E-Paper

শৌচালয়ের ভার কেউ নেয় না, ভোগান্তি পথে

বাঁকুড়া পুরসভার দাবি, শহর নির্মল করতে প্রায় ৭০টি সাধারণের শৌচালয় তারা তৈরি করেছে। যদি ভুক্তভোগীদের দাবি অন্য।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এক সময়ে শহরে শৌচালয় কম থাকায় সমস্যায় পড়তেন নানা কাজে আসা লোকজন। ইদানীং শহরে সাধারণের ব্যবহারের জন্য শৌচালয়ের (কমিউনিটি টয়লেট) সংখ্যা তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু তার অনেকগুলিই নানা কারণে বন্ধ থাকায় সমস্যা পুরোপুরি ঘোচেনি। এর ফলে বিশেষত বাইরে থেকে আসা মহিলারা সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের একাংশ মহিলা হলেও তাঁরা মহিলাদের এই সমস্যার বিষয়টি নিয়ে আদৌ ভাবিত নয়।

তা মানতে নারাজ বাঁকুড়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের অলোকা সেন মজুমদার। তাঁর দাবি, ‘‘বাঁকুড়ায় পুরসভার তৈরি করা অধিকাংশ সাধারণের শৌচালয় চালু অবস্থায় রয়েছে। তবে কয়েকটি শৌচালয় দেখাশোনা করার লোকের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। কেউ আগ্রহ দেখালেই সেগুলি চালু করা হবে।’’

বাঁকুড়া পুরসভার দাবি, শহর নির্মল করতে প্রায় ৭০টি সাধারণের শৌচালয় তারা তৈরি করেছে। যদি ভুক্তভোগীদের দাবি অন্য। তাঁদের দাবি, ভৈরবস্থান বাসস্টপ, কলেজ রোড, গন্ধেশ্বরী সেতু-সহ বিভিন্ন এলাকায় পুরসভার তৈরি করা শৌচালয়গুলি উদ্বোধন হলেও তালাবন্ধ রয়েছে। বাঁকুড়া পুরসভার বস্তিবাসীদের জন্য তৈরি করা সাধারণের শৌচালয়ও পরিকাঠামোগত সমস্যায় বন্ধ।

বেলিয়াতোড়ের বাসিন্দা পার্থ ভৌমিক বলেন, “বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা, চাঁদমারিডাঙা, নতুনচটি এলাকায় রাস্তার পাশে একটিও শৌচালয় নেই। কলেজ রোডে পুরসভার তৈরি করা শৌচালয় বছরের পর বছর ধরে তালাবন্ধ।’’ বাঁকুড়া শহর লাগোয়া আঁচুড়ির বাসিন্দা বাপি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে গড়া পুরসভার শৌচালয়গুলি ঝোপঝাড়ে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এটা সরকারি অর্থের অপচয়।”

পুরুলিয়া শহরে সাধারণের শৌচালয় রয়েছে প্রায় ৩০টি। যার মধ্যে ১২টি টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করা যায়। সেগুলি বাদে বাকিগুলি জলের সমস্যা ও নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় ব্যবহারের উপযোগী নয় বলে অভিযোগ। পুরসভার দাবি, ৩০টির মধ্যে তিনটি শৌচালয় জলের সমস্যায় বন্ধ রয়েছে। যদিও ভুক্তভোগীদের দাবি, সংখ্যাটা তারও বেশি।

রঘুনাথপুর শহরে বাসস্ট্যান্ড, আদালত, থানা ও পুরসভা এলাকায় চারটি সাধারণের শৌচালয় থাকলেও তিনটিই ব্যবহারের অবস্থায় নেই বলে অভিযোগ। শুধু আদালতের পাশের শৌচালয় ব্যবহারের জন্য টাকা নেয় বলে সেটি তুলনায় ভাল অবস্থায় রয়েছে। ব্লক অফিসের কাছে সাধারণের শৌচালয় তৈরি হলেও চালু হয়নি। বার্নপুরের বাসিন্দা সুমিতা দাস বলেন, ‘‘শৌচালয় তৈরি করা করেও চালু করা হচ্ছে না কেন? মহিলাদের খুবই সমস্যা হচ্ছে।’’

ঝালদা শহরেও জনসাধারণের জন্য পর্যাপ্ত শৌচালয় নেই বলে অভিযোগ। বাসস্ট্যান্ডের কাছে ও বিরসা মোড়ে পুরসভা ও পূর্ত দফতরের দু’টি শৌচালয় রয়েছে। তবে নামোপাড়া, বাঁধাঘাট, স্কুল মোড় প্রভৃতি জনবহুল এলাকায় শৌচালয় নেই। পুরসভার দাবি, এ জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরুলিয়া জেলায় মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে ১৩১টি সাধারণের শৌচালয় গড়া হলেও বেশির ভাগই চালু করা যায়নি। পূর্ত দফতর ও জেলা পরিষদ বহু সাধারণের শৌচালয় তৈরি করেছে। তারও অনেকগুলি চালু হয়নি।

অভিযোগ ওই শৌচাগারগুলি প্রশাসন তৈরি করলেও সেগুলি চালানোর পরিকল্পনা করেনি বলেই এই হাল। কিছু পঞ্চায়েত সমিতি শৌচাগারগুলি স্থানীয়দের মাধ্যমে চালানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি। কারণ শৌচাগার চালু রাখতে গেলে সাফাই ও দেখভালের জন্য কর্মী নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু সেই কর্মীর মজুরির টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিশ্চিত নয়।

নিতুড়িয়ার ব্লক সদর গোবাগে সাধারণের শৌচালয় তৈরি করেও একই কারণে তা চালু করতে পারছেন না বলে স্বীকার করছেন নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব। তিনি বলেন, ‘‘গোবাগে সাধারণের শৌচালয় চালু করার জন্য বহুবার উদ্যোগী হয়েছি। কিন্তু কেউই দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। এমনকি স্থানীয় পঞ্চায়েতও দায়িত্ব নিতে চাইছে না।’’

তাহলে পথে বেরোনো মানুষজনের ভোগান্তি কি চলতেই থাকবে? কারও কাছেই সদুত্তর মেলেনি।

(শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

purulia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy