রাজনগর কলেজ।
কোথাও কিছু লেখা নেই। একতলা বাড়ির প্রান্ত ঘেরা বড়সড় জমির একদিকে পরপর গোটা ছয়েক ঘর। বাড়ির বাকি অংশজুড়ে কিছু গাছ গাছালি ও ফুল না ধরা কাশের ঝোপ। পরিকাঠামো দেখলে আন্দাজ করা শক্ত এটিই রাজনগর মহাবিদ্যালয়! ভাবলেও অবাক হতে হয়, এই পরিকাঠামো নিয়েই তিন-তিনটি স্নাতক ব্যাচ ওই কলেজ থেকে বেরিয়েছে। প্রায় সাড়ে ছ’বছর আগে তৈরি রাজনগর ব্লকের একমাত্র কলেজটির হতদরিদ্র পরিকাঠামো দেখে মন ভাঙছে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের।
কতটা খারাপ অবস্থা কলেজটির?
বাস্তব ছবিটা তুলে ধরলেই সেটা পরিষ্কার হবে। এতদিনেও একজন স্থায়ী শিক্ষক নেই কলেজটিতে। নেই কোনও স্থায়ী অধ্যক্ষও। মেলে না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থ সাহায্য। টিচার ইন চার্জের দায়িত্ব থাকা একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক এবং মূলত তিন জন (পার্ট টাইম) শিক্ষকের উপর নির্ভর করেই চলছে রাজনগরের ওই কলেজ। এছাড়া কিছু আমন্ত্রিত শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য আসেন ঠিকই, কিন্তু সেটা মোটেই যথেষ্ট নয়।
এ নেহাতই অভিযোগ নয়। একথা মানছেন কলেজপড়ুয়া থেকে শিক্ষক, অভিভাবক সকলেই। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত এই কলেজ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০৯ সালের অগস্ট মাসে থেকে শুরু হয় কলেজ। প্রথমে রাজনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে সকালে চলত পঠন পাঠন। এলাকার কিছু মানুষের ৪ একরেরও বেশি দানের জায়গায় উপর কলেজ ভবনটি নির্মিত হয় ২০১১ সালে। তৎকালীন বাম সরকার ও জেলাপরিষেদের অর্থ সাহায্য তৈরি কলেজটিতে প্রথম থেকেই পরিকাঠামো গত সমস্যা ছিল। ভবনটি তৈরি হলেও বিদ্যুতের ব্যবস্থা, পানীয় জল এমনকী শৌচাগার কোনও কিছুই তৈরি হয়নি তখন। কখনও সরকারি অনুদান কথনও বা বিধায়কের অর্থ তহবিল থেকে পরে ধীরে ধীরে সেগুলি তৈরি হয়।
স্থায়ী অধ্যক্ষের বদলে প্রথম থেকেই টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন নগরী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পাঁচুগোপাল সাধু। কলেজের যাত্রা শুরুর সময় বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, এডুকেশন, ইংরাজী, ইতিহাস মোট পাঁচটি বিষয়ের শিক্ষকের অনুমোদন ছিল। পরে দর্শন ও সংস্কৃত আরও দুটি বিষয়ের পদ অনুমোদন পায়। কিন্তু প্রথমে পাঁচটি বিষয়ের স্থায়ী অতিথি শিক্ষক যোগ দিলেও বর্তমানে মাত্র তিনজন রয়েছেন।
ঘটনা হল, অন্য অনুমোদিত বিষয়েরও শিক্ষক পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয় কলেজ সার্ভিস কমিশন থেকে কোনও বিষয়ের পূর্ণ সময়ের স্থায়ী শিক্ষকও নিয়োগ হয়নি কলেজে। স্থায়ী অধ্যক্ষের পদটিও খালি রয়ে য়ায়। সমস্যার সূত্রপাত এখানেই। প্রথমত অবস্থানগত দিক থেকে কলেজটি এমন জায়াগায় রয়েছে যেখানে শুধু রাজনগর ব্লকের ছাত্র-ছাত্রীরাই নন পড়শি ঝাড়খণ্ডের বহু পড়ুয়ার অত্যন্ত সুবিধা হয়েছিল। বিশেষ করে এলাকার সংখ্যালঘু ও তপসিল জাতি ও উপজাতি পরিবার থেকে পড়তে আসা ছাত্রীদের। কিন্ত পরিকাঠামোর সমস্যাই প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে স্বপ্ন দেখেছিলেন ঘরের কাছে কলেজ তৈরি হলে পড়াশুনা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে না। তাঁদের সেই স্বপ্নে চিড় ধরেছে!
জানা গেল, এ কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৫৬ জন। কিন্তু মাত্র তিন পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে কী আর পঠন পাঠন চলে। অগত্যা আমন্ত্রিত বা গেস্ট লেকচারার দিয়ে কোনও রকমে ক্লাস করানো হয়। ওই কলেজের ছাত্রী জুহি খাতুন, রুমা খাতুন কিম্বা চন্দনা মারান্ডি, আঞ্জলি সরেন, মেলডি হেমব্রমেরা বলছেন, ‘‘ঘরের কাছে কলেজ, সুবিধা হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু পড়াশুনা ঠিকমতো হচ্ছে না শিক্ষকের অভাবে। ছবিটা না বদলালে পড়ুয়াদের ভীষণ সমস্যা হবে।’’
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক।
কলেজ সূত্রের খবর, শুধু পঠন পাঠনের অসুবিধা নয়, একজনও স্থায়ী শিক্ষক এবং স্থায়ী অধ্যক্ষ না থাকা এবং নির্বাচিত পরিচালন সমিতি না থাকায় সমিতির অর্থ সাহায্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কলেজ। কলেজ তৈরির প্রথম দিন থেকে দুটি অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু কলেজের সব কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থেকেছে। প্রথমদিন থেকে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় শ্রম দিয়ে চলা কলেজের প্রধান শিক্ষক পাঁচুগোপালবাবুও মানছেন সে কথা। তিনি জানান, অচিরেই স্থায়ী শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগ না হলে সমস্যা কোনও ভাবেই মেটার নয়।
পরিচালন সমিতিতে থাকা সদস্যদের কেউ কেউ বলছেন, কেন যে সমস্যা মিটছে না বুঝতে পারছি না।
সমস্যা তাহলে কোথায়?
বর্তমানে অ্যাডহক পরিচালন সমিতির সভাপতি রামপুরহাট কলেজের অধ্যাপক বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, বিপর্যস্ত টেলিপরিষেবার কারণে তাঁর কথা শোনা যায়নি। শিক্ষা স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাম আমলে পরিকল্পনাহীন ভাবে এমন বেশ কিছু কলেজ তৈরি হয়েছে। যেগুলির পরিকাঠামো অত্যন্ত দ়ুর্বল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে সচেষ্ট হয়েছি। আমি নিজে ওই কলেজে গিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি শূন্য পদে অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে।’’ তিনি আরও জানান, ‘‘যেহেতু কলেজ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয় কতগুলি শূন্য পদ রয়েছে। কলেজ পরিচালন কমিটির পাঠানো নথিতে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকায় সমস্যা মেটেনি। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীও বিষয়টি জানেন। দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy