রামপুরহাটে ফাঁকা রইল ডাকঘর।
ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের বাইরে লাইন। টাকা নিয়ে হাপিত্যেশ। রোজকার খরচ চালানোর দুর্ভোগ।— কেন্ত্রীয় সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে সপ্তাহ কেটে গেলেও চেনা ছবি খুব একটা বদলাল না বুধবারও! রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, বোলপুরের বহু ডাকঘরে লাইন থেকে ফেরানো হল গ্রাহকদের!
এ দিনই টাকা বাতিলের সিদ্ধান্তে মানুষের ভোগান্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের লাঠি খেলেন এসইউসিআই-এর কয়েকজন সদস্য। সিউড়ি প্রশাসন ভবনের সামনের মূল রাস্তা অবরোধ করে এ দিন প্রধান মন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কিছু সমর্থক। কিন্তু হঠাৎ-ই সমর্থকদের উপরে বিনা প্ররোচনায় লাঠি চার্জ করে সিউড়ি থানা পুলিশ বলে অভিযোগ। জখম হয়েছেন একজন বর্ষিয়ান সদস্য কার্তিক হাজরা।
দলের জেলা সম্পাদক মদন ঘটকের দাবি, ‘‘একটি ঘোষিত মিনিট পনোরের কর্মসূচি। তাতে এ ভাবে লাঠি চার্জ। এমনিতেই তো আমাদের সমর্থকেরা ওখানে থেকে সরে আসছিলেন। বর্ষিয়ান সমর্থক, মহিলাদের উপর লাঠি না চালিয়ে, এলাকার চুরি ছিনতাই রুখতে লাঠি চালালে মানুষ খুশি হতেন।’’ পুলিশ অবশ্য প্রকাশে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে আড়ালে তাঁদের দাবি, অবরোধ তুলতেই এটা করা হয়েছে।
এই মহকুমারই একটি ব্যাঙ্কে এ ভাবেই টাকা নিয়ে আসা হল অন্য একটি ব্যাঙ্ক থেকে। — সব্যসাচী ইসলাম।
তবে যে দুর্ভোগ নিয়ে এত কাণ্ড, অনেকের মতে, এ দিন থেকে দুর্ভোগের পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলাতে শুরু করেছে। ব্যাঙ্কের বাইরে প্রতীক্ষমান জনতার ভিড় কিছুটা কম। একটু বেশি সংখ্যায় এটিএমগুলি কাজ করতে শুরু করেছে। রামপুরহাট মহকুমা বাদ দিলে প্রত্যন্ত ডাক ঘর থেকেও টাকা মিলতে শুরু করছে এ দিন থেকে। রামপুরহাট মহকুমার প্রধান ডাকঘর-সহ ১৮টি উপ ডাকঘরগুলি থেকে টাকা পাননি গ্রাহকরা। ব্যাঙ্ক থেকে পর্যাপ্ত টাকা না পাওয়ার জন্য মঙ্গলবার বিকাল থেকেই সমস্যায় পড়েছেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। রামপুরহাট পাঁচমাথা মোড় লাগোয়া রামপুরহাট মহকুমার প্রধান ডাকঘরের কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে তিনটের পরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দেড়শো থেকে দুশো গ্রাহককে পুলিশের সাহায্য নিয়ে ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য হন ডাক কর্মচারীরা। এতে বুধবার সকাল থেকে মহকুমার প্রত্যেকটি ডাকঘর গুলিতে টাকা তোলা ও নোট বদল বন্ধ থাকার জন্য কার্যত ফাঁকাই ছিল।
রামপুরহাট মহকুমার প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে পর্যাপ্ত টাকা না পাওয়ার জন্য মঙ্গলবার বিকাল থেকে গ্রাহকদের ঘুরিয়ে দিতে হয়েছে। বুধবার সকালেও স্টেট ব্যাঙ্কের রামপুরহাট প্রধান কার্যালয় থেকে ১ কোটি টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এত টাকা দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেয়। এর ফলে সকালেই গ্রাহকদের জানিয়ে দেওয়া হয় টাকা তোলা ও নোট বদল বন্ধ রাখা হয়েছে।” তিনি জানান, ব্যাঙ্ক থেকে পর্যাপ্ত টাকা না পাওয়ার জন্য মহকুমা এলাকার উপডাকঘর গুলিতে আজ বৃহস্পতিবারও টাকা তোলা ও নোট বদল বন্ধ রাখা হবে। তবে রামপুরহাট প্রধান কার্যালয় থেকে টাকা তোলা ও নোট বদল চালু রাখা হবে।
ডাকঘর পরিষেবা নিয়ে জেলা পোস্টাল সুপারিনটেন্ডেন্ট পরিমল মিত্র বলেন, ‘‘রামপুরহাট মহকুমায় এ দিন টাকার জোগান অনেক কমছিল স্টেট ব্যাঙ্ক থেকেই। তাই সমস্যা হয়েছে। আমি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি।’’ ডাকঘর সূত্রে খবর, জেলায় দুটি হেড পোস্ট অফিস ও ৫৯টি সাব পোস্ট অফিস রয়েছে। রামপুরহাট হেড পোস্ট অফিসের অন্তর্গত ১৮টি উপ ডাকঘর রয়েছে। সেখানে আজ ব্যাঙ্ক থেকে টাকার জোগান ছিল মাত্র ত্রিশ লক্ষ। সমস্যা সেই কারণেই।
ডাকঘরের এমন পরিস্থিতিতে এ দিন রামপুরহাট স্টেট ব্যঙ্কের দুটি শাখায় ভিড় একটু বেশি লক্ষ করা গিয়েছে। খুচরো সঙ্কট দেখা গিয়েছে জেলার বাজারে। ভিড় ছিল বোলপুর, সাঁইথিয়ার ব্যাঙ্কগুলির সামনেও। সাঁইথিয়াতেও ডাকঘর থেকে ফিরে যান গ্রাহকরা। বোলপুরে ফি দিনের মতো সকালে পুরসভার নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে, কার্যত চোখ চড়ক গাছ বোলপুর পুরসভার সাফাই কর্মীদের। তাঁরা দেখেন, নোংরা-আবর্জনার সঙ্গে বাতিল ৫০০ টাকার নোট ভাসছে নর্দমায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনাটি বুধবার সকালে ঘটেছে বোলপুর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর ভাগবত নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের পিছনের হাই ড্রেনে। ফি দিনের মতো পুরসভার বিভিন্ন এলাকার হাইড্রেন পরিস্কারের জন্য কর্মী পাঠান ওই কাজের সুপারভাইজার পার্থ সাহা। সকাল আটটা নাগাদ তাঁরা নোট উঠে আসার কথা জানান। খবর যায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সেলার পর্ণা ঘোষের কাছে। খবর চাউর হওয়া পরেই ভিড় জমতে শুরু করে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান ওই হাইড্রেন এলাকা থেকে পাওয়া ছেঁড়া অনেক নোট জাল।’’
পর্ণা ঘোষ বলেন, “তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বোলপুর পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
পার্থ সাহার দাবি, ‘‘সাফাই কর্মী ও স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। হাজার চল্লিশ মতো ছেঁড়া নোট হাইড্রেনে পড়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে, তদন্ত শুরু করেছে।’’ জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের এ দিন দাবি, ‘‘পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক হয়ে যাবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে।’’
এ দিন জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর অবশ্য বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত ঠিকই। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকার জোগান এখনও সীমিত। শুধু টাকার যোগান বাড়লেই পরিস্থিতি আরও ভাল হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy