Advertisement
E-Paper

পথে পুলিশি হেনস্থায় মৃত বৃদ্ধ, নালিশ

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বাসুদেবপুর গ্রাম থেকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিত্যানন্দবাবুকে মোটরবাইকে করে কোতুলপুরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর ছেলে সুজিত ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
রাস্তায়: বাবার দেহ নিয়ে সুজিত। নিজস্ব চিত্র

রাস্তায়: বাবার দেহ নিয়ে সুজিত। নিজস্ব চিত্র

মোটরবাইকে সওয়ার অসুস্থ বৃদ্ধের মাথায় হেলমেট ছিল না। অভিযোগ, সে কথা শুনতে চাননি পুলিশকর্মীরা। তাঁরা দাবি করেন, ধরা পড়ে যাওয়ায় ব়ৃদ্ধ অসুস্থতার ভান করছেন। পুলিশের থেকে ছাড়া পেয়ে যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে নিত্যানন্দ ঘোষ (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধের। সোমবার সন্ধ্যার ওই ঘটনার পরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন কিছু গ্রামবাসী। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের ছোড়া ইটে জখম হন এসডিপিও-সহ পাঁচ পুলিশকর্মী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বাসুদেবপুর গ্রাম থেকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিত্যানন্দবাবুকে মোটরবাইকে করে কোতুলপুরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর ছেলে সুজিত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বাবা বেশ কিছু দিন ধরে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। আমরা ভেলোরে চিকিৎসা করাচ্ছিলাম।’’ তিনি জানান, সোমবার নিত্যানন্দবাবুর অল্পবিস্তর মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল। সে জন্য তিনি বাবাকে নিয়ে কোতুলপুর শহরে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলেন। তাঁর মাথায় হেলমেট থাকলেও নিত্যানন্দবাবুর মাথায় ছিল না। সুজিতের দাবি, মাথায় যন্ত্রণা হওয়ায় হেলমেট পরানো যায়নি নিত্যানন্দবাবুকে। পথে হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহী ধরার অভিযান চালাচ্ছিল কোতুলপুর থানার পুলিশ। তারা তাঁদের রাস্তা আটকান। তখন প্রায় সন্ধ্যা ৭টা।

সুজিতের দাবি, পুলিশ তাঁর কাছে মোটরবাইকের নথি দেখতে চায়। বৃদ্ধের মাথায় হেলমেট নেই কেন, সে প্রশ্ন তুলে শুরু হয় ‘হয়রানি’। তখন নিত্যানন্দবাবু ক্রমশ আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। সুজিতের অভিযোগ, তা দেখেও আমল দেননি পুলিশকর্মীরা। তাঁরা দাবি করেন, বৃদ্ধ ছাড়া পাওয়ার জন্য অসুস্থতার ভান করছেন। এ নিয়ে চাপান-উতোর চলাকালীন লুটিয়ে পড়েন নিত্যানন্দবাবু। সুজিত বলেন, ‘‘আমি পুলিশকর্মীদের হাতে-পায়ে ধরে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে বলি। কিন্তু ওঁরা তাতে কান দেননি।’’ তাঁর দাবি, বাধ্য হয়ে একটি টোটো ভাড়া করে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে গোগড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান বাবাকে। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, নিত্যানন্দবাবুর মৃত্যু হয়েছে।

এই খবর পেয়েই কোতুলপুর থানার সামনে হাজির হন এলাকার প্রায় পাঁচশো বাসিন্দা। নিত্যানন্দবাবুর দেহ আটকে তাঁরা থানার সামনে বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়কে অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস। বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা শুরু করেন পুলিশকর্তারা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে তা পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধের চেহারা নেয়। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটে এসডিপিও-সহ পাঁচ জন পুলিশকর্মী জখম হন। গোগড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। সুজিতের অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে জখম হয়েছেন তিনিও।

এ দিন ঘটনাস্থল থেকেই বাসুদেবপুরের দুই বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। তবে উত্তেজনাও রয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিত্যানন্দবাবুর দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। সোমবার রাত পর্যন্ত মৃতের পরিবারের তরফে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। এসডিপিও জানান, প্রাথমিক ভাবে দেহটি পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানিয়েছেন, হৃদরোগে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে ওই বৃদ্ধের।

পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি থানায় রুটিন চেক-আপ হয়। কোতুলপুরেও এ দিন হচ্ছিল। সুজিতবাবুর অভিযোগ ঠিক নয়। নথি না দেখাতে না পরে উনি থানায় মোটরবাইক জমা রেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার পরে রাস্তাতেই ওই বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েন।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবে না, এটা কি হতে পারে?’’

Police torture Elderly Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy