Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ইটভাটা-চালকলে দূষণের অভিযোগ

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই ইটভাটা তৈরির অভিযোগ উঠেছে।

ভাটার ছাই উড়ে কালো হয়ে গিয়েছে গাছের পাতা। নিজস্ব চিত্র

ভাটার ছাই উড়ে কালো হয়ে গিয়েছে গাছের পাতা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩০
Share: Save:

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই ইটভাটা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে রমরমিয়ে চলছে একধিক চালকলও। প্রশাসনের সকল স্তরে লিখিত ভাবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েও কোনও সুরাহা হয় নি বলে অভিযোগ। এর ফলে দূষণের জেরে আমোদপুর সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় নাভিশ্বাস বাসিন্দাদের।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়া থানা এলাকার মৃতদাসপুর গ্রামের কাছে একটি ইটভাটা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। দুষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওই ইটভাটা তৈরি করা হচ্ছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জনবসতি পূর্ণ এলাকা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি ইটভাটা করা যায় না। ওই ইটভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, নির্মীয়মাণ ওই ভাটার প্রায় ১৫-২০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে একটি পাড়া। প্রায় ১২০ মিটারের মধ্যে একটি বেসরকারি ও ৭০০ মিটারের মধ্যে একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। আমোদপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান কৌশিক প্রামাণিক, অমিতাভ ঘোষদের ক্ষোভ, ‘‘জনবহুল ওই এলাকায় ইটভাটা চালু হলে পরিবেশ দূষণের সঙ্গে কচিকাঁচাদের প্রাণ সংশয়ের সৃষ্টি হবে। ভাটায় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আনা ও ইট নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চলাচলও বেড়ে যাবে। স্কুল যাওয়া আসার পথে যে কোনও সময় কচিকাঁচারা দুর্ঘটনার কবলেও পড়তে পারে। ভাটার ছাই উড়ে পরিবেশ দূষিত হওয়ারও আশঙ্কাও রয়েছে। প্রশাসনের সকল স্তরে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি।’’

কেবল ইটভাটাই নয়, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধি অবমাননার অভিযোগ উঠেছে একাধিক চালকলের বিরুদ্ধেও। তালবোনা, ঈশ্বরপুর, জুঁইতা, সিঁদুরটোপা, ধোবাজোল, কামারশাল প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার বেশ কয়েকটি চালকলের বিরুদ্ধে। ওই চালকলগুলির ব্যবহার্য পচা জল ও ছাই এলাকার জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে বলে প্রশাসনের সকল স্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁদেরও অভিযোগ। তালবোনার বিশু কিস্কু, মনীষা মাড্ডিদের ক্ষোভ, ‘‘নালায় চালকলের পচা জল দাঁড়িয়ে থাকে। তা বের করার কোনও ব্যবস্থাই করা হয় না। দুর্গন্ধে আমরা তিষ্ঠোতে পারি না।’’ রঘুনাথ মাড্ডি, সনাতন মাড্ডিদের অভিযোগ, ‘‘লোকালয়ের অদূরেই দিনের পর দিন মিলের ছাই গাদা করে রাখা হয়। হাওয়ায় সেই ছাই উড়ে এসে বাড়িতে পড়ে। ফসলের উপরেও পড়ে। উৎপাদন মার খায়। প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণ করেও কোনও লাভ হয়নি।’’

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইটভাটা ও চালকল মালিকেরা। ইটভাটা মালিক চিরঞ্জীব ঘোষ ওরফে লালু বলেন, ‘‘ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিধি মেনেই ভাটা করা হচ্ছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা জেলা চালকল মালিক সমিতির সম্পাদক সঞ্জীব মজুমদারেরও দাবি, ওই অভিযোগ সত্যি নয়। প্রতিটি চালকলেই দূষণ বিধি মেনে চলা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও কোথাও চালকলের ব্যবহৃত জল নিকাশের নালা তৈরি হওয়ার পর বসতি গড়ে উঠেছে বলে ওই অভিযোগ উঠছে। তবে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াকরণের পরই জল নিষ্কাশন করা হয়। ছাইও লোকালয়ে বাইরে ফেলার জন্য কোনও সংস্থাকে ঠিকা দেওয়া থাকে।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘অভিযোগ যখন হয়েছে তখন মালিক সমিতির বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হবে।’’

সাঁইথিয়ার বিডিও স্বাতী দত্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE