Advertisement
E-Paper

হেলমেট নেই! হেঁটে থানায় যান

শনিবার দুপুরে বাড়িতে অতিথি এসেছেন। তাঁদের জন্য ঠান্ডা পানীয় কিনতে মোটরবাইকে এক জনকে চাপিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে কাশীপুর বাজারে ছুটেছিলেন স্থানীয় দৈকিয়ারি গ্রামের এক যুবক। কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৭
সচেতন: ছেলের জন্য হেলমেট কিনে এনে চাবি ফেরত পেলেন মোটরবাইক চালক। কাশীপুরে শনিবার। নিজস্ব চিত্র

সচেতন: ছেলের জন্য হেলমেট কিনে এনে চাবি ফেরত পেলেন মোটরবাইক চালক। কাশীপুরে শনিবার। নিজস্ব চিত্র

শনিবার দুপুরে বাড়িতে অতিথি এসেছেন। তাঁদের জন্য ঠান্ডা পানীয় কিনতে মোটরবাইকে এক জনকে চাপিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে কাশীপুর বাজারে ছুটেছিলেন স্থানীয় দৈকিয়ারি গ্রামের এক যুবক। কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। কিন্তু তখন কাশীপুরে যে স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে রঘুনাথপুরের এসডিপিও অভিজিৎ চৌধুরী, থানার ওসি পার্থ ভুঁইয়া, পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর সচেতনতায় প্রচারে বেরিয়েছেন, তা ঘুণাক্ষরেও মালুম হয়নি তাঁদের। হেলমেটহীন দুই আরোহীকে দেখেই তাঁদের মোটরবাইক থামিয়ে দেন খোদ এসডিপিও। হেলমেট কোথায়? চালকের জবাব, ‘‘তাড়াহুড়োয় বেরিয়ে স্যার। হেলমেট বাড়িতে রয়েছে।’’ পুলিশ কর্তার প্রশ্ন— যদি দুর্ঘটনা ঘটে যায়? আমতা আমতা করে চালকের জবাব, ‘‘হেলমেট পরা উচিত ছিল ঠিকই। আর ভুল হবে না। এ বার থেকে নেব।’’ কিন্তু কথায় ভোলেনি পুলিশ। ততক্ষণে মোটরবাইকে চাবি খুলে নিয়েছেন এক পুলিশ কর্মী।

এ বার একটি মোটরবাইকে তিন জন। তাঁদের মাথাতেও হেলমেট নেই। দূর থেকে পুলিশের ধরপাকড় দেখে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রেহাই পাননি। তাঁদের পুলিশ কর্তার প্রশ্ন— ‘‘একটি মোটরবাইকে তিন জন! হেলমেটও পরেননি!’’ হুড়ার খৈরি গ্রামের বাসিন্দা গাড়ি চালকের জবাব, ‘‘সামনেই এটিএম থেকে টাকা তুলব বলে এ দিকে যাচ্ছিলাম। তবে অন্য সময় কিন্তু হেলমেট পরি। তাড়াতাড়িতে বেরিয়েছি বলে হেলমেট নেওয়া হয়নি।’’ তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। কথাবার্তার মাঝেই তাঁদের মোটরবাইক থেকে ততক্ষণে চাবি খুলে নিয়েছেন এক পুলিশ কর্মী।

একই কারণে আটকা পড়লেন চুনাভাটি, বেকো, ধতলা গ্রামের কয়েকজন। একে একে সবার মোটরবাইকের চাবি কেড়ে নেয় পুলিশ। রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশকে চাবি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনেকে কাকুতি মিনতি করে দেখা যায়। কিন্তু নরম হননি পুলিশ কর্মীরা। এসডিপিও তাঁদের বলেন, ‘‘কাশীপুর থানা পর্যন্ত মোটরবাইক ঠেলে ঠেলে নিয়ে আসুন। সেখানে চাবি পাবেন।’’

বাধ্য হয়ে ঘামতে ঘামতে তাঁদের প্রায় এক কিলোমিটার পথ মোটরবাইক ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যেতে হয়। অনেককে রাগে গজগজ করেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেন— ‘‘পুলিশ যখন নিজেরা হেলমেট ছাড়া ঘোরে, তাঁদের কে ধরবে?’’

অন্য ছবিও রয়েছে। ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন কালীদহ পঞ্চায়েত এলাকার ভাতুইকেন্দ গ্রামের বাসিন্দা নিত্যানন্দ মাহাতো। নিজের মাথায় হেলমেট থাকলেও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে পরীক্ষিতের মাথা ছিল ফাঁকা। তাঁকে আটকে পুলিশ কর্তার প্রশ্ন ছিল, ‘‘আপনার মাথা হেলমেটে ঢাকা, আর ছেলের মাথা ফাঁকা? ওর হেলমেটের প্রয়োজন নেই?’’

চুপ করে যান নিত্যানন্দবাবু।

দ্রুত দোকান খুঁজে ছেলের জন্য হেলমেট কিনে তা দেখাতে ছোটেন পুলিশ কর্তার কাছে। গিয়ে বলেন, ‘‘ঠিকই বলেছেন স্যার। আমার হেলমেট থাকলে ছেলের থাকবে না কেন? এত দিন এ ভাবে ভাবিনি। আজ থেকে ওকে হেলমেট পরিয়েই মোটরবাইকে তুলব।’’ এসডিপিও খুশি হয়ে তাঁর হাতে চাবি ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনার এই দায়িত্ববোধ ভাল লাগল বলেই চাবি ফেরালাম। তবে প্রতিশ্রুতির কথা ভুলবেন না।’’

জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘আপাতত অল্পের উপরে ছাড় দেওয়া হল। এরপর নিয়ম ভাঙলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Police Helmet Bike Riders Safe Drive Save Life
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy