Advertisement
E-Paper

এ কেমন খেলা?

টাকা নেই বলে মাঠ থেকে বাদ পড়ল জেলার প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারা। খোঁজ নিলেন দয়াল সেনগুপ্ত।টাকা নেই বলে মাঠ থেকে বাদ পড়ল জেলার প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারা। খোঁজ নিলেন দয়াল সেনগুপ্ত।

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:০১
বাদ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরাই। —ফাইল চিত্র

বাদ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরাই। —ফাইল চিত্র

খেলার মাঠে এ বছর ঠাঁই নেই ওদের। দুবারজপুরের হেতমপুরের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী দিশা পাল, মুরারইয়ের তৃতীয় শ্রেণির বিভূসুন্দর দত্ত, এখনও বুঝে উঠতে পারছে না, কেন ওদের মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছে, অন্য বন্ধুরা খেলছে। জেলার ৬৭২০ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন স্কুলপড়ুয়ার বাবা-মা তাদের বুঝিয়ে উঠতে পারেননি, কেন আনন্দের আয়োজন থেকে বাদ পড়ল ওরা।

আজ, রবিবার, প্রাথমিক স্কুলপড়ুয়াদের জেলা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শেষ দিন। বোলপুরে শনি আর রবি, দু’দিনের বিশাল আয়োজন। বালক ও বালিকা বিভাগের ১৪টি করে ২৮টি ইভেন্টে অংশ নেবে জেলার ৩২টি চক্রের প্রায় ৩০০ পড়ুয়া। ব্রাত্য রইল কেবল প্রতিবন্ধী শিশুরা। সরকার মুখে ‘ইনক্লুসিভ এডুকেশন’-এর বুলি কপচালেও, কাজের বেলা খেলার মাঠ থেকে সবার আগে বাদ পড়েছে এই শিশুরাই।

কেন এমন অমানবিক ব্যবহার?

বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এর কারণ টাকার অভাব। ২০১৩ সাল পর্যন্ত সার্কেল-প্রতি ১০ হাজার টাকা, মহকুমা প্রতি ২০ হাজার টাকা ও জেলা স্তরে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বার্ষিক ক্রীড়ার জন্য। কিন্ত গত বছর থেকে ক্রীড়ার জন্য কোনও অনুদান আসছে না। তবুও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ নিজেদের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের খেলানোর আয়োজন করেছিল গত বছর। বাড়তি ইভেন্ট, তার পুরস্কার, অভিভাবক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের যাতায়াতের খরচ, সব স্কুলগুলিই জুগিয়েছিল। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জেলা সমন্বয়কারী শুকদেব চক্রবর্তী বলছেন গত বছরও জেলাস্তরে এমন প্রতিযোগী ছিল প্রায় ৪০জন।

কিন্তু শিক্ষকেরা একান্তে জানাচ্ছেন, এ বছর বার্ষিক ক্রীড়া শুরুর আগেই স্কুলগুলির সঙ্গে বৈঠকে প্রতিটি সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক বলে দিয়েছিলেন, এ বার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা বাদ। তাই আর কেউ যেচে ঝক্কি নিতে চাননি। এমনিতেই আলাদা বরাদ্দ না আসায় শিক্ষকদের ৩০০-৪০০ টাকা চাঁদার উপর নির্ভর করে হচ্ছে স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। তাই জেলার ২৪০৩টি প্রাথমিক স্কুলের অধিকাংশই এবার স্কুলের স্পোর্টসেই নামায়নি প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের। যে ক’টি স্কুল সে সুযোগ দিয়েছে, সেগুলিও স্কুলের পর চক্র, মহকুমা বা জেলা স্তরে খেলার সুযোগ করে দেয়নি। ফলে এ বছর জেলা স্তরের দু’দিনের প্রতিযোগিতায় ব্রাত্য রয়ে গেল দিশা, বিভূসুন্দরেরা।

প্রতিবন্ধী শিশুদের এমন বঞ্চনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরাও। তাঁদের একজন বলেন, ‘‘ওরাও স্কুলেরই ছাত্রছাত্রী। তাহলে কেন এমনভাবে বঞ্চিত করা হল ওই শিশুদের?’’ অনেকে প্রশ্ন তোলেন, পাড়ার ক্লাবগুলোকে খেলাধুলোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সামান্য কিছু টাকা খরচ করতে নারাজ সরকার। এর আগে পূর্ব মেদিনীপুরেও প্রাথমিক স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাদ পড়েছিল প্রতিবন্ধীরা। এ বার একই কাণ্ড দেখল বীরভূম।

বীরভূমের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ অবশ্য মানতে চাননি যে প্রতিবন্ধী শিশুদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ স্কুলগুলিকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কোথাও বলা হয়নি, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা অংশ নিতে পারবে না। তবে তাদেরকে তো স্কুল, চক্র, মহকুমা পেরিয়ে এখানে আসতে হবে। তেমন কোনও পড়ুয়া যদি এসে থাকে তাহলে সে অংশ নেবে জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায়।’’ যা শুনে শিক্ষক অভিভাবকেরা বলছেন, যেখানে স্কুলেই খেলা হল না, সেখানে জেলায় কী ভাবে পৌঁছবে প্রতিবন্ধী শিশুরা?

জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে, এবং বিশেষচাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণের কাজে যাঁরা নিযুক্ত, সেই সব প্রশিক্ষকদের কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ ইভেন্ট বলতে থাকত সফট বল থ্রো, শটপাট (ছোট বল), ৭৫ মিটার, ১০০ মিটার দৌড়, বোচে বল (দু’টি রঙের দু’টি করে বল ছুঁড়ে খেলা)। স্কুলের সেরারা এই ভাবে চক্র, মহকুমার গণ্ডী পরিয়ে জেলা স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে এতদিন।

সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বিপ্লব মণ্ডল বলছেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সাহয্যের জন্য বিভিন্ন খাতে টাকা এসে থাকে। সেটা যথারীতি চলছে। তবে গত বছর থেকে স্পোর্টসের জন্য কোনও টাকা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘বার্ষিক ক্রীড়া করানোর তো খরচ আছে। তাই একসঙ্গে ক্রীড়ার আয়োজন করা গেল না। তবে কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া, যারা সাধারণদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে, তাদের অংশ নিতে বাধা নেই।’’

যা শুনে অভিভাবকেরা বলছেন, ‘‘এমনটা হয় নাকি? তাহলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বলা হচ্ছে কেন?’’ তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্যারা অলিম্পিকে এমন অনেক প্রতিযোগীই পদক নিয়ে এসে জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে. যাঁদের হাতেখড়ি হয়েছিল স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়।

physically challenged students dayal sengupta money sports
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy