Advertisement
E-Paper

নিয়মের গেরো, মুসকানের তিন রাত হোমে

কাছেই বাড়ি। কিন্তু সেখানে ফিরতেই কেটে গেল তিন-তিনটে রাত! এক হোম থেকে ছাড়া পেয়েও ১৩ বছরের ছোট্ট মেয়েটিকে তিনটে দিন কাটাতে হল আর একটি হোমে। কারণ নিয়মের গেরো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৮:১৭
মায়ের সঙ্গে বাড়ির পথে। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

মায়ের সঙ্গে বাড়ির পথে। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কাছেই বাড়ি। কিন্তু সেখানে ফিরতেই কেটে গেল তিন-তিনটে রাত!

এক হোম থেকে ছাড়া পেয়েও ১৩ বছরের ছোট্ট মেয়েটিকে তিনটে দিন কাটাতে হল আর একটি হোমে। কারণ নিয়মের গেরো।

মঙ্গলবার রাতে কানপুরের হোম থেকে আনা হয়েছিল ছোট্ট মুসকানকে। কিন্তু বাড়ি ফেরা হয়নি। উল্টে তার ঠাঁই হয়েছিল পুরুলিয়ার আনন্দমঠ হোমে। অবশেষে জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর হস্তক্ষেপে শুক্রবার দুপুরে মায়ের হাত ধরে বাড়ির পথ ধরল মুসকান।

পুলিশ ও চাইল্ডলাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোটশিলা স্টেশন এলাকায় যাযাবর সম্প্রদায়ের কিছু মানুষজনের বসবাস রয়েছে। সেখানেই পরিবারের সঙ্গে থাকত মুসকান। মাস তিনেক আগে একদিন আচমকাই সে হারিয়ে যায়। মায়ের বকা খেয়ে কোটশিলা স্টেশন থেকে সবার অগোচরে সে ট্রেনে চড়ে বসেছিল। ক’দিন পরে সেই মেয়ে পৌঁছে যায় সটান কানপুর স্টেশনে। সেখানকার রেলপুলিশ ওই বালিকাকে উদ্ধার করে একটি হোমে পাঠায়। সেই হোম কর্তৃপক্ষ মুসকানের কাছে ঠিকানা জেনে ইন্টারনেট থেকে যোগাযোগের নম্বর সংগ্রহ করে কোটশিলা থানায় খবর দেয়। মাঝে জেলা চাইল্ডলাইন থেকে মুসকানকে পুলিশের সহায়তায় পুরুলিয়ায় নিয়ে আসা হয়।

কিন্তু এখানে তার জন্য যে আরও কিছু অপেক্ষা করছিল। মেয়েকে দেখার জন্য ছটফট করছিলেন মুসকানের মা প্রীতিদেবী। মঙ্গলবার রাত প্রায় ৯টা নাগাদ তিনি খবর পান, মেয়ে পুরুলিয়ায় পৌঁছেছে। অতরাতে তিনি পুরুলিয়ায় আসতে পারেননি। কিন্তু বুধবার ভোরবেলাতেই ছুটে এসেছিলেন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলে। কিন্তু পুরুলিয়ায় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি না থাকায় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ফেরা দূর অস্ত্‌ সেদিন। এমনকী মেয়ের সঙ্গে দেখাও করতে পারেননি বলে অভিযোগ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে প্রীতিদেবী ও মুসকানের দাদু রাজু চৌধুরী দু’জনেই ফিরে যান।

চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘উদ্ধার করা শিশুকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার অধিকার রয়েছে জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির। কিন্তু এই জেলায় দীর্ঘদিন ওই কমিটিই নেই। তাই ওই মুসকানকে পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দিতে নিয়মের জটিলতায় দেরি হয়ে গেল।’’ তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে ওই মেয়েটিকে ছাড়ানোর ক্ষেত্রে জেলাশাসকের ক্ষমতা রয়েছে। তিনি উদ্যোগী হয়েই মুসকানকে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন।

বস্তুত বুধবারই জেলাশাসক জানিয়েছিলেন, মেয়েটিকে ছাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় চিঠি তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারও মেয়েটি হোম থেকে ছাড়া পায়নি। কেন? হোমের সুপার হৈমন্তী হেমব্রম বলেন, ‘‘মায়ের জন্য মেয়ের মনখারাপ করছিল। কিন্তু আমাদের তো কিছু বিধি মানতে হয়। কাগজপত্র তৈরি করতে যা সময় লেগেছে।’’ এর বেশি তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক শিশির মাহাতো দাবি করেছেন, ‘‘কানপুর চাইল্ড লাইন থেকে যে চিঠি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তাতে মেয়েটির নাম কেবলমাত্র পূজা ওরফে মুসকান বলেই লেখা ছিল। কোনও পদবি লেখা ছিল না। তারপরে মায়ের নাম নিয়েও বিভ্রান্তি ছিল। তাই মেয়েটির পরিবার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই ওকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কাজ করতে একটা দিন সময় লেগেছে।’’

মেয়েকে ঘরে নিয়ে যেতে পারবেন শুনে শুক্রবার সাতসকালেই পুরুলিয়ায় চলে আসেন মুসকানের মা। হোমে মেয়েকে দেখেই মা-মেয়ে দু’জনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার আগে মায়ের জন্য মন খারাপ করেছে। চুপচাপ বসে থেকেছে। সে শুনেছে মা এসে ফিরে গিয়েছে। তবু মায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি তার। এ দিন তাই দেখা পেয়ে দু’জনেই খুব খুশি। প্রীতিদেবী বলেন, ‘‘মেয়ে যে এত অভিমানী জানতাম না। সামান্য একটু বকেছিলাম, তাতেই কতদিন আমাদের চিন্তায় রাখল। এ বার ওকে স্কুলে ভর্তি করে দেব।’’ কী বলছে মুসকান? আর কখনও বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে? মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে তার জবাব, ‘‘না, আর যাব না। এ বার স্কুলে পড়ব।’’

Muskan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy