পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়াকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় রক্ত ঝরছে। ঝুঁকি এড়াতে তাই স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত কয়েকটি গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। প্রতিটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, বাঁকুড়ার এমন ৪৯টি গ্রামপঞ্চায়েতে মঙ্গলবার থেকে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুধবার ছিল বোর্ড গড়ার প্রথম দফার শেষ দিন। ঝামেলার আশঙ্কা করে মঙ্গলবার একটি ও বুধবার তিনটি গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়েছে।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “কোনও ধরনের ঝামেলা এড়াতে পুলিশের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেছি আমরা। রিপোর্টে চারটি গ্রামপঞ্চায়েত থেকে গন্ডগোলের আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। তাই সেগুলিতে বোর্ড গড়া আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “আমরা পঞ্চায়েত ধরে ধরে পরিস্থিতি যাচাই করেছি। তার রিপোর্ট জেলা প্রশাসনকে দিয়েছিলাম।’’
পুলিশ ও প্রশাসনের এই উদ্যোগে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময়ে ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হলেও প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। যে চারটি গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়েছে, তার কোনওটিতেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। বিজেপির অভিযোগ, শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই পুলিশ-প্রশাসন ‘চক্রান্ত’ করে ওই চারটি গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন পিছিয়ে দিয়েছে।
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র উল্লেখ করছেন, ইঁদপুরের রঘুনাথপুর গ্রামপঞ্চায়েতে তৃণমূল ও বিজেপির আসন সমান সমান। রানিবাঁধের রুদড়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের চেয়ে বিজেপির আসন বেশি রয়েছে। সেখানে নির্দল ও সিপিএম একটি করে আসন পেয়েছে। রাইপুরের সোনাগাড়া ও সিমলাপালের পার্শ্বলাতেও তৃণমূলের চেয়ে বিরোধীদের আসন বেশি। প্রশাসন এই পঞ্চায়েতগুলিতেই বোর্ড গঠন স্থগিত রাখায় তাঁর অভিযোগ, “বিরোধী দলের সদস্যদের প্রলোভন বা ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে টানার চেষ্টা চলছে। কিন্তু শাসকদল এখনও তাতে সফল হতে পারেনি। তাই আরও কিছু দিন তাদের সময় করে দিল প্রশাসন।”
বিবেকান্দর আরও অভিযোগ, বোর্ড গঠন স্থগিত থাকার খবর বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়নি। তিনি বলেন, “রুদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে আমাদের সদস্যেরা গিয়ে দেখেন অফিস তালাবন্ধ। কেউ কোথাও নেই। পরে বিডিওর কাছে গিয়ে জানতে পারি, বোর্ড গঠন হবে না। তৃণমূলের আমলে সবই ছেলেখেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” জেলাশাসক অবশ্য বলেন, “বোর্ড গঠন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত সঠিক সময়েই সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যে পঞ্চায়েতগুলির বোর্ড গঠন স্থগিত থাকল সেগুলিতে পরে বোর্ড গঠনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।”
বিরোধী দলের সদস্যদের ভাঙানোর চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি অরূপ খান বলেন, “বিজেপি কীসের ভিত্তিতে ওই অভিযোগ তুলছে জানি না। যে পঞ্চায়েতগুলিতে ওরা জিতেছে সেখানে শান্তিপূর্ণ ভাবেই তো বোর্ড গঠন হয়েছে। তৃণমূল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন মোট ৩৫টি গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়েছে। যার মধ্যে রাইপুর ব্লকের মণ্ডকুলি, ঢেকো ও সারেঙ্গার বিক্রমপুরে বোর্ড গড়েছে বিজেপি। ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা সিমলাপালের দুবরাজপুরে বোর্ড গড়েছে সিপিএম। এ ছাড়া ৩১টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়েছে তৃণমূল।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে একক ভাবে একটিও গ্রামপঞ্চায়েত পায়নি সিপিএম। তবে ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা সিমলাপালের পার্শ্বলা ও দুবরাজপুরে তারা তৃণমূলের সমান আসন পেয়েছে। দুবরাজপুরের ১৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ও সিপিএম সাতটি করে আসনে জিতেছে। একটি আসন পেয়েছেন নির্দল প্রার্থী। এ দিন ওই নির্দলের সমর্থন নিয়েই সিপিএমের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। দলের জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “দুবরাজপুরে আমাদের সদস্যদের দল পরিবর্তন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল সফল হয়নি।”
যদিও সিমলাপাল ব্লকের এক তৃণমূল নেতা বলেন, “দুবরাজপুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধানের আসন জাতিগত ভাবে সংরক্ষিত। আমাদের ওই সংরক্ষিত আসনে কোনও সদস্য জয়ী না হওয়ায় প্রধান নির্বাচন নিয়ে আমরা মাথা ঘামাইনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy