ঘটনার পাঁচ দিন পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন সিউড়িতে কলেজ ছাত্রী খুনে মূল অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম ওরফে লাকি। বুধবার আত্মসমর্পণ করার পরে সিউড়ির মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় অভিযুক্তকে ১৪ দিন জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার ভর সন্ধ্যায় দিদি শাবানার সঙ্গে স্কুটি চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন কুসুম খাতুন নামে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। চলন্ত অবস্থায় প্রকাশ্য রাস্তায় দুষ্কৃতীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন সিউড়ির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরপাড়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রী। বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে সিউড়ি–সাঁইথিয়া বাইপাস রাস্তায় চালকলের গলির সামনে ঘটনাটি ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ওই ছাত্রীকে। কিন্তু, পরের দিনই লড়াই শেষ হয়ে যায় কুসুমের।
ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন কুসুমের জামাইবাবু নজরুল। নিহত ছাত্রীর পরিবারের দাবি ছিল, মেয়ে শাবানার সঙ্গে জামাইয়ের বনিবনা হচ্ছিল না। সেই কারণে শাবানাকেই খুনের ছক কষেছিল নজরুল। কিন্তু, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি লাগে কুসুমের শরীরে। বোনের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় ওই দিন রাতেই সিউড়ি থানায় স্বামী এবং এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শাবানা। শাবানা দাবি করেছিলেন, তিনিই স্কুটি চালাচ্ছিলেন। পিছনে বসেছিলেন কুসুম। হঠাৎ-ই তিনি টায়ার ফেটে যাওয়ার মতো শব্দ শুনতে পান। দেখেন বোন ছিটকে পড়েছে স্কুটি থেকে। তাঁর আরও দাবি, ‘‘তখনই দেখি বাইকটি আমার পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। পিছনে আমার স্বামীর হাতে পিস্তল। বাইকটি আর এক জন চালাচ্ছে। বোনের মাথা ফুঁড়ে দিয়েছে গুলি।’’
এ দিকে, ঘটনার দিন ও পরের দিন অভিযুক্তের বাবা (শ্বশুর) ফোনে তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন বলে দাবি করে সিউড়ি থানায় মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন শাবানা। তাঁর দাবি ছিল, নজরুল না ধরা পড়লে তাঁরও প্রাণ সংশয় রয়েছে। কিন্তু, অভিযুক্তের সন্ধান পায়নি পুলিশ। এ দিন আদালতে নজরুল আত্মসমর্পণ করায় কিছুটা আশ্বস্ত শাবানা। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবেই হোক আইনের চৌহদ্দির মধ্যে যখন সে এসেছে, নিশ্চয়ই বিচার পাব।’’
যদিও গুলি চালিয়ে তাঁর শ্যালিকা কুসুমকে খুন করার কথা অস্বীকার করেছেন নজরুল। তিনি আদালত থেকে জেল যাওয়ার পথে দাবি করেন, ‘‘আমি খুন করিনি। আমাকে মিথ্যে ফাঁসানো হয়েছে।’’ অভিযুক্তের পরিবার থেকেও শাবানার দাবি নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রথমত, সাবানাই যদি খুনের টার্গেট হয়ে থাকেন, তা হলে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পরে দুষ্কৃতীরা তাঁকে কেন ছেড়ে দিল। দ্বিতীয়ত, যদি অভিযুক্তকে তিনি চিনে ফেলেই থাকেন, তা হলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকলেও দুষ্কৃতীরা কেন শাবানাকে ছেড়ে দিল। আপাতত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্তকারীরা। খুনের তদন্তে সব রকমের সম্ভাবনাই তারা খুলে রেখেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy