E-Paper

আশঙ্কা সত্যি করেই শীলার বিরুদ্ধে অনাস্থা

কংগ্রেস ও নির্দল জোটের সমর্থনে শীলা পুরপ্রধান হলেও তাতে সিলমোহর দেয়নি রাজ্য সরকার। মামলা হয়। হাই কোর্ট জানিয়েছিল, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শীলার পুরপ্রধান পদে থাকতে সমস্যা নেই।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:১৮
ঝালদা পুরসভা।

ঝালদা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

হাই কোর্টের নির্দেশের পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। জল্পনা সত্যি করেই ঝালদার পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ল পুরভবনে। ফলে, ঝালদা পুরসভায় ফের আশঙ্কার মেঘ।

তৃণমূলে যোগ দেওয়া শীলার বিরুদ্ধে এ বার অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন শাসকদলের পাঁচ পুরপ্রতিনিধি। কংগ্রেস শিবিরের সমর্থন নিয়ে পুরপ্রধান হওয়া শীলার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করলেন কংগ্রেসেরও দুই পুরপ্রতিনিধি। তবে তপন কান্দুকে খুনের জন্য রাজ্যের শাসকদলের একাংশকে দোষারোপ করে আসা তাঁর স্ত্রী তথা কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি পূর্ণিমা কান্দুও তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধিদের সঙ্গে হাত মেলানোয় অনেকে অবাক।

বৃহস্পতিবার সাত পুরপ্রতিনিধির সই করা অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে ঝালদার মহকুমাশাসক এবং পুরুলিয়ার জেলাশাসকের দফতরেও। পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায় ফোনে বলেন, ‘‘বাইরে রয়েছি। তবে সাত জনের সই করা অনাস্থার একটি চিঠি পুরসভার অফিসে জমা পড়েছে বলে শুনেছি।’’

কংগ্রেস ও নির্দল জোটের সমর্থনে শীলা পুরপ্রধান হলেও তাতে সিলমোহর দেয়নি রাজ্য সরকার। মামলা হয়। হাই কোর্ট জানিয়েছিল, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শীলার পুরপ্রধান পদে থাকতে সমস্যা নেই। ইতিমধ্যে শীলা ও চার কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি তৃণমূলে যেতেই
সমীকরণ বদলায়। তৃণমূলের আদি পাঁচ পুরপ্রতিনিধি শীলাকে পুরপ্রধান হিসেবে মানতে নারাজ। শীলা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন দাবি করে তৃণমূলের ওই পাঁচ পুরপ্রতিনিধি ও কংগ্রেসের দুই পুরপ্রতিনিধি তাঁকে পুরপ্রধান পদ থেকে সরাতে দু’টি পৃথক মামলা করেছিলেন। সেখানে সিঙ্গেল বেঞ্চের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার জানায়, পুরপ্রধানের প্রতি আস্থা না থাকলে পুরআইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে হবে।

তারপর রাত পোহাতেই অনাস্থার চিঠি জমা পড়ায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে শহরে। অনাস্থাকারীদের অন্যতম ঝালদার প্রাক্তন তৃণমূল পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল বলেন, ‘‘আলোচনা করেই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে।’’

কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি বিপ্লব কয়ালের বক্তব্য, ‘‘সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার পরে নৈতিকতার খাতিরে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল। তিনি তা করেননি। হাই কোর্ট জানায়, আস্থা না থাকলে যা করণীয় সেটা পুরআইন অনুযায়ী করতে হবে। আমরাও সেটাই করেছি।’’

গত পুরবোর্ড গঠনের মুখে আততায়ীদের গুলিতে কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি তপন কান্দু খুনের পরে তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা তৃণমূলের একাংশকে দায়ি করে সুর চড়িয়েছিলেন। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বরাবরই সে অভিযোগ মানেনি। তৃণমূলের হাত থেকে পুরবোর্ড কেড়ে নেওয়ার পরে কংগ্রেস নেতৃত্ব এই জয় তপনকে উৎসর্গ করেছিলেন।

তাহলে পূর্ণিমা কী করে তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধিদের একাংশের সঙ্গে অনাস্থা আনার জন্য হাত মেলালেন? স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি পূর্ণিমা। তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, ‘‘যা বলার তা দলীয় নেতৃত্বই বলবেন।’’

তৃণমূল কি সুরেশ-পন্থীদের এই বিদ্রোহ মানবে? শীলাদের তৃণমূলে আনার নেপথ্যে থাকা বাঘমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর হুঁশিয়ারি, ‘‘এটা পুরোপুরি দলবিরোধী কাজ। সে কথা দলের রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মোকাবিলাও কড়া ভাবেই করা হবে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়াও বলেন, ‘‘এ নিয়ে দলীয় স্তরে আলোচনা হবে। পুরসভা দলের হাতে রাখতে প্রয়োজনে হুইপও জারি করব।’’

তবে ঝালদা পুরসভার ক্ষমতা দখলকে ঘিরে আস্থা-অনাস্থার যে ‘পরম্পরা’ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে, তাতে অসন্তুষ্ট বাসিন্দারা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhalda Jhalda Municipality

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy