Advertisement
E-Paper

বর্ষশেষের উষ্ণতায় ঘুচে গেল ব্যবধান

পুলিশ জনসংযোগের জন্য বছরভর নানা কর্মসূচি পালন করে। গ্রামে ফুটবল খেলা, ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের জন্যে কোচিং সেন্টার, শীতে কম্বল, গরমে মশারি বিলি আরও অনেক কিছু।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫২
আড্ডা: বাঁ দিকে সিপিএমের বৈদ্যনাথ সোরেন, ডান দিকে তৃণমূল বিধায়ক রাজীব সোরেন। নিজস্ব চিত্র

আড্ডা: বাঁ দিকে সিপিএমের বৈদ্যনাথ সোরেন, ডান দিকে তৃণমূল বিধায়ক রাজীব সোরেন। নিজস্ব চিত্র

নতুন বছরের শুরুটা হল নতুন ভাবেই। এমনিতে তাঁরা যুযুধান রাজনৈতিক নেতা। মঞ্চে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলার নয়। রবিবার, পুরুলিয়ার বোরো থানায় বর্ষ বিদায়ের সন্ধ্যায় দেখা গেল, তৃণমূলের বিধায়ক সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদকের হাত ধরে আরও খান দুই গরম পকোড়া নেওয়ার জন্যে জোরাজুরি করছেন। আবার তৃণমূলের ব্লক সভাপতি খোঁজ নিচ্ছেন এই ঠান্ডায় কী ভাবে বিজেপি-র নেতা কর্মীরা বাড়ি ফিরবেন সেই ব্যাপারে। সম্পর্কের উষ্ণতায় পার হয়ে গেল একটা শীতের সন্ধ্যা। ফুরিয়ে গেল আরও একটা বছর।

পুলিশ জনসংযোগের জন্য বছরভর নানা কর্মসূচি পালন করে। গ্রামে ফুটবল খেলা, ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের জন্যে কোচিং সেন্টার, শীতে কম্বল, গরমে মশারি বিলি আরও অনেক কিছু। জেলা পুলিশের উদ্যোগে বোরো থানার পরিচালনায় রবিবার সন্ধ্যায় যে চা চক্র বসেছিল, সেটা বেশ কিছুটাই অন্য রকম বলে মনে করছেন জেলার অনেক বাসিন্দা। এক পদস্থ পুলিশ কর্তা জানান, জন সংযোগের কর্মসূচি হিসাবে বর্ষ বিদায়ের সন্ধ্যায় এই আয়োজন করা হয়েছিল। ঠান্ডা উপেক্ষা করে অনেকেই এসেছিলেন। এমন আয়োজন কেন? এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘এলাকায় অশান্তি হলে অনেক সময়ে দেখা যায় দুই পক্ষ দু’টি আলাদা রাজনৈতিক দলের শরণ নিয়েছে। দেখা গিয়েছে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে দুই দলের নেতারা বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছেন। এই সম্পর্কটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এর উপরেই জোর দিয়েছি।’’

চা চক্রে হাজির ছিলেন বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীব সোরেন। রাজীববাবুর মুখোমুখি বসেছিলেন সিপিএমের মানবাজার ২ উত্তর এরিয়া কমিটির সম্পাদক বৈদ্যনাথ সোরেন। বৈদ্যনাথবাবুর হাত ধরে রাজীববাবু বলেন, ‘‘আর এক রাউন্ড চা হয়ে যাক।’’ বৈদ্যনাথবাবু নিজের প্লেটের পকোড়া রাজীববাবুর প্লেটে তুলে দিয়ে বলেন, ‘‘তুমি তো কিছুই খাচ্ছ না। এই বয়সে না খেলে কখন খাবে? তোমাদের বয়সে এগুলো আমাদের কাছে কোনও ব্যাপারই ছিল না।’’

এ দিন দু’জনের আলাপের অধিকাংশই হয়েছে সাঁওতালিতে। রাজীববাবু বলেন, ‘‘আমি এখন বান্দোয়ানে থাকি। কিন্তু মানবাজার ২ ব্লকে আমার ছেলেবেলা কেটেছে। বৈদ্যনাথবাবু সম্পর্কে আমার দাদু হন।’’ আলাপচারিতায় উঠে এসেছে সেই ফেলে আসা দিনের কথা।

পুলিশ আধিকারিকরা ছিলেন যেন কনে কর্তার ভূমিকায়। রাশভারী মেজাজ ছেড়ে, কাউকে দাদা কাউকে ভাই বলে চায়ের কাপ নিয়ে সাধাসাধি করেছিলেন। এরই মধ্যে দেখা গেল, বিজেপি-র কৃত্তিবাস মাহাতো, বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়দের দেখা মিলল। উল্টো দিকের টেবিল থেকে উঁকি মেরে তৃণমূলের হংসেশ্বর মাহাতো, শান্তি গঙ্গোপাধ্যায়রা খোঁজ নিলেন, কৃত্তিবাসবাবুরা চা পেয়েছেন কি না। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামলী সোরেন চাদরটা ভাল করে জড়িয়ে নিয়ে বললেন, ‘‘ঠান্ডায় আসব না ভেবেছিলাম। এখন দেখছি, না এলে খুব মিস করতাম।’’

ছিলেন আরও অনেকেই। বিএমওএইচ কৌশিক ঢালি, রেঞ্জ আধিকারিক রোহন সিংহরাও চায়ের কাপ নিয়ে মশগুল আড্ডায়। বোরোর বাসিন্দা, পুরুলিয়া আদালতের আইনজীবী রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সব মিলিয়ে সন্ধ্যেটা দারুন কাটল।’’

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। অন্য থানায় এ রকম চায়ের আসর বসানো যায় কি না দেখছি।’’ দিনের শেষে অনেকের মোবাইল ক্যামেরায় এমনই টুকরো টুকরো ছবি বন্দি হয়ে থাকল নতুন বছরের রসদ হিসাবে।

Baidyanath Soren Rajib Soren New Year Celebration political leaders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy