Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩

আগাছায় মুখ ঢেকেছে প্রজাপ্রতি উদ্যান

লালবাঁধের পাড়ে আগাছার ভিতর থেকে মরিয়া হয়ে উঁকি মারছে একফালি দেওয়াল। নিভে আসা আলোয় দূর থেকে দেখলে গা-ছমছম করতেই পারে। ভুতুড়ে কিছু নয়। ভাস্কর্য। শিল্পী অমিয় নিমাই ধাড়ার ‘লাভ হাব’।

ঝোপ-জঙ্গলে ঢেকেছে ভাস্কর্য, কোনওটি ভেঙে পড়েছে। বেহাল বিশ্বভারতীর ভাস্কর্য উদ্যান। নিজস্ব চিত্র।

ঝোপ-জঙ্গলে ঢেকেছে ভাস্কর্য, কোনওটি ভেঙে পড়েছে। বেহাল বিশ্বভারতীর ভাস্কর্য উদ্যান। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০৮
Share: Save:

লালবাঁধের পাড়ে আগাছার ভিতর থেকে মরিয়া হয়ে উঁকি মারছে একফালি দেওয়াল। নিভে আসা আলোয় দূর থেকে দেখলে গা-ছমছম করতেই পারে। ভুতুড়ে কিছু নয়। ভাস্কর্য। শিল্পী অমিয় নিমাই ধাড়ার ‘লাভ হাব’।

Advertisement

এমনই দশা বিশ্বভারতীর সাজানো বাগানের। ২০১৪ সালের ৯ অগস্ট নাট্যঘরের পিছনে, লালবাঁধের পাড় জুড়ে ‘ইকো জোন’-এর উদ্বোধন হয়েছিল। তৈরি করতে খরচ হয়েছিল বিস্তর। এখন সেখানে ঢোকার মুখেই থমকাতে হয়। সিমেন্টের ফলক ঢাকা পড়েছে শ্যাওলায়। চেষ্টা করে পড়ে জানতে হয় সেটি লালবাঁধ ইকো জোন। প্রাকৃতিক ভাস্কর্য উদ্যান, অর্কি়ডের বাগান, এবং প্রজাপতির বাগানও।

তবে প্রজাপতি তার ধারেকাছে ঘেঁষে না বহু দিন। অর্কিডের বদলে আগাছার বাড়বাড়ন্ত। তারমধ্যে ঘাপটি মেরে অন্য পোকামাকড় থাকতে পারে ভেবে সহজে ও দিক মাড়ান না স্থানীয় অনেকেও।

ভাস্কর্য রয়েছে বটে। কোনওটি ভেঙে পড়েছে মাটিতে। কোনওটি মুখ ঢেকেছে লতাগুল্মে। মাটি দিয়ে তৈরি ‘লাভ হাব’ অনেকটাই ভেঙে টেরাকোটা আর রিলিফের কাজ পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের আমলে, অধ্যাপক শিশির সাহানার তত্বাবধানে তৈরি হয়েছিল এই উদ্যান। শিশিরবাবুর দাবি, বিদেশে অনেক থাকলেও ভারতে প্রকৃতির কোলে, প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে ভাস্কর্য উদ্যান এই প্রথম। কিন্তু প্রথম সেই নজির আপাতত শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি শিশিরবাবুর নিজের ভাস্কর্যটিও ক্রমশ মিশে যাচ্ছে প্রকৃতিতে।

কলাভবনের শিক্ষক জনক ঝংকার নার্জারি মাছের আদলে একটি ভাস্কর্য গড়েছিলেন বাঁশ এবং মাটি দিয়ে। একই হাল হয়েছে সেটিরও। গৌতম দাসের সেরামিকের বা সুতনু চট্টোপাধ্যায়ের গাছের গুঁড়ির ভাস্কর্য টিমটিম করে টিঁকে রয়েছে শুধু। তবে কত দিন থাকতে পারবে তা নিয়ে সন্দিগ্ধ শান্তিনিকেতনের শিল্প রসিকেরা। শিশিরবাবু বলেন, ‘‘নজরদারি এবং উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বেশ কিছু শিল্পকর্ম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

শিল্পীদের একাংশের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁরা জানান, এই ভাস্কর্যগুলি গড়তে দিন রাত এক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু খোদ বিশ্বভারতী, যেখানে শিল্পের পাঠ নিতে দেশ বিদেশ থেকে পড়ুয়ারা আসেন, সেখানেই শিল্পের সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানের হেলাফেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

শিল্পীরা জানান, শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি এবং দর্শনের মধ্যে নিবিঢ় যোগ বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের কাছে সহজ করে তুলে ধরার কথা তাঁরা ভেবেছিলেন উদ্যানের জন্য ভাস্কর্য গড়ে তোলার সময়। সম্প্রতি কলকাতা থেকে আসা এক দল পর্যটককে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, ওই এলাকার পাশ থেকে ঘুরে এলেও সেখানে যে এমন কোনও উদ্যান রয়েছে তা তাঁরা বুঝতেই পারেননি। লক্ষাধিক টাকা খরচের পরিণতি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠানের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এক সময় লালবাঁধের পাড়ে ঝোপজঙ্গলের সুযোগ নিয়ে অবাধে চলত অসামাজিক কাজকর্ম। তাতে লাগাম টানার জন্যও বাঁধের পাড় সংস্কারের তাগিদ তৈরি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে পুরনো দিনগুলি ফের ফিরে আসার আশঙ্কাও করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্ত এই প্রসঙ্গে শুধু বলেন, ‘‘ভাস্কর্য উদ্যান সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য প্রাথমিক স্তরে আলোচনা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.