Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আশ্বাসে রেহাই পেল না বাঁকুড়া

পুলিশের অবশ্য দাবি, কালীপুজোর রাতে সাউন্ডবক্স বা শব্দবাজি ফাটানো নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল।

আঁধারভেদী: পুরুলিয়ার বি টি সরকার রোডে। ছবি: সুজিত মাহাতো

আঁধারভেদী: পুরুলিয়ার বি টি সরকার রোডে। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব প্রতিবেদন
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫৫
Share: Save:

শব্দ-তাণ্ডব রুখতে কড়া নজর রাখার আশ্বাস দিয়েছিল পুলিশ। বাস্তবে অবশ্য সেই আশ্বাস কাজে এল না। রবিবার রাতভর বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় শব্দের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েছেন বাসিন্দারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আঙুল উঠেছে সাউন্ডবক্সের দিকে। ফেটেছে নিষিদ্ধ শব্দবাজিও।

পুলিশের অবশ্য দাবি, কালীপুজোর রাতে সাউন্ডবক্স বা শব্দবাজি ফাটানো নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “পুলিশের টহল চলেছে রাতভর। কোথাও নিয়ম ভেঙে সাউন্ডবক্স বাজানো হচ্ছে দেখা গেলেই তা বন্ধ করা হয়েছে।”

এ দিকে শহরের অনেক বাসিন্দাই অভিযোগ করছেন, গভীর রাত পর্যন্ত সাউন্ডবক্সের দৌরাত্ম্যে কান ঝালাপালা হয়েছে। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের শিক্ষক তথা নাট্যকর্মী অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গভীর রাত পর্যন্ত সাউন্ড বক্সের আওয়াজ ঘরের ভিতরে এসেছে। বাইরে কান পাতাই ছিল দায়।” বাঁকুড়ার প্রতাপবাগানের বাসিন্দা মগরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুকেশ পাত্র বলেন, “তারস্বরে সাউন্ড বক্স বেজেছে। মাত্রা এতটাই ছিল, যে বাড়ির জানালার কাচ কাঁপছিল। রাত ১১টার পরেও আওয়াজের মাত্রা কমেনি।’’ শহরের পাঠকপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, গভীর রাত পর্যন্ত সাউন্ড বক্সের দাপাদাপি ছিল। শহরের সুকান্তপল্লির বাসিন্দা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাতে সাউন্ডবক্সের দাপাদাপি শুনিনি, তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত শব্দবাজি ও সাউন্ডবক্সের উৎপাত চলেছে।’’

কালীপুজো বা মনসা পুজোতে শহরে সাউন্ডবক্সের দাপাদাপি কমাতে নানা আশ্বাস দেয় পুলিশ। তার পরেও এই সমস্যা কেন মেটানো যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। পুলিশ সুপার বলেন, “সাউন্ডবক্স নিয়মের মধ্যে বাজানোর নির্দেশ আমরা সব পুজো কমিটিকেই দিয়েছিলাম।” বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্ত বলেন, “কেবল নির্দেশ দিলেই হবে না, নিয়ম ভেঙে যারা সাউন্ডবক্স বাজায়, এমন কিছু পুজো কমিটিকে চিহ্নিত করে আগামী বার তাদের পুজোর অনুমতি দেওয়ার আগে পুলিশ আরও কড়া হোক।”

কেবল বাঁকুড়া শহর নয়, জেলার আরও এক মহকুমা শহর খাতড়াতেও বিভিন্ন জায়গায় অনেক রাত পর্যন্ত সাউন্ডবক্স বেজেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ। বিক্ষিপ্ত ভাবে শব্দবাজিও ফেটেছে বলে নালিশ করেছেন তাঁরা। বিষ্ণুপুর শহরে অবশ্য সাউন্ডবক্সের তুলনায় বেশি দাপিয়েছে শব্দবাজি। শহরের স্টেশনরোড থেকে ঝাপড়মোড়, তিলবাড়ি, মল্লেশ্বর এলাকার মানুষজনও এই অভিযোগ তুলেছেন। কোথাও ফাটানো হয়েছে কালীপটকার চেন, আবার কোথাও চকোলেট বোমা বা গাছ বোমা। শহরে সাউন্ড বক্সের দাপাদাপি সন্ধ্যার পরে তেমন ছিল না বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।

একই ঘটনা দেখা গিয়েছে সোনামুখী শহরেও। রাত ১০টার পরে, ঘণ্টাখানেক শব্দবাজি দাপাদাপি চলেছে বলে অভিযোগ সেখানকার বাসিন্দাদের। তবে সাউন্ডবক্সের দৌরাত্ম্য তেমন ছিল না বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। পুলিশের কড়াকড়ি সত্বেও বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী শহরে নিষিদ্ধ শব্দবাজির রমরমা হল কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী জানান, সোমবার বিষ্ণুপুর, সোনামুখী ও পাত্রসায়র থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৫০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ সচেতন হওয়ায় সাউন্ডবক্সের উপদ্রব এ বার ছিল না। তবে শব্দবাজি বিক্ষিপ্ত ভাবে ফেটেছে। কী ভাবে সাধারণ মানুষের হাতে শব্দবাজি এল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Crackers Kali Puja 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE