Advertisement
E-Paper

টিকিট না পেলে মঞ্চ তৈরির ভাবনাও

পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু, প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা ইতিমধ্যেই চলছে শাসকদলের অন্দরে। পুরুলিয়া পুরসভাতেও ছবিটা আলাদা নয়। শহরের কোন ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে চর্চা এখন তুঙ্গে। পুরনোদের উপরে কোপ পড়ছে, না দল ফের তাঁদের টিকিট দিচ্ছে, নাকি বিভিন্ন মহলের চাপে বা লবির জোরে কেউ কেউ অযোগ্য হয়েও থেকে যাচ্ছেন এমন আলোচনা এখন শুধু দলেই নয়, শহরের বাসিন্দাদেরও চর্চার বিষয়।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৩১
পুরুলিয়া শহরকে সাজাতে কয়েক বছর আগে ফরেস্ট মোড়ে এই বাহারি আলোর ফোয়ারা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস চলেই বন্ধ হয়ে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, উদাসীন পুরসভা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

পুরুলিয়া শহরকে সাজাতে কয়েক বছর আগে ফরেস্ট মোড়ে এই বাহারি আলোর ফোয়ারা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস চলেই বন্ধ হয়ে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, উদাসীন পুরসভা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু, প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা ইতিমধ্যেই চলছে শাসকদলের অন্দরে।

পুরুলিয়া পুরসভাতেও ছবিটা আলাদা নয়। শহরের কোন ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে চর্চা এখন তুঙ্গে। পুরনোদের উপরে কোপ পড়ছে, না দল ফের তাঁদের টিকিট দিচ্ছে, নাকি বিভিন্ন মহলের চাপে বা লবির জোরে কেউ কেউ অযোগ্য হয়েও থেকে যাচ্ছেন এমন আলোচনা এখন শুধু দলেই নয়, শহরের বাসিন্দাদেরও চর্চার বিষয়। বর্তমান পুরবোর্ডের কাজের মান নিয়েও কাটাছেঁড়া চলছে বিভিন্ন মহলে। এ বার টিকিট না পেলে পৃথক মঞ্চ গড়ে ভোটে লড়ার ভাবনাও রয়েছে তৃণমূলের একাংশে।

টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতৃত্ব নানা বিষয় মাথায় রাখছেন। বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় গত লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া পুর-এলাকায় দলের ভোট কমে যাওয়ার অঙ্কের হিসেবও রয়েছে নেতৃত্বের সামনে। ফের পুরবোর্ডের দখল পেতে দল পুরুলিয়ার বিধায়ক কে পি সিংহদেওকে পুরভোটে দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল, এমন একটা জল্পনা রয়েছে দলের অন্দরে। আবার এই জল্পনাও চলছে যে, বর্তমান কাউন্সিলরদের অনেকেই এ বার বাদ যেতে পারেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য বলেছেন, “নতুন পুরনো মিলিয়েই প্রার্থী করা হবে। শীঘ্রই প্রার্থী তালিকা ঘোষিত হবে।” তবে কে থাকছেন আর কে থাকছেন না, তা স্পষ্ট নয়। বস্তুত, টিকিট নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে দলের নিচুতলাতেও। জেলার এক প্রবীণ তৃণমূল নেতাই বলছেন, “কী যে হচ্ছে, বুঝতেই পারছি না! এখনও প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে কোনও বৈঠক হয়নি।”

প্রার্থী বাছাইয়ের প্রশ্নে দল যদি নতুন মুখের উপরে ভরসা করে, সেক্ষত্রে পুরনোদের বেশ কয়েক জন বাদ পড়তে পারেন। এই বিষয়টি মাথায় রেখে পুরসভায় তৃণমূলের দলনেতা বৈদ্যনাথ মণ্ডলের নেতৃত্বে ক’দিন আগে শহরের একটি হোটেলে একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে দলের প্রায় সব কাউন্সিলরই হাজির ছিলেন। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত ওয়ার্ড এখন তৃণমূলের হাতের বাইরে রয়েছে, সেই ওয়ার্ডের কর্মীদেরও ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে সকলে ঠিক করেন, যে সব কাউন্সিলর গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, তাঁদের ফের টিকিট দিতে হবে। বৈঠকের পরে তাঁদের কয়েক জন জেলা তৃণমূল কাযার্লয়ে গিয়ে শান্তিরামবাবুর সঙ্গে দেখা করে নিজেদের বক্তব্যও জানিয়ে দিয়ে এসেছেন। বারবার চেষ্টা করেও বৈদ্যনাথবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, বৈঠকে থাকা দুই তৃণমূল কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায় ও ময়ূরী নন্দী বলেন, “আমরা জেলা সভাপতিকে বলেছি, গত পুরভোটে যাঁরা জয়ী হয়েছিলেন, তাঁদেরই প্রার্থী করা হোক। একই সঙ্গে আমরা অন্য ওয়ার্ডগুলিতে কাদের প্রার্থী করলে ভাল হয়, সেটাও দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে এসেছি।” প্রদীপবাবুর দাবি, “নিচুতলার সংগঠনটা আমরা দেখি। ফলে আমরা জানি, সংশ্লিষ্ট এলাকায় কার সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ রয়েছে।” দল সূত্রের খবর, সকলে বৈঠক করে ফের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়ে এলেও জেলা সভাপতির কাছে থেকে টিকিট পাওয়া নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা পাননি ওই কাউন্সিলরেরা। শান্তিরামবাবু জানিয়েছেন, প্রার্থী তালিকা অনুমোদন করবেন রাজ্য নেতৃত্ব। তিনি সকলের নামই পাঠাবেন।

আর এখানেই আশঙ্কা সকলের। প্রদেশ থেকে কোন ওয়ার্ডে কার নাম অনুমোদিত হয়ে আসবে, তা যে কেউ-ই জানে না!

বাদ পড়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই আরও কিছু তৃণমূল কাউন্সিলর গত শনিবার নিজেদের মধ্যে গোপন বৈঠক সেরেছেন। তাতে শহরের এক কংগ্রেস নেতাও হাজির ছিলেন বলে সূত্রের খবর। বৈঠকের লক্ষ্য, টিকিট না পেলে একটি মঞ্চ গড়ে তোলা। পুরসভার পরিচিত কিছু মুখকে সেই মঞ্চে দেখা যেতে পারে। বিদায়ী পুরপ্রধান, তৃণমূলের তারকেশ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “একটা বৈঠক হয়েছিল আমাদের কাউন্সিলরদের। আর কোনও বৈঠকের কথা জানি না।” উপপুরপ্রধান সামিমদাদ খানও এমন বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন। তৃণমূলের আর এক কাউন্সিলর সুনয় কবিরাজ কিন্তু বলেছেন, “ওয়ার্ড কমিটি যাঁকে চাইছে, দল যদি তাঁকে প্রার্থী না করে, তখন অন্য চিন্তা-ভাবনা করতেই হবে। আমরা আমাদের ওয়ার্ডে (৩ নম্বর) বহিরাগত প্রার্থী মানব না!” ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। স্থানীয় সূত্রের খবর, এই ওয়ার্ডে বিধায়কের অনুগামী কেউ প্রার্থী হতে পারেন। তেমন কেউ প্রার্থী হলে আপনারা কি পৃথক মঞ্চ গড়বেন? সুনয়বাবু বলেন, “আগে তো প্রার্থী তালিকা বেরোক। তার পর অবস্থান বলব।”

কংগ্রেসের এক নেতার সঙ্গে কয়েক জন তৃণমূল কাউন্সিলরের বৈঠকের কথা জানেন জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতো। তিনি বলেন, “বৈঠকের কথা শুনেছি। তবে, সেখানে কী আলোচনা হয়েছে জানি না।” কেপি সিংহদেও বলেন, “আমিও ওই বৈঠকের কথা জেনেছি। যদি পৃথক মঞ্চ গড়ে তোলার জন্য বৈঠক হয়, তবে তা দলের পক্ষে নয় এটুকু বলতে পারি।” জেলা তৃণমূল সভাপতির মন্তব্য, “নির্দল নির্দলই। মঞ্চ গড়লেও তা হবে নির্দল।” বিধায়ককে কি পুরপ্রধান হিসেবে সামনে রেখে লড়তে চলেছে দল? শান্তিরামবাবু বলেন, “উনি দাঁড়াতেই পারেন। শহরের পরিচিত মুখ তিনি। তবে, আগে প্রার্থী তালিকা বেরোক।” আর কেপি সিংহদেও বলছেন, “দল যদি আমাকে পুরসভার দায়িত্ব দেয়, আমি নিতে রাজি।”

prashanta pal purulia secret meeting tmc councillors municipal poll
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy