Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাইমাস্ট কার, খোঁজ এ বার

যাত্রীদের আক্ষেপ, গোড়া থেকেই এই বাসস্ট্যান্ডের ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়।

ঢেকে: তালাবন্ধ। দেওয়ালে লেখা ‘শৌচাগার’ কথাটি সাদা রং দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব চিত্র

ঢেকে: তালাবন্ধ। দেওয়ালে লেখা ‘শৌচাগার’ কথাটি সাদা রং দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব চিত্র

সুশীল মাহালি
খাতড়া শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪২
Share: Save:

এক বছরেও শৌচাগারের তালা খুলল না। ‘হাইমাস্ট’ কে বসালেন, এক বছরেও তা জানতে না পারায় আলো জ্বালানোর ব্যবস্থাও করা গেল না। সে কারণেই বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাতড়ার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু বাসস্ট্যান্ড চালু হওয়ার তিন বছর পরেও যাত্রীদের ভোগান্তি কাটেনি। উল্টে, বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ায় ক্ষোভ বেড়েছে যাত্রীদের। এ নিয়ে প্রশাসন ও শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।

যাত্রীদের আক্ষেপ, গোড়া থেকেই এই বাসস্ট্যান্ডের ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়। ২০০৪ সালে তৎকালীন পরিবহ মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী জীবন বিমা অফিসের পিছনে বাসস্ট্যান্ডের শিলান্যাস করেন। কাজ কিছুটা এগিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যে পালাবদলের পরে, ফের বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে স্ট্যান্ড চালু হয় ২০১৭ সালে।

কিন্তু নানা সমস্যা রয়ে গিয়েছে। যাত্রী প্রতীক্ষালয় প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। স্ট্যান্ডে আলো নেই। অথচ, সকাল-সন্ধ্যা এই বাসস্ট্যান্ডে থেকে প্রায় ১৪০টি বেসরকারি ও কয়েকটি সরকারি বাস চলাচল করে। মহিলাদের দাবি, বিকেল গড়ালেই বাসস্ট্যান্ডে নামতে তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। অনেকের অভিযোগ, আলোহীন স্ট্যান্ড নানা রকম ‘অসামাজিক’ কাজকর্ম চলে।

বাসস্ট্যান্ড কমিটির সম্পাদক নিতাই দত্তের দাবি, ‘‘সমস্যার কথা বার বার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু সমাধান হয়নি। বছর দু’য়েক আগে বসানো হাইমাস্ট পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। অথচ, বাতিটি চালু করলে আমরা স্ট্যান্ড কমিটি থেকে বিদ্যুতের বিল মেটানোর দায়িত্ব নিতে রাজি আছি। কিন্তু প্রশাসন চালু করলে তো!’’

মহকুমাশাসক (খাতড়া) রাজু মিশ্র গত বছর জানিয়েছিলেন, বাতিস্তম্ভটি কোন তহবিল থেকে তৈরি করা হয়েছে, তিনি জানেন না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। বছর ঘুরেও প্রশাসন বাতিস্তম্ভ কে, কোন তহবিল থেকে বসিয়েছেন তা জানতে পারেনি। মহকুমাশাসক এখনও বলছেন, ‘‘হাইমাস্ট কোন তহবিল থেকে তৈরি করা হয়েছে জানি না। কারা করেছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’

বাসস্ট্যান্ডে একটি শৌচালয় থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। তাই আরও একটি শৌচালয় তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে তা তালা বন্ধ। দেওয়ালে লেখা ‘শৌচাগার’ সাদা কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। আর একটি জায়গায় শৌচাগার লেখার উপরে ছোট ফ্লেক্সে সাঁটিয়ে লেখা— ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না’।

ফলে, যাত্রীদের ভোগান্তি চলছেই। সুধীর মাহাতো নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে বাঁকুড়া থেকে ফিরে স্ট্যান্ডের শৌচালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়!’’ নিতাইবাবুর দাবি, তাঁরা ওই শৌচালয়টি চালানোর দায়িত্ব নিতে চেয়ে ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন। সাড়া মেলেনি। এসডিও-র আশ্বাস, শৌচালয়টি চালুর জন্য বিডিওকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।

রানিবাঁধ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডির বাড়ি বাসস্ট্যান্ডের কাছেই। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর মহকুমাশাসকের সঙ্গে বাসস্ট্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম।’’ তার পরেও সমস্যাগুলি মেটেনি কেন? সদুত্তর নেই।

বাঁকুড়ার সাংসদ বিজেপির সুভাষ সরকার দাবি করেন, ‘‘এখানে ভোটের রাজনীতি নিয়ে তৃণমূলের নেতা, জনপ্রতিনিধিরা ব্যস্ত। কাজেই মানুষের সমস্যায় তাঁরা নজর দেবেন কখন?’’ আবার খাতড়ার বাসিন্দা সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পনাবিহীন ভাবে কাজ হচ্ছে বলে কেউ কিছুই জানতে পারছেন না। খাতড়ার উন্নয়ন করার অনেক সুযোগ থাকলেও তা ঠিক ভাবে করা হচ্ছে না।’’ খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর জয়ন্ত মিত্র বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘উন্নয়ন হচ্ছেই। বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছে। সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Stand Khatra High Mast Lamp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE