E-Paper

পালিয়ে বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে কিশোরীদের

বলরামপুর থানা এলাকার ১৬ বছরের এক কিশোরী নিখোঁজ হয়েছিস। পরে মেয়েটি নিজেই বাড়িতে ফোন করে জানায়, সে ভালবেসে বিয়ে করে ভিন্ রাজ্যে সুখে আছে।

সমীরণ পাণ্ডে

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৫ ০৭:১৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এক সময়ে বাড়ি থেকে দেখাশোনা করে কমবয়সি মেয়েদের বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেওয়া হত। সেই প্রবণতা কিছুটা কমলেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে নাবালিকাদের নিজেদের বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি। পুরুলিয়া জেলায় গত পাঁচ বছরে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে।

ঘটনা ১: কয়েক বছর আগে মানবাজার থানার ১৭ বছরের এক কিশোরীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল স্থানীয় এক যুবক। ট্রেনে তাদের মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে বেহুঁশ করে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরপ্রদেশে। যুবককে রেললাইনে ফেলে কিশোরীকে শারীরিক নিগ্রহ করে বিক্রি করে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকায়। মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সাত-আট মাস পরে কিশোরীকে উদ্ধার করে।

ঘটনা ২: বলরামপুর থানা এলাকার ১৬ বছরের এক কিশোরী নিখোঁজ হয়েছিস। পরে মেয়েটি নিজেই বাড়িতে ফোন করে জানায়, সে ভালবেসে বিয়ে করে ভিন্ রাজ্যে সুখে আছে। পরিবার আর থানা-পুলিশ করেনি।

ঘটনা ৩: পুরুলিয়া মফসসল থানা এলাকার ১৭ বছরের এক কিশোরী গত বছর এক যুবকের সঙ্গে বাড়ি ছাড়ে। পরিবারের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আনে। মেয়েটি বাড়ি ফেরে। তবে কয়েক মাস পরে ফের সেই ছেলের সঙ্গে পালায় মেয়েটি। বর্তমানে সে হোমে রয়েছে।

পুলিশ জানাচ্ছে, দিন দিন বেড়েই চলেছে নাবালিকা নিখোঁজের ঘটনা। তাদের বেশির ভাগই বিয়ে করে প্রেমিকের সঙ্গে থাকতে বাড়ি ছাড়ছে। তবে নাবালিকা নিখোঁজের ঘটনা বলে আইন অনুযায়ী অপহরণের মামলা রুজু হচ্ছে। অভিযোগ পেলে পুলিশ নিখোঁজদের অধিকাংশকেই উদ্ধার করছে। গ্রেফতারও করা হচ্ছে অভিযুক্তকে। কিন্তু লোকলজ্জায় অভিভাবকদের একাংশ থানা-পুলিশ করতে চান না।

জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘নাবালিকা অপহরণের প্রায় সব ক’টি অভিযোগের ক্ষেত্রেই অপহৃতাদের উদ্ধার করা হয়েছে।’’

তবে এই পলায়ন প্রবৃত্তির নেপথ্যে যে শুধু মাত্র মোবাইল বা সমাজমাধ্যম দায়ী, মানতে নারাজ পুরুলিয়া জেলা শিশু সুরক্ষা সমিতির চেয়ারপার্সন দীপঙ্কর সরকার। তিনি জানান, প্রচুর নাবালিকা অপহরণের ঘটনা সামনে আসছে। অনেক সময় অভিযোগও হচ্ছে না। কমবয়সি মেয়েরা বেশি বয়সের লোকের সঙ্গেও পালাচ্ছে। আসলে তাদের ভাল-মন্দ বিচারের বয়স হয়নি। তাঁর মতে, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতে বাবা-মা মেয়েদের সময় দিচ্ছেন না। ভালবেসে দু’টোকথা বলছেন না। সেই অভাব যখন বাইরের কেউ পুষিয়ে দিচ্ছে, তখন মেয়েটি তাকেই সব চেয়ে আপন ভাবছে। অনেক সময় নাবালিকারা গর্ভবতী হয়ে পড়ছে। কমবয়সি মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিহার, মধ্যপ্রদেশে।’’

তিনি জানান, যে সব অপহরণের অভিযোগ নথিবদ্ধ হচ্ছে না, সেই সমস্ত মেয়েদের কেউ কেউ শ্রমিক হয়ে যাচ্ছেন। পাচারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

তিনি এ-ও মানছেন, ‘‘সমাজ মাধ্যমে ভুয়ো ‘প্রোফাইল’-এর ফাঁদেও অনেক মেয়ে পড়ছে। কিশোরীরা সব ভুলে বাইরের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে খোঁজ খবর না নিয়েই ফাঁদে পা দিচ্ছে।’’

পুলিশ প্রশাসনের দাবি, স্কুলে স্কুলে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। তবে অভিভাবকদের দাবি, এই ধরনের শিবির আরও ঘন ঘন করা দরকার। কন্যাশ্রী ক্লাবকেও সক্রিয় করা প্রয়োজন।

(চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Marriage

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy