Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Sponge iron factory

Raghunathpur: স্পঞ্জ আয়রন কারখানা গড়ায় ‘আপত্তি’ শুনানিতে

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েতে ধটাড়া ও আমতোড় মৌজায় ২০০৭ সালে ৮৪ জন জমি মালিকের কাছে তিরিশ একর জমি কিনেছিল সংস্থাটি।

রঘুনাথপুরে কারখানা তৈরি নিয়ে জনশুনানি। মঙ্গলবার।

রঘুনাথপুরে কারখানা তৈরি নিয়ে জনশুনানি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৪০
Share: Save:

প্রায় পনেরো বছর আগে কারখানার জন্য জমি কিনেছিল সংস্থা। মদ তৈরির কাঁচামালের কারখানা হবে বলে তখন জানানো হয়েছিল, দাবি জমিদাতাদের। তবে তা হয়নি। এখন সে জমিতে স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তৈরি করতে চাইছে বেসরকারি সংস্থাটি। কিন্তু জনশুনানিতে সে কারখানা তৈরির বিষয়ে আপত্তি তুলে ক্ষোভ জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন জমিদাতাদের একাংশ। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকে এই ঘটনার পরেও অবশ্য কারখানা গড়ার বিষয়ে তাঁরা আশাবাদী বলে জানান সংস্থার কর্তারা। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট অচিন মজুমদারের কথায়, ‘‘দূষণ সংক্রান্ত বিষয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি আছে। সকলকে বুঝিয়েই এখানে কারখানা তৈরির বিষয়ে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী।’’

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েতে ধটাড়া ও আমতোড় মৌজায় ২০০৭ সালে ৮৪ জন জমি মালিকের কাছে তিরিশ একর জমি কিনেছিল সংস্থাটি। জমিদাতাদের দাবি, সে সময়ে সংস্থা জানিয়েছিল, মদের কাঁচামাল তৈরির কারখানা করা হবে। সংস্থার সঙ্গে জমিদাতাদের চুক্তি হয়েছিল, কারখানায় পরিবার প্রতি চাকরি মিলবে। অভিযোগ, তার পরে পনেরো বছর পেরিয়ে গেলেও, মদ তৈরির কাঁচামালের কারখানা গড়তে একটি ইটও গাঁথা হয়নি। এখন সংস্থাটি ওই জমিতে স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে।

সে জন্য মঙ্গলবার রঘুনাথপুর শহরে পঞ্চায়েত সমিতির কমিউনিটি হলে জনশুনানির আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। ছিলেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) রাজেশ রাঠৌর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার স্বরূপকুমার মণ্ডল, বিডিও (রঘুনাথপুর ১) রবিশঙ্কর গুপ্ত প্রমুখ। সংস্থাটির তরফে শুনানিতে দাবি করা হয়, তারা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ইস্পাত কারখানা তৈরি করবে। বিনিয়োগ করা হবে দু’শো কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে আড়াইশো জনের। ‘বিলেট’ উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করা হবে। সংস্থার দাবি, উন্নত পদ্ধতিতে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উন্নত মানের কয়লা নিয়ে এসে উৎপাদন হবে। ফলে, দূষণ হবে না।

যদিও সংস্থার দাবিতে সন্তুষ্ট হননি জমিদাতাদের বড় অংশ। তাঁদের পাল্টা দাবি, যে এলাকায় স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তৈরি করা হবে, তার পাশেই আছে কয়েকটি গ্রাম। প্রস্তাবিত কারখানার অদূরে রয়েছে আমতোড়, ধটাড়া, শুড়িসগড়া, আগুইবাড়ি-সহ নানা গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও প্রাথমিক স্কুল। কিছুটা দূরে আছে উতলা, পাথরটিকরি নদী। বাসিন্দাদের দাবি, কারখানার বর্জ্য গিয়ে পড়বে সে নদীতে। দূষিত হবে জল। তবে সংস্থার দাবি, কারখানার বর্জ্য জল কারখানার মধ্যেই পরিশোধন করে নানা কাজে ব্যবহার করা হবে।

জমিদাতাদের অনেকেই অবশ্য এলাকায় স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তৈরির বিরোধিতা করে শুনানি ছেড়ে বেরিয়ে যান। পরে, জমিদাতাদের তরফে সাধন মণ্ডল, অমল মণ্ডল, তৌহিদ আনসারি, নিমাই বাউড়ি, কালিপদ মুর্মু, উত্তম সিংহেরা দাবি করেন, ‘‘পাশের নিতুড়িয়া ব্লকে স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তৈরির পরে, ওই এলাকা ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে। গবাদি পশু থেকে শিশু, সবাই দূষণের শিকার। ফসল উৎপাদন কমেছে। আমরা এলাকায় এর পুনারাবৃত্তি হতে দেব না।’’ সাধনের অভিযোগ, ‘‘পনেরো বছর আগে মদ তৈরির কাঁচামাল তৈরি হবে বলে সংস্থাকে জমি বিক্রি করেছিলাম। চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় মাত্র ছ’শো টাকা প্রতি ডেসিমিল দরে জমি বিক্রি করেছি। এখন সংস্থা স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তৈরি করতে চাইছে। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে।’’

এ দিন জমিদাতাদের আপত্তি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তা স্বরূপবাবু। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) রাজেশ রাঠৌর বলেন, ‘‘যে কোনও কারখানা তৈরির আগে জনশুনানি বাধ্যতামূলক। জমিদাতাদের বক্তব্য ও কারখানা কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা শোনা হয়েছে। এর পরে, সিদ্ধান্ত নেবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।’’ জমিদাতাদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উড়িয়ে ওই সংস্থার সিএমডি প্রদীপ ভরদ্বাজের দাবি, ২০০৭ সালে জমি কেনার পরে, কারখানা তৈরির জন্য শেষ অবধি লাইসেন্স মেলেনি বলেই পানীয়ের কারখানাটি তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট অচিনবাবু বলেন, ‘‘কিছু জমিদাতার মধ্যে দূষণ নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। কিন্তু অনেকেই চান, কারখানা হোক। তা হলে কর্মসংস্থান হবে। আমরা কারখানা তৈরির বিষয়ে আশাবাদী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sponge iron factory Raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE