Advertisement
E-Paper

পাঁচিল নিয়ে বিবাদ, থেঁতলে খুন

খুনের খবর পৌছনোর পরে এসডিপিও (বোলপুর) অভিষেক রায়, আইসি (বোলপুর) অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এবং পাড়ুই থানার ওসি-র নেতৃত্বে বড় পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০৬:০৬
মৃত সাবেরা বিবি।

মৃত সাবেরা বিবি।

দুই পড়শি পরিবারের জমি-বিবাদ নিয়ে মীমাংসা হওয়ার কথা ছিল সোমবার। তার তিন দিন আগে ওই জমি নিয়ে বিবাদেই খুন হয়ে গেলেন একটি পরিবারের মহিলা। অভিযোগ উঠল প্রতিবেশী পরিবারের বিরুদ্ধেই। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে, পাড়ুই থানার খুষ্টিগিরি গ্রামের পশ্চিমপাড়ায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সাবেরা বিবি (৪৫)। ওই ঘটনার পরে অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠল গ্রামবাসীর একাংশের বিরুদ্ধে।

খুনের খবর পৌছনোর পরে এসডিপিও (বোলপুর) অভিষেক রায়, আইসি (বোলপুর) অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এবং পাড়ুই থানার ওসি-র নেতৃত্বে বড় পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। গ্রামে উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট চলছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ হয়নি। তবে, পুলিশ কয়েক জন সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য সাবেরার দেহ পাঠানো হয়েছে সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে সাবেরা বিবি যখন বাড়িতে একা ছিলেন, তখন প্রতিবেশী শেখ মনির তাঁদের দু’জনের জমির মাঝে পাঁচিল দিচ্ছিলেন। এই পাঁচিল নিয়ে আগেও বহুবার বাদানুবাদ হয়েছে দুই পক্ষে। অভিযোগ, এ দিন দুই পরিবারের অশান্তি চরমে উঠলে শেখ মনির ও তাঁর স্ত্রী মীরা বিবি সাবেরার উপরে চড়াও হন এবং মারধর করেন। মারের চোটে বাড়ির উঠোনে লুটিয়ে পড়েন সাবেরা। তখন উঠোনের পাশে পড়ে থাকা বড় পাথরের টুকরো দিয়ে তাঁকে থেঁতলে মারা হয় বলে অভিযোগ। নিহতের স্বামী শেখ মুন্তাজ পেশায় ভ্যান চালক। ঘটনার সময় তিনি স্থানীয় পলাশি গ্রামে ভ্যান নিয়ে ভাড়ায় গিয়েছিলেন। স্ত্রীকে খুন করা হয়েছে শুনে বাড়ি ফিরেই রক্তাক্ত সাবেরা বিবিকে নিয়ে প্রথমে বাতিকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা ওই মহিলাকে মৃত বলে জানালেও বিশ্বাস করতে চাননি শেখ মুন্তাজ। ফের ছোটেন কিছুটা দূরে অবিনাশপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানেও চিকিৎসকেরা সাবেরার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে দেন।

উত্তপ্ত: পড়শি বাড়ির মহিলাকে খুনের অভিযোগের জেরে পোড়ানো হল অভিযুক্তদের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দারা জানান, এ দিন নমাজের সময় ঘটনাটি ঘটায় গ্রামের অনেকেই তখন মসজিদে ছিলেন। খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে খষ্টিগিরি গ্রাম। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তেজিত জনতা শেখ মনিরের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এলাকাবাসীর একাংশের যদিও দাবি, অভিযুক্তেরা নিজেরাই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে এলাকা ছেড়ে পালায়। সিউড়ি থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো।

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সাবেরা বিবির বাড়িতে ভিড় করেছেন পড়শিরা। তাঁর দেহ ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। গ্রামবাসীরা জানান, সাবেরা বিবির বাড়ি লাগোয়া জমিতে ঘর বানাচ্ছিলেন শেখ মুনির। জমিতে পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল মাস খানেক আগে। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তির সূত্রপাত তখন থেকেই। স্থানীয় বাতিকার গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, সাবেরা বিবির পরিবারের পক্ষ থেকে ওই পাঁচিল নিয়ে আপত্তির বিষয়টি পঞ্চায়েতে জানানোর পরে সরেজমিনে খতিয়ে দেখে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আগামী ৪ মার্চ আমিন দিয়ে জমির মাপজোক করে নিষ্পত্তির কথাও হয়েছিল। নোটিস পাওয়ার পরেও মনির তা উপেক্ষা করে এ দিন পাঁচিলের কাজ শুরু করতে যাওয়ার ফলেই এত বড় ঘটনা ঘটল বলে দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা।

এই গলিতে পাঁচিল দেওয়া নিয়েই বিবাদ। শুক্রবার পাড়ুইয়ে। নিজস্ব চিত্র

বাতিকার পঞ্চায়েতের প্রধান আয়েষা বিবি বলেন, ‘‘পাঁচিল নিয়ে সমস্যার কথা সাবেরা বিবি দু’বার আমাদের জানিয়েছিলেন। এর পরেই পঞ্চায়েত থেকে একটি লিখিত নোটিস মনিরের পরিবারকে দেওয়া হয়েছিল কাজ স্থগিত রাখার জন্য। সোমবার এই জায়গা সংক্রান্ত মীমাংসার দিন ধার্য হয়েছিল। তার আগেই এত কিছু ঘটে গেল!’’ শেখ মুন্তাজ বলেন, ‘‘সকালে পলাশি গ্রামে গিয়েছিলাম প্যান্ডেলের কিছু সামগ্রী পৌঁছে দিতে। বাড়ি ফিরে দেখি স্ত্রীকে মেরে ফেলেছে। আমি দোষীদের কঠিন শাস্তি চাই।’’

Murder Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy