Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তায় রক্তাক্ত তৃণমূল নেতা, বিজেপির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ শাসক শিবিরের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের পুরুলিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে অবিলম্বে শালতোড়ায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

হাহাকার: কাজল মণ্ডলের (ইনসেটে) শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

হাহাকার: কাজল মণ্ডলের (ইনসেটে) শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শালতোড়া শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০০:৫০
Share: Save:

লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরে বাঁকুড়া জুড়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষের অভিযোগ উঠছে। এ বার রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল শালতোড়ার তৃণমূল নেতার। রাজ্যের শাসকদলের অভিযোগ, এটি রাজনৈতিক খুন। বিজেপি আবার সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের পুরুলিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে অবিলম্বে শালতোড়ায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। দল সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার শুভেন্দুবাবুর আসার কথা রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত তৃণমূল নেতা কাজল মণ্ডল (৩৮) শালতোড়ার সালমা অঞ্চলের দুর্লভপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি সালমা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান। বর্তমানে সেখানকার অঞ্চল তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কাজলের স্ত্রী চন্দনা সালমা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা। মঙ্গলবার দুপুরে দুর্লভপুর-খড়িবাঁধ রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় কাজলকে। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে শালতোড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাপুরের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। বুধবার দুর্গাপুরেই মৃত্যু হয় কাজলের। এ দিন বিকেল পর্যন্ত ঘটনাটি নিয়ে শালতোড়া থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

লোকসভা ভোট গণনা হওয়ার পরের দিন থেকেই শালতোড়ায় উত্তেজনা দেখা যায়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তোলে বিজেপি। তাদের এক নেতা জখমও হন। অন্য দিকে, শালতোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিজেপির লোকজনের বিরুদ্ধে তাঁর বাড়িতে হামলার অভিযোগ তোলেন। ওই ঘটনাটি ছাড়াও শালতোড়ার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বার উত্তেজনার খবর মিলেছে। এ বার তৃণমূল কর্মীর রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শালতোড়ার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।

কাজলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী চন্দনা। কাজল গ্রামেই একটি মুদি দোকান চালাতেন। পরিবারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, ঘটনার দিন বেলা ১০টার পরে পাশের গ্রাম খড়িবাঁধের বাসিন্দা, তাঁদের পরিচিত এক ব্যক্তি কাজলকে ডেকে নিয়ে যান। কাজল নিজের মোটরবাইকে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। দুপুর ৩টে নাগাদ খবর আসে, গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এর পরেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাস্তায় কাজলের মোটরবাইক পড়ে ছিল। বাইক থেকে বেশ কিছুটা দূরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাথা-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চোট ছিল। চন্দনা বলেন, “আমার স্বামীর মৃত্যু কী ভাবে হল তার সঠিক তদন্ত করুক পুলিশ। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি চাই।” তৃণমূলের সালমা অঞ্চল সভাপতি বারাণসী গোপের অভিযোগ, “ভোটে জেতার পর থেকেই এলাকায় আমাদের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে বিজেপি। হামলাও হয়েছে কিছু জায়গায়। কাজলের মৃত্যুর পিছনেও বিজেপির হাত থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে।”

তৃণমূলের শালতোড়া ব্লক সভাপতি কালীপদ রায় বলেন, “বিজেপির ছেলেরাই ওঁকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গিয়েছে। পরিকল্পনা করেই এই খুন করা হয়েছে।” যদিও তৃণমূলের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছে বিজেপি। দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সৌগত পাত্র বলেন, “দুর্ঘটনার জেরে ওই তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” পুলিশ জানিয়েছে, যে ব্যক্তির সঙ্গে কাজল বেরিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে এবং আরও এক সঙ্গীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Political Violence TMC BJP Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE