এই পোস্টার ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।
বাঁকুড়ার শালতোড়া কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন বাউরির বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ এক গুচ্ছ অভিযোগ তুলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে পোস্টার পড়ল এলাকায়। ‘শালতোড়া বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী ও সমর্থক’-এরা ওই পোস্টার দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গঙ্গাজলঘাটি, দুর্লভপুর, লাগাপাড়া, আমডাঙা, হাঁসপাহাড়ি-সহ আরও কিছু জায়গায় ওই পোস্টার দেখা যায়। সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে স্বপনবাবু দাবি করেন, ‘‘এ কাজে দলের কেউ না বিরোধীরা জড়িত তা জানি না। রাতের অন্ধকারে চোরের মতো পোস্টার দেওয়া হয়েছে।’’ তবে তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
২০০১ সাল থেকে চার বার তৃণমূলের টিকিটে বিধানসভায় লড়েছেন স্বপনবাবু। শেষ দু’বার জিতে বিধায়ক হন। গত বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য দল তাঁকে প্রার্থী করেনি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, স্বপনবাবুকে নিয়ে এলাকায় দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় বছরখানেক আগে। তা নিয়ে শালতোড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠিকোন্দল’ প্রকাশ্যে আসে।
দলের একটি সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বর মাসে শালতোড়ার ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরানো হয় স্বপনবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কালীপদ রায়কে। তাঁর জায়গায় ব্লক সভাপতি করা হয় সন্তোষ মণ্ডলকে। সন্তোষবাবুকে দল এ বার বিধানসভা ভোটে শালতোড়া কেন্দ্রের প্রার্থী করে। তিনি বিজেপির চন্দনা বাউরির কাছে পরাজিত হন। এ দিন পোস্টারে সন্তোষ মণ্ডলের হারের জন্য স্বপন বাউরিকেই দায়ী করে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তার বিচারও চাওয়া হয়েছে।
গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের নিমাই মাজি দাবি করেন, ‘‘কারা ওই পোস্টার দিয়েছে জানি না। তবে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে স্বপনবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। ভোটের আগে স্বপনবাবুর একটি অডিয়ো কলের রেকর্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার পত্রিকা) ছড়িয়ে পড়ে। তাতে শোনা যাচ্ছে, স্বপনবাবু বিজেপির হয়ে ভোট
করাতে বলছেন।’’
পোস্টারে আরও অভিযোগ তোলা হয়েছে— স্বপনবাবু এলাকার যুবকদের কাছে চাকরির নামে টাকা নিয়েছেন। তাঁর সম্পত্তির তদন্তও দাবি করা হয়েছে। যদিও স্বপনবাবুর দাবি, ‘‘সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা সরাসরি জানানোর পদ্ধতি রয়েছে। প্রয়োজনে, দল আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক। আমি দলের সৃষ্টির সময় থেকে তৃণমূলে রয়েছি। কোনও দিন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’’
তৃণমূলের শালতোড়া ব্লক সভাপতি তথা গত বিধানসভা ভোটের প্রার্থী সন্তোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। তাই মন্তব্য করব না। ভোটের সময় কী হয়েছে তা নিয়ে দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ এ নিয়ে সমালোচনার সুর চড়িয়েছে বিজেপি। শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউড়ির কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল সরকারের কিছু জনপ্রতিনিধি ও নেতারা সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি করেছেন। এই পোস্টারে সেটা আরও এক বার প্রমাণিত হল।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘পোস্টার তৃণমূলই দিয়েছে। আমাদের কেউ
যুক্ত নয়।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরার অবশ্য দাবি, ‘‘শালতোড়ায় পোস্টার নিয়ে কী হয়েছে খোঁজ নেব। তবে আমাদের দল কোনও রকম দুর্নীতিতে জড়িত নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy