আলু কিনেছিলেন বস্তা প্রতি ৪৫০ টাকারও বেশি দাম দিয়ে। হিমঘরে জমিয়ে রাখার পরে সেই আলুর দর এখন নেমে গিয়েছে ১৫০ টাকা বস্তায়। তার উপরে রয়েছে হিমঘরের ভাড়ার খরচ, রয়েছে জমি থেকে হিমঘরে আলু বয়ে নিয়ে যাওয়া খরচও। এই অবস্থায় বাঁকুড়া জেলার হিমঘরে মজুত থাকা ২১ লক্ষ বস্তা আলু নিয়ে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না আলু ব্যবসায়ীরা। তাঁদের তুলনায় পরিমাণে অল্প হলেও জমিয়ে রাখা আলুর দর পড়ে যাওয়ায় চাষের খরচ উঠবে কী করে, সেই দুর্ভাবনায় রয়েছেন জেলার চাষিদের একাংশও।
এই জেলার ৪৪টি হিমঘরের বেশির ভাগই বিষ্ণুপুর মহকুমার কোতুলপুর, জয়পুর, সোনামুখী, ইন্দাস, পাত্রসায়র ও বিষ্ণুপুর ব্লকে। গত বছর জ্যোতি আলুর ফলন ভাল হওয়ায় অনেকে যেমন মাঠ থেকেই সরাসরি কম করে ৯ টাকা কেজি দরে অর্থাৎ বস্তা পিছু ৪৫০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন, তেমনই পরে দাম ওঠার আশায় অনেক চাষিই হিমঘরে আলু মজুত করেছিলেন। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে দাম নামতে শুরু করায় অনেকেই হিমঘর থেকে আলু বার করে বিক্রি করে দেন। তারপরেও প্রচুর আলু জমে রয়েছে হিমঘরগুলিতে।
সাধারণত, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদ থাকে। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ নিয়োগী জানান, এ বার তাঁদের অনুরোধে রাজ্য সরকার আরও এক মাস হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদ বাড়ান। কিন্তু, ১৬ ডিসেম্বর থেকে কুইন্টাল পিছু ১২ টাকা করে অতিরিক্ত ভাড়া ধায্য হয়েছে।
তাঁর দাবি, গত মরসুমে বাঁকুড়া জেলার ৪৪টি হিমঘরে ১ কোটি ৪৭ লক্ষ ২৬ হাজার বস্তা আলু মজুত রাখা হয়েছিল। ৩০ নভেম্বরের আগে ১ কোটি ১৪ লক্ষ ৯৭ হাজার বস্তা আলু বেরিয়ে গিয়েছে হিমঘর থেকে। তারপরেও হিমঘরে অনেক আলু মজুত রয়েছে। এই অবস্থায় মজুত রাখা আলুর ভাড়া বাবদ বস্তা পিছু আরও ৬ টাকা করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গুনতে হবে।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, হিমঘর থেকে আলু বার করতে গেলে এখন সব মিলিয়ে বস্তাপিছু খরচ ৮৫ টাকা। বাজারে সেই আলুর দাম যাচ্ছে বস্তাপিছু কমবেশি ১৫০ টাকা। আর হিমধর থেকে আলু বাছাই করতে গেলে খরচ হচ্ছে ১৩০ টাকা। সেই আলুর বাজারে দর বস্তাপিছু কমবেশি ২১০ টাকা। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, ‘‘লোকসানের ধাক্কায় এ বছর আর কেউ আলু কেনার সাহস দেখাবেন না।’’
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির বিষ্ণুপুর শাখার সভাপতি ভৈরব পাল থেকে কর্মকর্তা রাজীব দে, সত্য দে, দিলীপ লোহারদের বক্তব্য, ‘‘অত আলু বার করে কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।’’
বিষ্ণুপুরের ভালুখা গ্রামের কৃষক হালবু মণ্ডল, রবিয়াল খানদের দাবি, হিমঘরে তাঁদেরও ১০০ বস্তার বেশি করে আলু মজুত রয়েছে। তাঁরা বলেন, ‘‘এখন হাত কামড়ানো ছাড়া উপায় নেই। এ বার তাই আলু চাষ কমিয়ে দিয়েছি।’’ পাত্রসায়রের কুশদ্বীপের মধুসূদন দে, প্রশান্ত পাল, নেপাল কোলের আবশ্য দাম পড়ার আঁচ পেয়ে আগেভাগেই আলু বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তাঁরাও জানান, এ বার আলুর চাষ কমিয়ে বোরো ধানের প্রস্ততি নিচ্ছেন।
কেন এই পরিস্থিতি?
আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, এক সময়ে এ রাজ্য থেকে ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীশগঢ়, মধ্যপ্রদেশে আলু যেত। কিন্তু, মাঝখানে এ রাজ্যে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সেই সুযোগে আলু উৎপাদকারী রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব বাজার ধরে নেয়। তারউপরে গত বছরে ওই দুই রাজ্যে আলুর ফলন মন্দ হয়েছে বলে খবর এসেছিল ব্যবসায়ীদের কাছে। সে কারণে তাঁরা ভিন্ রাজ্যে আলুর দর ওঠার অপেঙায় হিমধরে মজুত করে রেখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথবাবুর বলেন, ‘‘সব মিলিয়েই বড় জোর ধাক্কা খেলেন ব্যবসায়ীরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy