মণ্ডপে মিশন নির্মল বাংলার মডেল। নিজস্ব চিত্র।
সাফল্য এসেছে দেখে দুর্গাপুজোর মতোই অন্য পুজোতেও ‘মিশন নির্মল বীরভূম’ প্রকল্পের কর্মসূচি রূপায়নের সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। বিশেষত যে সব এলাকায় লক্ষ্মী, কালী-সহ অন্য পুজোকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন ধরে ভালরকম জন সমাগম হয়, সেই সব এলাকাকে ওই প্রকল্পের আওতাভুক্ত করার পরিকল্পনা। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর কথায়, ‘‘ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।’’
এ বার শারদোৎসবে মিশন নির্মল বীরভূম প্রকল্পে প্রতিটি পুজো মণ্ডপে শৌচালয়ের ব্যবহার করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, নিরাপদে গাড়ি চালানো, পোস্ত এবং গাঁজা চাষ থেকে বিরত থাকা-সহ একাধিক জন সচেতনতা মূলক প্রচারের ব্যবস্থা ছিল। প্রতিটি মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল ফেক্স, ফেস্টুন, সিডি। এ ছাড়াও স্বেচ্ছা সেবকদের টুপি, গেঞ্জি, জলের মগ, ড্রাম এমনকি হ্যান্ড-ওয়াসও জোগান দেওয়া হয়। ছাপানো শপথবাক্যও পাঠ করানো হয়। প্রতি দিন পুষ্পাঞ্জলির পরে অভয়াশক্তির কাছে সেই শপথ বাক্য পাঠের ব্যবস্থা করা হয়। খোদ রাষ্ট্রপতিও সেই শপথ বাক্য পাঠ করেন।
বহুমুখী কর্মসূচির জেরে বেশ কিছু জায়গায় ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে। ১০ বছর ধরে সর্বজনীন দুর্গোপুজো হচ্ছে ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার মোড়ে। অন্যবার পুজোর কয়েক দিন মণ্ডপের সামনের এলাকাটাই পরিস্কার করাতেন উদ্যোক্তারা। কাছাকাছি অন্য জায়গা নোংরা থাকত। কারণ, মণ্ডপের কাছে পুজো উপলক্ষে মেলা বসে। থাকে শতাধিক দোকানপাটও। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা জিনিসপত্রে পথ চলাই দায় হত। এ বার সেই চিত্রটা পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। পুজোর দু’দিন আগে থেকেই মণ্ডপ-সহ পুরো বাজার এলাকা পরিস্কার করার জন্যে এক জন লোক নিয়োগ করেন পুজো কমিটির সদস্যেরা। তাতেই অনেক পরিস্কার ছিল এলাকা।
এ বার পুজোর শেষেও সেই চেহারাটা সারা বছর ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুজো কমিটি। ওই কমিটির অধিকাংশই আবার মোড় ব্যবসায়ী সমিতিরও সদস্য। সমিতির সম্পাদক সুভাষচন্দ্র ঘোষ জানান, বেশ কিছু ব্যবসায়ী ঝাঁট দিয়ে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক-সহ অন্য সামগ্রী দোকানের পাশে জড়ো করে রাখতেন। অন্যত্র ফেলার আগে ওই সব নোংরা হাওয়ায় উড়ে এলাকার দূষণ বাড়াত। পুজো কয়েক দিন তা দূর করা গেলেও কিছু পরেই আগের অবস্থায় ফিরে যেত। সুভাষচন্দ্র বলেন, ‘‘সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা ঠিক করেছি, সারা বছরই একই রকম পরিস্কার রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্যে দোকানপিছু সাফাই কর্মীকে প্রতিদিন ২ টাকা করে দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
একই রকমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে লাভপুরের রক্ষাকালী তলা পুজো কমিটিতেও। কমিটির সদস্যেরা ঠিক করেছেন, পাড়ায় দুটি বড় ডাস্টবিন রাখা হবে। তার মধ্যে একটিতে ফেলা হবে পচনশীল জঞ্জাল। অন্যটিতে অ-পচনশীল। একই ভাবে পাড়ার প্রতিটি পরিবারেও থাকবে ছোট দুটি ডাস্টবিন। পুজো কমিটির দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায়, সজল সরকারেরা বলেন, ‘‘এখন থেকে ঠিক হয়েছে দিনের শেষে বাড়ির ডাস্টবিনের নোংরা আর্বজনা পাড়ার বড় ডাস্টবিনে ফেলা হবে। মাসের শেষে পচনশীল আবর্জনা দিয়ে জৈব সার এবং বাকি আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা হবে। এর দেখভাল করবে বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী।’’
এমনই বিচ্ছিন্ন কিছু পদক্ষেপে সাফল্য আসার সম্ভাবনা দেখে অন্য কিছু পুজোতে একই ধরণের পদক্ষেপ করতে চাইছে প্রশাসন। এর মধ্যে ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশার লক্ষীপুজো, বীরচন্দ্রপুরের কালীপুজো, লাভপুরের বাকুল, দোনাইপুর, ইন্দাসের কালীপুজো, সাঁইথিয়ার নিরিশা, দেরিয়াপুরের কালীপুজো অন্যতম। প্রতিটি পুজোকে কেন্দ্রে করেই মেলা বসে। তা জনসমাগমে পাল্লা দেয় দুর্গাপুজোর ভিড়কেও। সেখানে এই কর্মসূচি সাফল্য পেলে জেলা প্রশাসনের মুকুট পালক জুড়বে বলেই মত অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy