অতটুকু মেয়ের উপরে কে বা কারা অত্যাচার করেছিল, ঘটনার তিন দিন পরেও সে প্রশ্নে অন্ধকারে সিআইডি। উত্তর মেলেনি কিছু অসংগতিরও। এ সব নিয়ে ক্ষোভ যেমন বাড়ছে, তেমনি তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।
তারাপীঠের গ্রামের ছোট্ট যে মেয়েটিকে পাড়া-প্রতিবেশীরা দিন তিনেক আগেও খেলতে, গরমের ছুটিতে অন্য মেয়েদের সঙ্গে বাড়ি আসতে দেখেছিল সেই মেয়েটিই আর নেই। কারা তার সর্বনাশ করেছে তার উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত চোখের পাতা এক করতে পারছেন না অনেকেই। সঙ্গে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। সন্ধে নামতে না নামতেই ঘরে ফিরছে পড়ুয়ারা। খেলার পাঠ চুকছে আগেই।
রবিবার সকালে গ্রাম ঢুকতে দেখা মিলল গ্রামের পাঁচ স্কুল পড়ুয়া বালক ও কিশোরের সঙ্গে। ফাঁকা মাঠে গরু চরাতে এসে তারা গ্রামের মোরাম রাস্তার ধারে গাছের ছায়ায় বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করছিল। কথায় কথায় জানা গেল, দিন তিনেক আগের বালিকা খুনের কথা তারা জানে। শুধু তাই নয়, সে তাদের পরিচিতও। এক বালকের কথায়, ‘‘আমরা আগের থেকে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে পড়ছি। সন্ধ্যা নামে বাড়ির বাইরে বেরোতে দিচ্ছে না। সত্যি বলতে কি আমরাও ভয় পাচ্ছি।’’ গ্রামের মুদি দোকান থেকে চণ্ডীমণ্ডপের দালান, কাছের বটতলা— সব জায়গায় একটাই প্রশ্ন, ‘‘ পুলিশ কুকুর থেকে সিআইডি সবই তো হল, কবে ধরা পড়বে খুনিরা?’’
বৃহস্পতিবার রাতের অভিঘাত এখনও ভুলতে পারেনি নির্যাতিতার পরিবার। মৃতার জেঠার কথায়, ‘‘অতটুকু মেয়েকে অত্যাচার করে খুন করা হল? আর কোন ভরসায় গ্রামে থাকব। ভাইকে বলেছি জায়গা জমি বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যাব।” এখনও ধাতস্থ হতে পারেননি নির্যাতিতার মা। কিছুটা সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘ওই দিন বিকেলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মাঠের দিকে গিয়েছিলাম। রাতের বেলা ওখান থেকেই ওর দেহ মিলল। ওখানেই একটা গাছ থেকে মেয়ে খেজুড় পেড়েছিল। মাঠের মধ্যে সাপ দেখে ভয়ে পেয়ে বলেছিল আর কোনও দিন মাঠে আসবে না। বাড়িতে সেই খেজুড় থেকে গিয়েছে। নেই শুধু আমার মেয়েটা!’’
সিআইডি তদন্তে ভরসা রাখছেন মেয়েটির বাবা। খুনিরা দ্রুত ধরা পড়বে বলেও তিনি আশাবাদী। সিআইডি সূত্রের দাবি, সব দিক মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। শনিবার বিকালে সিআইডি-র টিম গ্রামের মাঠে যেখানে নির্যাতিতার দেহ পড়েছিল সেখানে যায়। সেখান থেকে কিছু দূরে জঙ্গলঘেরা এলাকা থেকে মিলেছে দিশি মদের পাউচ। ওই দিন গ্রামের মদ বিক্রেতার কাছ থেকে কারা, কারা এই মদ কিনেছেন তাঁদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন সিআইডি-র কর্তারা। শনিবার রাতে অবশ্য আটক করা দু’জনকে ছেড়ে দিয়েছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনার পর থেকেই যে যে প্রশ্নে খটকা তৈরি হয়েছিল তার নিরসন হয়নি। প্রথম ধন্দ ছিল, খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির দেওয়াল ডিঙিয়ে কে বা কারা কী ভাবে বাড়িতে ঢুকল। দাওয়াই তিন জনের মাঝে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত মেয়েটিকে অনায়াসে তুলে নিয়ে কাঠের দরজার খিল খুলে চলে গেল তারা। বাড়ির কেউ কিছু টের পেলেন না কেন? খটকা ২, মাঝরাতে নিখোঁজের খবর চাউর হওয়ার ৪০ মিনিটের মধ্যে মেয়েটির নিথর দেহ দেখতে পেয়েছিলেন গ্রামের দুই ব্যক্তি। তাঁরা মাঠের ওই খড়ের ছাউনির ভিতরেই খুঁজতে গিয়েছিলেন কেন?
তদন্তকারীদের অবশ্য দাবি, ওই দু’জনের থেকে সন্তোষজনক উত্তর মিলেছে। তার পরেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy