বীরভূমে বেশিদিন কোনও পুলিশ সুপার থাকতে পারেন না, এমন একটা কথা চালু আছে জেলা পুলিশের অন্দরে। মাত্র তিন মাসের মাথায় পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের বদলি ফের সেই চর্চায় ইন্ধন জোগালো। তাঁর পদে আসছেন রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। আইপিএস অফিসার রাজনারায়ণ এত দিন বারাসাত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর ছেড়ে আসা পদেই যাচ্ছেন ভাস্কর।
প্রসঙ্গত, গত ৪ ফেব্রুয়ারি নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীকে বদলি করে বীরভূমের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভাস্কর মুখোপাধ্যায়কে। তিন মাস কাটতে না কাটতেই তাঁকে আবারও বদলি করা হল। এই বদলের কারণ নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। এ তিন মাসে বীরভূমের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, বোমাবাজি, বোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। নলহাটিতে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন এক চিকিৎসক। শিশু পাচারের ঘটনা ঘটেছে বোলপুরে। সব মিলিয়ে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে যেখানে বগটুইয়ের ঘটনার পরেও বীরভূমের তৎকালীন পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীর বদলি হননি, সেখানে এই কারণগুলির জন্য পুলিশ সুপারের বদলি হল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যদিও শোনা যাচ্ছে, কোনও বিশেষ ঘটনার জন্য নয়, স্বেচ্ছায় বদলি চেয়েছিলেন ভাস্করই।
প্রসঙ্গত স্বল্প ব্যবধানে পুলিশ সুপার বদলের ঘটনা বীরভূমে এই প্রথম নয়। ২০২১ সালে বীরভূমে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে তৎকালীন পুলিশ সুপার মিরাজ খালিদকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নগেন্দ্রনাথকে। নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরেও নগেন্দ্র ওই পদেই থেকে গিয়েছিলেন। ২১ মাসের মাথায় গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে বদলি করে নিয়ে আসা হয় ভাস্করকে। এর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শ্যাম সিংহের বদলে বীরভূমের পুলিশ সুপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মিরাজ খালিদকে। তিনি মাত্র তিন মাস দায়িত্বে থিলেন। শ্যাম সিংহ ২০১৮ সালের নভেম্বরে পুলিশ সুপার কুণাল আগওয়ালের কাছ থেকে দায়িত্ব ভার বুঝে নিয়েছিলেন। তার আগে মাত্র চার মাস ছিলেন কুণাল।
২০১৬ সালের এপ্রিলের আগের চার বছরে সাত বার পুলিশ সুপার বদল দেখেছিল এই জেলা। তবে আসা-যাওয়ার সেই ‘প্রথায়’ ব্রেক কষে প্রায় দু’বছর কাটিয়ে গিয়েছিলেন নীলকান্তম সুধীরকুমার। তার আগে মুকেশ কুমার অবশ্য দু’দফায় প্রায় দেড় বছর পুলিশ সুপার ছিলেন। শ্যাম সিংহও দু’বছর কাটিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভাস্করের হাত ধরে হয়তো সেই পুরনো ‘প্রথাই’ আবার ফিরে এল বলে মনে করছেন জেলার পুলিশের আধিকারিকেরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)