিনীদেবী ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে উত্তম তাদের বাড়িতে আসে। সেই সময়ে বিকাশ ও গৌরাঙ্গ মোবাইলে ভিডিও দেখছিল। সরকার পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিকাশের খুড়তুতো ভাই গৌরাঙ্গ জানায়, উত্তমের সঙ্গে নিজের মায়ের মেলামেশা মেনে নিতে পারছিল না বিকাশ। ওই রাতে উত্তম ও বসমাতা এক সঙ্গে মদ্যপান করে মেলামেশা করতে থাকে। ঠাকুমা যামিনীদেবী তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। চোখের সামনে এই ঘটনা দেখে বিকাশ প্রতিবাদ করে।

তা নিয়ে বিকাশ ও উত্তমের মধ্যে বচসা বেধে যায়। উত্তম বিকাশকে থাপ্পড় মারে। পাল্টা মারে বিকাশও। রেগে গিয়ে হাতের সামনে থাকা কাটারি হাতে তুলে নিয়ে বিকাশকে মারতে উদ্যত হয় উত্তম। প্রথমে বিকাশ হাত দিয়ে সেই কাটারি আটকাতে যায়। তাতে বিকাশের হাতে কাটারির কোপ পড়ে। ভয় পেয়ে বিকাশ দৌড়ে পালাতে যায়। তবে উত্তমের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেনি সে। উত্তম বিকাশকে ধরে গলায় কাটারির কোপ বসিয়ে দেয়।

এর পরে ঋতুপর্ণা ও উত্তম বিকাশের দেহ টেনে নিয়ে গিয়ে বাড়ির অদূরে পুকুর পাড়ের ঝোপে ফেলে চম্পট দেয়। চোখের সামনে দাদাকে খুন হতে দেখে গৌরাঙ্গ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। রাতভর গ্রামের জঙ্গল ও পাথর ভাঙার ক্রাসার মেশিনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে সে। ভোরে গ্রামবাসীদের খবর দেয় গৌরাঙ্গ।

বিকাশের দেহ উদ্ধার হয় ১৩ এপ্রিল। ওই দিনই বিকাশের বাবা অজিতবাবু গঙ্গাজলঘাটি থানায় ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন স্ত্রী ও তার প্রেমিক বিরুদ্ধে। অভিযোগ পাওয়ার দু’দিনের মাথায় ১৫ এপ্রিল দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রথম থেকেই বসমাতা ও উত্তম বিচারাধীন বন্দি ছিল। ঘটনার তিন মাসের মধ্যেই ৪ জুলাই চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

নিজের ছেলেদের অত্যন্ত স্নেহ করত ঋতুপর্ণা। পাড়ার ছেলেপুলেদেরও খাওয়াতে ভালবাসত সে। তাই ঋতুপর্ণাকে ছেলের খুনের ঘটনায় জড়িত থাকতে দেখে সে দিন তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। এ দিনের রায়ে খুশি হয়েছেন বলেই তাঁরা জানিয়েছেন।

কী ঘটেছিল?

• ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে গঙ্গাজলঘাটির কিশোর বিকাশ বাউরি খুন হয়।
• বিকাশের মা ঋতুপর্ণার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল উত্তম বাউরির। পরিবারে অশান্তি চলছিল।
• ঘটনার দিন বিকাশের বাবা ভোক্তা হয়ে গাজনে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ছিল ঋতুপর্ণা, তার শাশুড়ি, দেওরের বছর দশেকের ছেলে গৌরাঙ্গ আর বিকাশ।

• রাতে বাড়িতে আসে উত্তম। মায়ের সঙ্গে মদ খেয়ে তাকে ঘনিষ্ঠতা দেখে বাধা দেয় বিকাশ।

• বিকাশের গলায় কাটারির কোপ বসায় উত্তম। দু’জনে মিলে দেহ নিয়ে পুকুরের পাড়ে ফেলে।

• চোখের সামনে বিকাশকে খুন হতে দেখে গৌরাঙ্গ গ্রামের জঙ্গলে গিয়ে লুকিয়েছিল। সকালে সবাইকে খবর দেয়।

punishment Murder Life imprisonment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy