সিউড়ির এক বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের ফাইনাল সেমেস্টার দেওয়া এক পড়ুয়াকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল তাঁরই জুনিয়র তিন ছাত্রের বিরুদ্ধে। শনিবার রাতে অভিযুক্ত তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করে রবিবার সিউড়ি আদালতে হাজির করায় পুলিশ। মামলার সরকারি আইনজীবী অসীমকুমার দাস জানান, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (৩) সুপ্রিয়া খান অভিযুক্তদের বারো দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ৫ তারিখ আক্রান্তের ইনজুরি রিপোর্ট এবং কেস ডায়েরি জমা করার জন্যেও পুলিশকে নির্দেশ দেন বিচারক।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে সিউড়ির লম্বোদরপুরের একটি মেসে। নিগৃহীত ছাত্র অভিজিৎ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘ড্রাগ নিয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জুনিয়ররা আমার গোটা শরীরে কাঁচি দিয়ে ক্ষত করে তার মধ্যে নুন-লঙ্কা ঘসে দেয়। বেল্ট দিয়েও মরা হয়েছে।’’ রাতভর অত্যাচারের পরে শনিবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে অভিজিৎ। কোনও ভাবে তা জেনে ওই মেসপাড়ার লোকেরাই অভিজিৎকে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই ছাত্রের সারা শরীরেই ক্ষত রয়েছে। তাঁকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
শনিবার রাতে সিউড়ি থানায় দায়ের করা অভিযোগে অভিজিৎ জানিয়েছেন, চলতি বর্ষে মেকানিক্যাল ফাইনাল সেমেস্টারের পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষার ফল জানতে শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের কোমরপুর গ্রামের বাড়ি থেকে সিউড়ি আসেন। কলেজেই দেখা হয় তাঁরই জুনিয়র, মেকানিক্যালের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে লম্বোদরপুরের মেসে যান। সেখানেই ছিল পূর্ব পরিচিত, অভিযুক্ত তিন জন। প্রত্যেকেই কলেজের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। আগে হস্টেলে থাকলেও বর্তমানে তাঁরা থাকেন তিলপাড়া পঞ্চায়েতের ওই মেসে। অভিজিতের দাবি, ‘‘মেসে গিয়ে দুপুরের খাওয়াদাওয়া করি। কিন্তু সন্ধ্যা থেকেই ওই তিন জন আমার উপরে অত্যাচার শুরু করে। আমাকে মেসের মধ্যেই বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। শনিবার মেসের পড়শিরা কোনও ভাবে টের পেয়ে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।’’
প্রশ্ন উঠছে, আচমকা কেন অভিজিৎকে মারধর করলেন জুনিয়ররা? এখনও পর্যন্ত পুলিশকে তার সদুত্তর দিতে পারেননি নিগৃহীত ছাত্র। তবে, অভিজিতের উপরে অত্যাচারের ধরন দেখে পুলিশের অনুমান, পুরনো আক্রোশ থেকেই হয়তো এই ঘটনা। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘হতে পারে সিনিয়রকে নাগালে পেয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে জুনিয়র ছাত্রেরা।’’ তবে এখনই নিশ্চিৎ করে কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।
অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে এক অভিযুক্তের আইনজীবী চঞ্চল সেন বলেন, ‘‘আমার মক্কেল নির্দোষ। অভিযোগকারী মেসে কিছু চুরি করতে গিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল।’’ অভিজিৎ অবশ্য সে অভিযোগ মানেননি।