Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Old Age Pension Scheme

সরকারের ‘দুয়ারে’ গিয়েও মেলেনি ভাতা, নেতা বদলায়, সমস্যা মেটে না পুরুলিয়ার কাজলির

দীর্ঘ দিন ধরে ভাতার আবেদন জানানোর পরেও এখনও আশা ছাড়েননি সাতাত্তরের কাজলি। আশায় আছেন, এ বার হয়তো তাঁর আর্তি পৌঁছবে সরকারি কর্তাদের কানে। বার্ধক্য ভাতাটুকু অন্তত মিলবে।

ভাতার অপেক্ষায় ৭৭ বছরের কাজলি।

ভাতার অপেক্ষায় ৭৭ বছরের কাজলি। — নিজস্ব ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৩৭
Share: Save:

বয়স সাতাত্তর। পুরুলিয়ার লাগদা গ্রাম পঞ্চায়েতের হুলকা গ্রামের কাজলি মাহাতো এখনও সরকারি ভাতার অপেক্ষায়। অশক্ত শরীরে এখনও হাঁটাচলা করতে পারেন ঠিকই, কিন্তু অভাবের ধাক্কায় সে শক্তিও ক্রমে ফুরিয়ে আসছে। আশির দোরগোড়ায় পৌঁছে কাজলির আশা, এ বার বোধ হয় সরকারি বার্ধক্য ভাতাটুকু জুটে যাবে তাঁর!

লাল, সবুজ বা গেরুয়া— ক্ষমতার হাতবদল হতে দেখেছেন চেয়ে চেয়ে। কিন্তু বৃদ্ধার ভাতার ডালি আজও অপূর্ণ। অভিযোগ, কোনও সরকারই ভাতা দেয়নি কাজলিকে। তা নিয়ে ক্ষোভ যেমন আছে, তেমন মনের কোণে আছে আশাও, এ বার হয়তো হয়ে যাবে! কাজলির কথায়, ‘‘অনেক বার আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এক বারও ভাতা পাইনি। আর কবে পাব? আর ক’টা দিনই বা বাঁচব।’’

দিন যায়, আশা পূরণ হয় না বৃদ্ধার। তাঁর নাতি অশোক মাহাতো বলেন, ‘‘দু’তিন বারের বেশি আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আজও ভাতা মঞ্জুর হয়নি। এক বার তালিকায় নামও এসেছিল, কিন্তু ভাতা মেলেনি। কত বার আর দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে যাব!’’

গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপির অপর্ণা মাহাতো বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা অনেকগুলি নামের তালিকা দিয়েছিলাম। কিন্তু বিরোধী বলেই হোক আর যে কারণেই, সেগুলির একটিও মঞ্জুর হয়নি।’’

পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের। মহিলা প্রধান শান্তবালা মাহাতো বলেন, ‘‘এই বিষয়ে ভাল বলতে পারবে পঞ্চায়েত সমিতি। কারণ দুয়ারে সরকারের যে ফর্ম জমা হয়, সে সবই ব্লকে নিয়ে যাওয়া হয়।’’

এ বিষয়ে পুরুলিয়া-১ ব্লকের বিডিও অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘‘সাধারণ শ্রেণি ও ওবিসির বার্ধক্য ভাতা আর বিধবা ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক কোটা থাকে। তাই অনেক সময় নতুন নাম তোলানো যায় না।’’ তা বলে কি সম্বলহীন এক বৃদ্ধা সরকারি ভাতার আওতার বাইরেই থেকে যাবেন? এ প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি বিডিও।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে যান। প্রতিটি সভায় নিয়ম করে বলেন, সরকারি ভাতার আওতা থেকে যেন কেউ বাদ না যান। প্রয়োজনে প্রশাসনিক আধিকারিকদের বাড়তি উদ্যোগের নিদানও দেন তিনি। কিন্তু প্রদীপের তলার অন্ধকারের মতোই ভাতার আশায় দিন গোনেন কাজলির মতো মানুষ। সরকার আসে, সরকার যায়, ভাতা-সমস্যার সুরাহা হয় না।

এ সবের মাঝে কাজলির কাছে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ভাতা প্রদানের বিষয়টি পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাটানিতে। আর এই টানাটানির মাঝে পড়ে ভাতা না পেয়ে দিন কাটছে তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Age Pension Scheme Duare sarkar TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE