Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
TMC

অনাস্থা রুখতে দলের নির্দেশ

সভাধিপতি পুরুলিয়া জেলা পরিষদ পরিচালনার ক্ষেত্রে সদস্যদের একাংশের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ।

বাঁশবেড়া পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য সুমিত্রা টুডুর হাতে বুধবার বরাবাজার ব্লক তৃণমুল অফিসে দলীয় পতাকা তুলে দেন স্থানীয় বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন।

বাঁশবেড়া পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য সুমিত্রা টুডুর হাতে বুধবার বরাবাজার ব্লক তৃণমুল অফিসে দলীয় পতাকা তুলে দেন স্থানীয় বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন। নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়া ও বরাবাজার শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২১ ০৭:০২
Share: Save:

তৃণমূলের দখলে থাকা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোথাও দলীয় সদস্যেরা অনাস্থা আনতে পারবেন না— এই মর্মে দলের পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্বকে রাজ্য থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার এ কথা জানান পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গুরুপদ টুডু। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের অন্দরে সভাধিপতির সঙ্গে তৃণমূল সদস্যদের একাংশের ‘টানাপড়েন’-এর জেরে এই নির্দেশ বলে তৃণমূল সূত্রের দাবি। এ দিকে, তৃণমূল পরিচালিত বরাবাজারের বাঁশবেড়া পঞ্চায়েতে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আনা অনাস্থায় সই রয়েছে তৃণমূলের কিছু সদস্যের। এ দিন দুপুরে তাঁদের নিয়ে বৈঠকে বসেন স্থানীয় বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন।

সভাধিপতি পুরুলিয়া জেলা পরিষদ পরিচালনার ক্ষেত্রে সদস্যদের একাংশের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের কিছু সদস্যের। গত ফেব্রুয়ারিতে বাজেট বৈঠকে তৃণমূলের সদস্যদের একাংশের অনুপস্থিতিতে ‘কোরাম’ হয়নি। তার পরে, বিষয়টি প্রকট হয়। দল সূত্রে খবর, কয়েকবার রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ‘বিক্ষুব্ধ’ সদস্যেরা চিঠি দিলেও সাড়া মেলেনি। এ দিকে, জেলা তৃণমূল সভাপতি বৈঠকে ডাকলেও যাননি কোনও ‘বিক্ষুব্ধ’ সদস্য। চলতি মাসের গোড়ায় তাঁদের একাংশ কলকাতায় গিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে যান। লাভ না হওয়া দিন কয়েক আগে যান আসানসোলে, জেলার পর্যবেক্ষক মলয় ঘটকের কাছে। মলয়বাবু অবশ্য প্রকাশ্যে অনাস্থার জল্পনা উড়িয়ে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্যের কথায়, ‘‘রাজ্যের তরফে সাড়া পেলে অনাস্থার চিঠি দেওয়া হত।’’

এ দিন রাজ্য থেকে নির্দেশ আসার পরে, জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা ‘বিক্ষুব্ধ’ সদস্যদের অন্যতম হলধর মাহাতো বলেন, ‘‘অনাস্থা নয়, সভাধিপতি যে ভাবে জেলা পরিষদ চালাচ্ছেন তা নিয়ে আমাদের বক্তব্য দলের কাছে জানিয়েছি। কোনও অভিযোগ থাকলে দলকে জানাব না তো কাকে জানাব?’’ অন্য দিকে, জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি দলীয় শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী। দল আমাকে এই পদে বসিয়েছে। উন্নয়ন ও দলের শৃঙ্খলাই এখানে প্রধান। অনাস্থার মুখোমুখি হয়ে দলকে অস্বস্তিতে ফেলব না। দল বললে, তার আগেই সরে যাব।’’

এই টানাপড়েনের মধ্যেই, সম্প্রতি বাঁশবেড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধে বরাবাজার ব্লক প্রশাসনের কাছে অনাস্থার চিঠি জমা পড়েছে। ওই পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে আটটি তৃণমূল ও তিনটি বিজেপির দখলে। অনাস্থার চিঠিতে সই করেছেন তৃণমূলের পাঁচ এবং বিজেপির তিন জন। প্রধানের বিরুদ্ধে ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল সদস্য নিমাই মাহাতোর অভিযোগ, সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কাজ করার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি, ‘‘অনাস্থায় আমরা বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাইনি। বিজেপিই আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।’’ তবে বিজেপির বরাবাজার ১ মণ্ডলের সভাপতি অক্ষয় মাহাতো বলছেন, ‘‘প্রধানের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের সদস্যদের একাংশ একমত। সে কারণেই অনাস্থা।’’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে ওই প্রধান স্বপন মাহাতো বলেন, ‘‘অনাস্থার চিঠির কথা জানি। দলকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’

এই পরিস্থিতিতে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে তৃণমূল। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানোর জন্য এ দিন দুপুরে বাঁশবেড়ার ‘বিক্ষুব্ধ’ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন। তিনি বলেন, ‘‘বিক্ষুব্ধ দলীয় সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, দেখা হচ্ছে।’’ বিডিও (বরাবাজার) মাসুদ রাইহান বলেন, ‘‘অনাস্থার চিঠি পেয়েছি। বিষয়টি দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE